ড. রাগিব হাসান :
পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে চরম আরাধ্য। আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন জনপ্রিয় নোটবই ছিলো "উচ্চ নম্বরের সিঁড়ি"। ভাবখানা পড়লেই ভালো নম্বর পাওয়া যাবে! জানিনা সেই সিঁড়ি বেয়ে কেউ উঠতে পেরেছে কিনা। তবে প্রথাগত পরীক্ষা যেহেতু আমাদের দেশে আরো অনেক দিন আছে, তাই সেই পরীক্ষায় ভালো ফল করার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানতে চান আমার কাছে।
আমি এক সময়ে এসব পরীক্ষা পার হয়ে এসেছি, কাজেই তার ভিত্তিতে পরীক্ষায় ভালো করার কিছু ছোটখাট সাজেশন লেখার দুঃসাহস দেখাতে চাই।
(১) পরিষ্কার করে লেখা — হাতের লেখা ভালো হতে হবে এমন কথা নাই। তবে হাতের লেখা পরিষ্কার হতে হবে।
আমার হাতের লেখা ছোটবেলা থেকেই ভয়াবহ। কিছু লিখলে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার মতো চিঠির সাথে করে পড়ে দিয়ে আসতে হয় — এমন ভয়াবহ, হা হা। (ঘটনা চক্রে আমার চাচা/ কাজিনেরা অনেকে আবার হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, নিয়তির কী নির্মম পরিহাস, হা হা) ।
এর পরেও হাতের লেখার কারণে সমস্যা হয়নি কারণ পরীক্ষার খাতায় স্পষ্ট করে লিখতাম। লাইন ধরে লেখার জন্য স্কেল ধরে লিখতাম, তাতে করে কাকের ঠ্যাঙ বকের ঠ্যাঙ লেখাও স্পষ্ট দেখাতো।
পরে পরীক্ষক হয়ে বুঝেছি, পরীক্ষকদের কতোটা কষ্ট হয় অস্পষ্ট লেখা পড়তে। কাজেই পরীক্ষকদের প্রতি সদয় হন। হাতের লেখা মুক্তার মতো হওয়ার দরকার নাই, পড়া গেলেই হবে।
(২) কখনো কিছু ছেড়ে আসবেন না — পরীক্ষার খাতায় খালি খাতা দিয়ে আসার চাইতে কিছু লিখে আসা অনেক অনেক ভালো। হারাবার তো কিছু নাই তাই না? খালি খাতা দিলে নিশ্চিত ০ পাবেন। তার চাইতে কিছু তো লিখে আসেন!
(৩) নিশ্চিত প্রশ্ন সবার আগে — যেটা পারবেন, সেটা আগে করেন। জটিল কাজ আগে করে লাভ নাই।
(৪) খাতায় নাম ধাম লিখতে ভুলবেন না কিন্তু।
(৫) গাদা গাদা লুজ শিট নেয়ার প্রতিযোগিতা বাদ দেন। আরবি পরীক্ষা বা বাংলা পরীক্ষায় অনেক সময়ে পরীক্ষকেরা খাতার পৃষ্ঠা গুনে নম্বর দেন। কিন্তু সেগুলা বাদে বাকি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ইনিয়ে বিনিয়ে লিখে পাতার পর পাতা ভরাবার মানে নাই।
(৬) সময় মেপে কাজ করেন। ৬টা প্রশ্নের জন্য ৩ ঘণ্টা সময় থাকলে অবশ্যই ঘড়ির কাঁটা ধরে প্রশ্নপিছু ২৫-২৮ মিনিট ধরে লিখেন। অবশ্য কাঁটাওয়ালা ঘড়ির মতো ইম্প্রাকটিকাল জিনিষ না, ডিজিটাল ঘড়ি নিয়ে পরীক্ষা দিবেন, যাতে নিখুঁতভাবে সময়ের হিসাব থাকে।
(৭) এবং পরীক্ষা শেষে কোনটা ঠিক হলো কোনটা ভুল হলো, তার হিসাব করা একেবারেই বাদ দেন। আপনার বন্ধুর ১০টা হলে আপনার যদি হয় ৪টা, সেটা জেনে কী করবেন? সেটা জানার চাইতে না জানাই ভালো। তাই পরীক্ষা শেষে প্রশ্নটাকে নির্বাসনে পাঠান। প্রশ্ন নিয়ে চিবিয়ে খেলেও যা লিখে এসেছেন ও যা পাবেন, তা তো আর পাল্টাবেনা, তাই না?
গতানুগতিক পরীক্ষাপদ্ধতি আমার পছন্দ না, তবে সেটা যেহেতু রাতারাতি পাল্টাবেনা, কাজেই আশা করি উপরের সাজেশনগুলা পরীক্ষার্থীদের কাজে লাগবে।
লেখাটি আমার বিদ্যাকৌশল - Bidyakoushol বই থেকে।
#এলোচিন্তা #বিদ্যাকৌশল