স্টাফ রিপোর্টার, সময় জার্নাল : কামরাঙ্গীচর লোহার ব্রীজ থেকে একটু সামনেই এগোলেই বড় ব্যানারে দেখা যাবে হিজড়াদের জন্য প্রতিষ্ঠিত দাওয়াতুল কোরান তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা। মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এই দেশের বৃহৎ এই জনগোষ্ঠীর জন্য এমন শিক্ষাকেন্দ্র হিজড়াদের মাঝে আক্ষরিক জ্ঞানের জন্ম দিচ্ছে। এর সাথে সাথে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও শিক্ষার হাতেখড়ি হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানে।
এ মাদ্রাসা হিজড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে কোরানের শিক্ষা দিয়ে নৈতিক চারিত্রিক পরিবর্তন ও ঘটাচ্ছে। উদ্ভোদনের ৬ মাসে সারাদেশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হিজড়াদের মাদ্রাসাটি। আয়োজকদের উদ্দেশ্য, শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীকে কোরানের শিক্ষা দিয়ে তাদের মাঝে ধর্মীয় অনুভূতি জাগ্রত করা ও তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়া।
মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত হিজড়রা বলেন, ‘পড়াশোনা করতে চাই, শিক্ষিত হতে চাই। কোরান শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ইংরেজী শিখতে চাই। জ্ঞান অর্জন আর শিক্ষা গ্রহণের জন্য মিনতির সুরে এই কথা গুলো বলেন দাওয়াতুল কোরান তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসায় পড়ুয়া হিজড়ারা।’
তারা আরো বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কাছে অনেক ভালো লাগতেছে। শিক্ষার আলো কখনো পাব কিনা সেটা নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্ত এই মাদ্রাসার কল্যাণে আমরা তা পেয়েছি। আগে আমরা মানুষকে পথে ঘাটে কটুকথা কথা বলতাম, বিশ্রী ভাষায় কথা বলতাম। এখন আর সেগুলো করিনা। আগে মানুষ আমাদেরকে দেখলে দূরে সরিয়ে দিত এখন আর আগের মত নেই। আমরা এখন মানুষের কাছে গেলে সালাম দেই, তারাও আমাদেরকে সালাম দেয়।’
জানা যায়, ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর মরহুম আহমেদ ফেরদাউস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠাতা মুফতি আব্দুর রহমান আজাদ এর তত্ত্বাবধানে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য ‘দাওয়াতুল কোরান তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে কামরাঙ্গীচরের এই প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ২০ থেকে ৩০ জন হিজড়া পড়াশোনা করেন।’
এছাড়াও মরহুম আহমেদ ফেরদাউস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন এর উদ্যেগে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানের জন্য ‘দাওয়াতুল কোরান তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসা ’ নামে ঢাকার কামরাঙ্গীচর, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, মতিঝিল, পল্টন, মিরপুর, মান্ডা, কেরানীগঞ্জ, সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা সহ দেশের মধ্যে মোট ১৪টি শাখায় এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চলছে। সারাদেশে এই মাদ্রাসার আওতায় দুইশোর বেশি হিজড়া শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাদের জন্য প্রতিটি শাখায় একজন করে শিক্ষক রয়েছেন ১৫ জন। এছাড়াও দেশের প্রতিটি জেলায় তৃতীয় লিঙ্গের জন্য দাওয়াতুল কোরান মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু করতে চান বলে জানান তারা।
মাদ্রাসার সার্বিক বিষয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক মাওলানা মাহমুদ আল হাসান সময় জার্নালকে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ আমি দীর্ঘ ছয় মাস থেকেই তৃতীয় লিঙ্গের এই জনগোষ্ঠীকে পড়াই। তারা পড়াশোনার ব্যাপারে অনেক আন্তরিক। এখানে আসার পর তাদের আচরণের যে প্রভাব লক্ষ্য করছি তা তাদের বাহিরের মানুষের সাথে আচরণের কোন মিল নেই। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি তাদের আবেগ খুবই লক্ষ্যনীয়। আশা করছি শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে তারা অনেক এগিয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত পড়ানো হয়। হিজড়ারা তাদের লিডারের আন্ডারে এসে পড়াশোনা করে। লিডার ছাড়া বা তাদের অনুমতি ছাড়া তারা এখানে পড়তে আসেনা।
স্থানীয়রা জানান, ‘হিজড়াদের জন্য মাদ্রাসা এটা অবশ্যই ভালো একটি উদ্যোগ। দীর্ঘদিন থেকেই এই মাদ্রাসায় হিজড়ারা পড়াশোনা করছে কিন্ত অনেকে এখনো জানে না। আমরা চাই মানুষ এই মাদ্রাসার ব্যাপারে মানুষ আরও জানুক।’
এ বিষয়ে দাওয়াতুল কোরান তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি আব্দুর রহমান আল আজাদ সময় জার্নালকে বলেন, 'আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এদেরকে ধর্মীয় জ্ঞান দেওয়া। সেই হিসবে আমরা কোরান শিক্ষার মাধ্যমে তাদের মাঝে শিক্ষার হাতেখড়ি দিচ্ছি। আমাদের যাত্রা টা একটু কঠিন ছিল। আমাদের দেশের হিজড়ারা তাদের দলনেতার আন্ডারে চলে। দলনেতাকে তারা গুরুমা বলে ডাকেন। গুরুমার নির্দেশনা অনুযায়ী তারা চলেন। আমরা প্রথমে তাদেরকে আমাদের শিক্ষার আওতায় আনার জন্য দলনেতার সাথে কথা বলে থাকি তারপর তারা সন্মত হলে দলবেঁধে পড়তে আসেন। আমরা অনেক সময় দলনেতাদের সাথে কথা বলে সাড়া পাই না। যেখানে যেখানে পেয়েছি তাদেরকে আমাদের মাদ্রাসায় নিয়ে আসছি।’
সময় জার্নাল/আরইউ