রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ভোটের বছরে পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতন

শুক্রবার, জুন ৮, ২০১৮
ভোটের বছরে পুঁজিবাজারে অব্যাহত পতন

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ভীষণ হতাশ। ২০১৬ সালের শেষ দিক থেকে বাজার তেজী হওয়ার পর এক বছরেরও বেশি সময় ধরে লেনদেনে বেশ লাভ করেছে বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু চলতি বছর শুরু থেকেই বাজার নিম্নমুখী। এর মধ্যে রক্তক্ষরণ হয়েছে মে মাসে। ২৬ এপ্রিল থেকে টানা পতনে ১৬ মাস আগের অবস্থানে চলে গেছে সূচক। গত বছর যেখানে সর্বোচ্চ লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে সেটি এখন চারশ কোটির ঘরে নেমেছে। কোনো কোনো দিন পাঁচশ কোটির ঘরে উঠলেও আবার তা নেমে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের টানা দুই মেয়াদে দেশের অর্থনীতির আকার বিকশিত হয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাজার এক হতাশার নাম। বিশেষ করে ২০১০ সালের ধসের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাজার। এর মধ্যে ২০১৭ ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও ভোটের বছরে পতন আবার সরকারের জন্য রাজনৈতিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অবশ্য এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য নীতি সহায়তা রাখার ঘোষণা রেখেছেন। বিশেষ করে ব্যাংকের করপোরেট করহার ৪২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭.৫ শতাংশ করার সংবাদ এসেছে গণমাধ্যমে। এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার বাজেট পাসের পর বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে বসার ঘোষণাও দিয়েছেন মুহিত। বাজার পতনের নেপথ্যে তারল্য সংকটের বিষয়টি আলোচনায় আসছে সবার আগে। আর আছে আস্থার সংকট। দাম উঠা নামা বাজারের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলেও যখন শেয়ারের দাম ক্রমশই নিম্নমুখী তখন দাম আরও পড়বে না, এমন বিশ্বাস রাখতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে যারা ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনন, তাদের পক্ষে অপেক্ষা করা কঠিন। এসব কারণে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে শেয়ার কিনতে চাইছেন না। বরং শেয়ার বিক্রি করে হাত গুটিয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। গত মে মাসে লেনদেনের ২১ দিনের মধ্যে ১৮ দিনেই বিক্রয় চাপে সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়। এই মাসে ঢাকার পুঁজিবাজার ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স কমেছে ৩৫৫ পয়েন্ট যা প্রায় ৬ শতাংশ। এর আগে এপ্রিলের টানা পতনে ১৪ কার্যদিবসে সূচক পড়ে প্রায় ২৪৫ পয়েন্ট। মে মাসে মাত্র তিন কার্যদিবসে সূচক বেড়েছিল। এই মাসেই বাজার মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা। একাধিক মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললে জানা যায়, বাজারে টানা পতনের কারণে নতুন পুরোনো সব বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে এখন দিশেহারা। বাজার নিয়ে তারা এখন বেশ চিন্তিত।

বাজার সম্পর্কে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর সাবেক পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোতে অস্থিরতার কারণে প্রতিদিন সূচকের পতন হচ্ছে। শেয়ার মার্কেটে কিছু ভালো থাকবে কিছু মন্দ থাকবে-সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্ধভাবে বিনিয়োগ করলে চলবে না। লেনদেনের শুরুতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার কেনার আগ্রহ বেশি থাকে। মাঝামাঝি সময়ে মুনাফায় থাকা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা তুলে নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। যার ফলে বাজার সেল প্রেসার বেড়ে যায়। পরিণতিতে সূচকের পতন ঘটে।’ বাজারের পতন সম্পর্কে রকিবুর আরও বলেন, ‘বর্তমান বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের অভাব রয়েছে। এ বাজারে বেশিরভাগই ডে ট্রেডারের ভূমিকা রাখছে। আর এটাই বাজার স্থিতিশীলতার অন্তরায়।’

হযরত আমানত শাহ সিকিউরিটিজ লিমিটেডে ডিএসইর অনুমোদিত প্রতিনিধি দেবাশীষ সাহা বলেছেন, সূচকের পতন অব্যাহত থাকায় শেয়ারবাজারে ক্রেতা সংকটও বাড়ছে। তার মতে, তিন কারণে বাজারে সূচকের পতন হয়েছে। রোজা, ব্যাংকের জুন ক্লোজিং এবং ব্যাংকের অস্থিরতা। দেবাশীষ বলেন, উত্থান-পতন এটা শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এতে বিনিয়োগকারীদের বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই। বর্তমানে শেয়ারবাজারে খারাপ কোনো খবর নেই। ফলে গুজবে কান না দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করলে অবশ্যই সফলতা আসবে।

বিনিয়োগকারী মতিউল আলম চৌধুরী সোহেল বলেন, ‘ ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। বাজারে নতুন কোনো টাকা না ঢোকার কারণে প্রতিদিন সূচকের পতন হচ্ছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য রয়েছে বিনিয়োগের অনুকূলে। একই সঙ্গে বর্তমানে বাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ারের সংখ্যাও কম।’ মতিউলের মতে, এখন ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

গত এক মাসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল থেকে একটানা পতনের মুখে পড়ে শেয়ারবাজার। ২১ মে বাড়ার পর আবারও দুই দিন পতন ঘটে। ২৪ ও ২৭ মে আবার বাড়লেও এরপর আবার টানা ছয় দিন পড়ে সূচক। গত ৩ মে মাসে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ছিল পাঁচ হাজার ৬৯৮ পয়েন্ট যা গত ৩১ মে নেমে আসে পাঁচ হাজার ৩৪৩ পয়েন্টে। আর চলতি মাসের দুই কার্যদিবসে তা আরও ৩০ পয়েন্ট কমে ৫ জুন নেমে আসে পাঁচ হাজার ৩১৩ পয়েন্টে। মে মাস জুড়েই বাজার মূলধনও কমেছে। ৩ মে বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। ৩১ মে তা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে মূলধন কমেছে ১৮ হাজার ৩৮২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত কয়েক মাস ধরে তুমুল আলোচিত চীনা কনসোর্টিয়ামের ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার খবর। বিদেশি প্রতিষ্ঠান বাজারের অংশীদার হলে এর ভিত্তি মজবুত হবে, আশা ছিল বিনিয়োগকারীদের। ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান এই শেয়ার কিনতে চেয়েছিল, কিন্তু চীনা প্রতিষ্ঠান পায় সে সুযোগ। এর বিনিময়ে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা পাবে ডিএসইর শেয়ারধারীরা। তারা এই টাকা বাজারে বিনিয়োগের আশ্বাস দিলেও এই অর্থ আসতে আগস্ট মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বাজারে অব্যাহত পতনে কৌশলগত বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের ওপর থাকা ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স পুরোপুরি প্রত্যাহারের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দিয়েছে ডিএসই ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন-ডিবিএ।

ডিএসইর পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান বলেন, কিছু নিয়মের মধ্য দিয়ে এ অর্থ আমাদের হাতে আসবে। এর জন্য এক বছর সময় রয়েছে। তবে আমি মনে করি, এত বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। শিগগির আমরা এই অর্থ হাতে পাব। এ অর্থ দিয়ে তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করার ইচ্ছা রয়েছে। এই অর্থ এলে বাজারের বর্তমান চিত্র পরিবর্তন হবে কি না জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, ‘আশা করছি, এই অর্থ শেয়ারবাজারে এলে বাজারে বর্তমান চিত্রের পরিবর্তন আসবে।

সূত্র: ঢাকাটাইমস


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল