সিলভিয়া আক্তার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও থেমে নেই কিছু স্বপ্ন। করোনা বদলে দিয়েছে বিশ্ব পরিস্থিতি। এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পর গত মার্চ মাস থেকে বন্ধ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘরে বসেই দিন কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
করোনার কারণে নানন ভোগান্তির মধ্যে পড়লেও জীবনের মোড় ঘুরেছে অনেক শিক্ষার্থীর। যারা টিউশন করে নিজের খরচ চালাতেন, তাদের অনেকেই হয়ে উঠেছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। বলছি এমনই একজন শিক্ষার্থীর কথা-
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের 'আই আই টি' বিভাগের (৪১ ব্যাচ) প্রাক্তন শিক্ষার্থী তানজিলা বিনতে হোসেন। হোম ডিস্ট্রিক্ট জামালপুর হলেও ছোট থেকে বড় হয়েছেন ঢাকার কল্যাণপুরে। স্কুল, কলেজ দুটোই- কল্যাণপুর গার্লস স্কুল ও কলেজ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছিলেন তানজিলা। পাশাপাশি টিউশন করে নিজের খরচ চালাচ্ছিলেন। ২০২০ সালের মার্চে করোনা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার দরুন পুরো ঢাকায় লক ডাউন ঘোষণা করা হলে টিউশন ছেড়ে বাসায় চলে যেতে হয়। এই কঠিন সময়ে কি করা যায় এই চিন্তা থেকে বিজনেস করার পরিকল্পনা মাথায় আসে তার। তাছাড়া ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে অনেকের অনলাইন বিজনেস নিয়ে লেখালেখি দেখে অনুপ্রাণিতও হন।
এরপর আগস্টের ১৬ তারিখে নিজেই পেইজের নাম ঠিক করে, লোগো বানিয়ে একটি পেইজ খুলেন। পেইজের নাম রাখেন- প্রাকৃত।
উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে গল্প শুনতে চাইলে তিনি বলেন-
''প্রাকৃত নাম রাখার কারণ আমি প্রকৃতির প্রতি অনেকটাই দুর্বল। ইট সিমেন্টের দেয়ালের মধ্যে বড় হওয়ায় ছোট বেলা থেকেই প্রকৃতির প্রতি একটা আলাদা টান রয়েছে। তাছাড়া যে পণ্য নিয়ে কাজ করছি সেটা সম্পূর্ণ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত। ভেজাল পণ্যের মধ্যে থেকেও নিজের চুলের যত্নে সব সময় চেষ্টা করতাম প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে। নিজেই হাতের কাছে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে তৈরী করতাম হারবাল তেল। রিঠা, সিকাকাই দিয়ে শ্যম্পু তৈরির অভিজ্ঞতাও রয়েছে। আর বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে নিজের জন্য হেয়ার প্যাক তো আছেই।
যে কাজ সম্পর্কে ভালো ধারণা আর আগ্রহ আছে সেটা নিয়ে কাজ করলে নাকি সাফল্য আসে। এই ধারণা থেকেই হারবাল তেল নিয়ে কাজ শুরু করে দেই যেহেতু এটা আমি অনেক বছর ধরে নিজের জন্য তৈরি করছি, এর সম্পর্কে কিছু জানি, বুঝি। আর তাছাড়া ছোট বোন বিজনেস শুরু করার জন্য বেশ অনুপ্রেরণা ও তাগিদ দেয়, যে কিনা মৃণালিনী নামে একটি বহুল পরিচিত গ্রুপের তিনজন এডমিনের মধ্যে একজন।
বিজনেস শুরুর পরপর প্রথম মাসেই ছোট একটি বিজনেস গ্রুপের মডারেটর তারপর এডমিন এর দ্বায়িত্ব পাই। গ্রুপটি সম্পূর্ণ অপরিচিত আর এডমিন তখনও অচেনা ছিলেন। কিন্তু জানিনা কি দেখে উনি বিশ্বাস করে আমার মত নতুন উদ্যোক্তাকে এমন দ্বায়িত্ব দেন। বর্তমানে গ্রুপটি বেশ বড় হয়ে উঠছে। গ্রুপটি নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। গ্রুপে বেশ সাড়া পাচ্ছি। গ্রুপের নাম E-commerce BD (ECB)
মূলত দুই রকম হারবাল তেল নিয়ে কাজ শুরু করি। একটি হারবাল নারিকেল তেল ও আরেকটি হারবাল সরিষার তেল। হারবাল সরিষার তেল অনেকের অজানা। এটা আমার সিগনেচার পণ্য।
বিজনেস নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। শুধু হারবাল তেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। প্রাকৃতিক উপাদান নিয়েই আগানোর ইচ্ছে রয়েছে। এ ব্যাপারে সবার সমর্থন আশা করি।''
হারবাল তেল নিয়ে তিনি কিছু তথ্য জানান-
* হারবাল নারিকেল তেলে রয়েছে অর্গানিক নারিকেল তেল, অর্গানিক সরিষার তেল, নিম, মেহেদি, মেথি, কালো জিরা, ঘৃতকুমারী ও আমলকি সহ আরো অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান।
* হারবাল সরিষার তেলে প্রধান উপাদান নিম ও কাচা হলুদ সহ আরো কিছু প্রাকৃতিক উপাদান।
হারবাল তেলের উপকারিতা নিয়ে তানজিলা বলেন-
চুল ভাঙা ও আগা-ফাটা রোধ করে, শুষ্ক ভঙ্গুর চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে তা মজবুত করে, মাথার উকুন দূর করতে সাহায্য করে, চুলকে ডিপ-কন্ডিশনিং করে, চুল সিল্কি করে, চুল পড়া বন্ধ করে, রুক্ষতা দূর করে চুল ঝলমলে করে, বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান চুলে ময়শ্চারাইজিং হিসেবে কাজ করে, চুলের পুনঃবৃদ্ধিতে সহায়তা করে, খুশকি ও খুশকির কারণে চুলকানির থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।