মো. মঈন উদ্দিন রায়হান, ময়মনসিংহ : সফল নারী উদ্যোক্তাদের একজন ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানাধীন নিগুয়ারী নগরপাড়া গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত নারী সালমা আক্তার।
টাঙ্গাইলের কালিহাতি-রোয়াইল উপজেলার ছাতিহাটি গ্রামের আব্দুল করিম-শাহনাজ বেগম দম্পতির কন্যা সালমা আক্তার এসএসসি পাশ করার পরই বিয়ে হয় গফরগাঁওয়ের নিগুয়ারী গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.এইচ.এম নূর ইসলামের পুত্র প্রকৌশলী মাসুদুল ইসলামের সঙ্গে। বিয়ে হয়ে গেলেও সালমা আক্তার শিক্ষা জীবনে ছেদ ঘটাননি।
নিজ উদ্যম, একাগ্রতা ও দৃঢ়তায় তিনি ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে অনার্স মাষ্টার্স শেষ করেন। উচ্চ শিক্ষা নিয়েও তিনি অনেকের মতো চাকুরীর পিছু ছুটেননি। শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি গ্রামে শশুরালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পতিত পড়ে থাকা জমির উপর তিনি গরু ও মৎস্য খামার শুরু করেন।
চাকুরীতে অবসরপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা ও প্রবাসী পিতার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা এই মোট ৬ লাখ টাকা সহায়তা নিয়ে সালমা আক্তার ২০০৭ সালে ৪টি গরু কিনে এবং এক ব্যক্তির জলাশয় ভাড়া নিয়ে মাছের পোনা ছেড়ে গরু ও মাছের খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। খামারটিতে বর্তমানে ৩২টি উন্নত জাতের গরু এবং মাছ চাষের জন্য জলাশয় বেড়ে ৪ গুন অর্থ্যাৎ ৩শ৫০ কাঠায় বিস্তৃত হয়েছে।
স্বাধীনচেতা উদ্যোক্তা নারী সালমা আক্তারের এই খামারে এলাকার প্রায় অর্ধশত দরিদ্র মানুষ কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জলাশয়ের মালিকরাও ভাড়া পেয়ে লাভবান হচ্ছেন। খামারটির উত্তোরোত্তর উন্নতি দেখে এলাকার অনেকেই এই কাজে হাত দিয়েছেন।
অসাধারন নারী সালমা আক্তার তার দুই শিশু কন্যার নামে খামারটির নামকরণ করেছেন “জান্নাত নূসরাত ডেইরী ফার্ম ও মৎস্য খামার”। তার কন্যা জান্নাত (১০) ঢাকায় মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ও নূসরাত মীরপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজে লেখাপড়া করছে। সালমার ইচ্ছা তার কন্যাদ্বয় উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দেশের আদর্শ নাগরিক হবে এবং দেশ জাতির সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সালমা জানান, এলাকার সৎ, নিষ্ঠাবান মুক্তার হোসেনের পরিচালনা ও প্রচেষ্টায় তার ডেইরী ও মৎস্য খামার কোটি টাকার সম্পদে পরিণত হয়েছে। খামারের চারপাশ ঘিরে রয়েছে রকমারী ফল-ফুলের বাগান। যা দেখে সকলেরই নয়ন-মন জুড়ায়।
অনন্য ও সফল উদ্যোক্তা সালমা আক্তারকে সরকারীভাবে পুরস্কারে ভূষিত করে অধিক উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন বলে সাধারণ এলাকাবাসী মনে করেন। তবেই দেশে শিক্ষার্থী-উচ্চ শিক্ষিত উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়বে। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে।
সময় জার্নাল/আরইউ