আন্তর্জাতিক ডেস্ক: শনাক্ত হওয়ার চার সপ্তাহেরও কম সময়ে করোনাভাইরাসের ব্যাপক রূপান্তরিত ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকায় দ্রুত আধিপত্যশীল হয়ে উঠছে। নতুন এই হুমকির বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সীমান্ত কড়াকড়ি আরোপের হিড়িকের মধ্যে বুধবার দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে, ওমিক্রন আক্রান্ত দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো থেকে আগত যাত্রীদের নাম যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে বিমান সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, মৃদু থেকে গুরুতর রোগ সৃষ্টিকারী এই ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে কমপক্ষে ২৪টি দেশে পৌঁছে গেছে।
প্রাথমিকভাবে করোনাভাইরাসের আগের সব ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন আরও বেশি সংক্রামক হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ওমিক্রনের এই আতঙ্কে বিশ্বের আর্থিক বাজারে ঝাঁকুনি শুরু হয়েছে। নতুন এই ভ্যারিয়েন্টের কারণে ফের বিধি-নিষেধ জারি হওয়ায় প্রায় দুই বছর ধরে চলে আসা মহামারির অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার যে আশা তৈরি হয়েছিল তাতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) বলছে, ওমিক্রনের প্রোফাইল এবং মহামারিবিষয়ক আগাম তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে এই ভ্যারিয়েন্ট মানুষের শরীরের কিছু ইমিউনিটিকে ফাঁকি দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলো এখনও এই ভ্যারিয়েন্টে গুরুতর অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেবে।
এনআইসিডি বলেছে, গত মাসে যতগুলো নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে তার প্রায় ৭৪ শতাংশেই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ৪ হাজার ৩৭৩ জনের করোনা শনাক্ত হলেও বুধবার সেই সংখ্যা ৮ হাজার ৪৬১ জনে পৌঁছেছে।
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। গত ৮ নভেম্বর দেশটির সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ গোয়েটেং থেকে সংগৃহীত একটি নমুনায় প্রথম ভ্যারিয়েন্টটি পাওয়া যায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার এই স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মাত্র একদিনের ব্যবধানে মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারিবিদ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ ওমিক্রন কতটা সংক্রামক তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে বলে জানিয়েছেন।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ফাইজারের সহ-নির্মাতা এবং বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) উগুর শাহিন বলেছেন, ফাইজারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তারা করোনার যে ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন, তা ওমিক্রনে গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে শক্তিশালী সুরক্ষা দিতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কত সহজে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পারতে পারে এবং এটি ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে এড়াতে পারে কি-না তা জানতে বিজ্ঞানীরা সময়ের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিন
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ‘সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিন, সর্বোত্তম পরিস্থিতির জন্য আশা দেখুন।’
বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, টিকার পূর্ণ ডোজ এবং একটি বুস্টার শট নেওয়া থাকলে তা এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য শক্তিশালী সুরক্ষা দেয়।
ডব্লিউএইচও বলেছে, অনেক সময় ব্যাপক সংখ্যক টিকা না পাওয়া জনগোষ্ঠীর মাঝে অবাধে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। আর এই সময় নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভাবন অব্যাহত থাকবে। বিশ্বে এখন পর্যন্ত ২৪টি দেশ ও অঞ্চলে করোনার নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ঘানা, নাইজেরিয়া, নরওয়ে, সৌদি আরব এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন।
ভ্রমণ বিধি-নিষেধ
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ৫৬টি দেশ ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভ্রমণ বিধি-নিষেধ কার্যকর করেছে। কিন্তু বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে ভ্রমণ বিধি-নিষেধ আরোপকারী দেশ ও অঞ্চলের সংখ্যা ৭০ বলে জানানো হয়।
জাপান, পর্তুগাল এবং সুইডেনের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে হংকং। অন্যদিকে উজবেকিস্তান বলছে, তারা দক্ষিণ আফ্রিকা এবং হংকংয়ের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করছে।
আফ্রিকার আটটি দেশের দর্শনার্থীদের ওপর সাময়িকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মালয়েশিয়া। এই তালিকায় ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস যুক্ত হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটি।
ডব্লিউএইচও এ ধরনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার চাদর ওমিক্রনের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তার রোধ করবে না।
এসব নিষেধাজ্ঞা মানুষের জীবন এবং জীবিকার ওপর ভারী বোঝা তৈরি করবে। তবে যারা অসুস্থ, ঝুঁকিতে আছেন অথবা যাদের বয়স ৬০ বছরের বেশি এবং যারা টিকা নেন নাই তাদের ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্যবিষয়ক এই সংস্থা।
দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলো ভ্রমণ করেছেন এমন সব বিদেশি নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার ওই দেশগুলো সফরকারী সব যাত্রীদের বিস্তারিত তথ্য বিমানসংস্থাগুলোকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)।
সূত্র: রয়টার্স।
এমআই