সময় জার্নাল প্রতিবেদক :
সেবা ও মানবিকতা দিয়ে করোনা মহামারির সংকটকালেও প্রশংসা কুড়াচ্ছে বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সারা দেশে একদিকে চলছে নার্সিং সেবা কার্যক্রম, অন্যদিকে চলছে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নার্সিং কর্মকর্তাদের আরও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের প্রচেষ্টা। আর এই কার্যক্রমে গতি আনতে কোভিড ঝুঁকিতেও সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সিদ্দিকা আক্তার। কোভিড সংক্রমণের শুরুতে অধিদপ্তরের দায়িত্ব নিয়ে তিনি সারা দেশের নার্সিং ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও বিরাজমান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালের মার্চের শুরুতে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর সারা দেশে সৃষ্টি হয় এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। করোনা নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িতদের মাঝেও তৈরি হয় অজানা আতঙ্ক। অদেখা ভাইরাস আতঙ্কে মানুষ হয়ে পড়েন ঘরবন্দি। এই অবস্থায় দেশের নার্সদের সাহস ও উৎসাহ যোগাতে বিশেষ উদ্যোগ নেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার। কোভিড আক্রান্তদের সেবায় ভীতি কাটাতে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে নার্সিং কর্মকর্তাদের মধ্যে সাহস যোগান। নার্সিং পেশায় বিরাজমান নানা সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেন।
করোনাকালীন এর ইতিবাচক ফলও মিলে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পর সিদ্দিকা আক্তার ১০ হাজার নার্সের পদ সৃষ্টিসহ ৫ হাজার ৭৫ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স নিয়োগ প্রদান এবং শূণ্যপদসহ আরও ৮ হাজার ২৮৮ জন নার্সের পদায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্নের উদ্যোগ নেন।দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫ হাজার মিডওয়াইফের পদ সৃষ্টির প্রস্তাবনা প্রেরণ ও ১ হাজার ৪০১ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
অধিদপ্তরের কার্যক্রমে আরও গতি আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয় প্রশাসনিক বিকেন্দ্রিকরণের। করোনা মহামারিকালেও মহাখালিতে অতিদ্রুত সম্পন্ন করা হয় অধিদপ্তরের নিজস্ব ভবন নির্মাণের কাজ। গেল বছরের জুন থেকে নিজস্ব নতুন ভবনে শুরু হয়েছে অধিদপ্তরের কার্যক্রম। স্থাপন করা হয়েছে বেবি কর্ণারসহ ৩০০ সিটের অত্যাধুনিক ডিজিটালাইজড অডিটোরিয়াম, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং নার্সিংয়ের প্রবক্তা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের মূর্যাল ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার। ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে অধিদপ্তরের আওতাধীন সব নার্স, মিডওয়াইফ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। শক্তিশালী ও জোরদার করা হয়েছে ই-নথি কার্যক্রমও।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, করোনা মহামারীর মধ্যেও গেল প্রায় দুই বছরে গতি বেড়েছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের কার্যক্রমে। করোনার ভয়াবহ প্রকোপের সময় নার্সিং কলেজ ও ইন্সটিটিউটে কর্মরত শিক্ষক ও প্রেষণে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ছুটি বন্ধ রেখে তাদেরকে দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে পদায়ন করা হয়।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশের নার্সিং শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে করোনাকালীন বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। নার্সিং শিক্ষায় একই মান বজায় রাখতে সব সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি প্রতিষ্ঠানে একই মানের অধ্যক্ষ, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১৩টি নার্সিং কলেজের পূর্ণাঙ্গ জনবলের পদ সৃষ্টির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নার্সিং শিক্ষার প্রসারে ২০২০ সালের চেয়ে নার্সিংয়ে ৪ হাজার ৩০৫ ও মিডওয়াইফে ২ হাজার ১৩৫টি ভর্তির আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। নার্সিংয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিয়েনারে ৬০টি আসন বৃদ্ধিসহ সরকারি আরও ১০টি নার্সিং কলেজে এমএসসি নার্সিং, ৫টিতে ২ বছর মেয়াদী পোস্ট বেসিক নার্সিং ও ৪টিতে পোস্ট বেসিক বিএসসি মিডওয়াইফারি চালুর প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
দেশে বিদ্যমান নার্সিং কলেজ ও ইন্সটিটিউটের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের ৭টি নার্সিং কলেজের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। খাগড়াছড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি আধুনিক নার্সিং কলেজ। দেশের যে ৯টি জেলায় এখনো সরকারি নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই, সেসব জেলায় কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে নার্সিং অধিদপ্তর। এ ছাড়া পিপিপি এর আওতায় ঢাকার মহাখালিতে ইউনিভার্সেল নার্সিং কলেজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ নার্সেস এসোসিয়েশন (বিএনএ) সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসরাইল আলী সাদেক জানান, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার দায়িত্ব নেওয়ার পর করোনা সংকটকালীন সময়েও বেশি গুরুত্ব দেন দেশের নার্সদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে। সেই লক্ষ্যে তিনি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকেও বিকেন্দ্রিকরণ করেন। আগে যেসব প্রশিক্ষণ ঢাকায় হতো, সেসব প্রশিক্ষণ বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজনের উদ্যোগ নেন। করোনাকালীন দেশের ১১টি প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে ৪৮০ জন নার্সকে ২৮ দিনব্যাপী আইসিইউ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আরও ১২শ’ জনকে একই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে।
পেশাগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় ৩ হাজার নার্সকে ফাউন্ডেশন প্রশিক্ষণ এবং ৮০০ নার্স ও মিডওয়াইফকে ‘ইনফেকশন প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল’ এর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে অপারেশনাল প্লানের অধীনে ১২শ’ নার্সকে আইসিইউ, ৬০০ জনকে আইপিসি, ২১০ জনকে পেডিয়াট্রিক, ৯ হাজারকে ফাউন্ডেশন, ১৬০ জনকে ইংরেজি ভাষা, ১২০ জনকে কম্পিউটার, ১২০ জনকে অর্থব্যবস্থাপনা, ১২০ জনকে গেরিয়াট্রিক নার্সিং প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নার্সিং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে ইতিমধ্যে ২৫০ জনকে টিচিং মেথোডোলজি প্রশিক্ষণ দিয়ে পদায়ন ও দক্ষ শিক্ষক সমস্যা সমাধানে আরও ৮০০ শিক্ষককে পদায়ন ও প্রশিক্ষণের কাজ চলমান রয়েছে। মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে ৫০-৬০ জন শিক্ষককে বিদেশ প্রশিক্ষণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সময় জার্নাল/ইএইচ