আন্তর্জাতিক ডেস্ক। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে সর্বাধিক সংখ্যক নতুন দৈনিক করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া মহাদেশজুড়ে একাধিক দেশে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণ আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। কোভিডের নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউরোপ। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ফ্রান্সে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৭৯ হাজার ৮০৭ জন। কোভিডের মহামারি শুরুর পর থেকে এক দিনে দেশটিতে এত সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি। তবে, কেবল ফ্রান্সেই দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়নি। দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড ভেঙেছে ইতালি, গ্রিস, পর্তুগাল ও ইংল্যান্ডেও।
তবে বিবিসি বলছে, এ পরিসংখ্যান বড়দিনের ছুটির সময় বিলম্বে প্রতিবেদন দেওয়ার কারণে হয়ে থাকতে পারে।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোভিডের অতিসংক্রামক ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়্যান্ট করোনার আরেক ভ্যারিয়্যান্ট ডেলটার চেয়ে কম ক্ষতিকর। ওমিক্রনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আশঙ্কা ডেলটার তুলনায় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ কম। তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছে—ইউরোপজুড়ে কোভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধি দেশগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেবে।
ফ্রান্সের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অলিভিয়ার ভির্যান গত সোমবার সতর্কবার্তা দেন যে, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে আসছে জানুয়ারির শুরুতে ফ্রান্সে কোভিডের দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা আড়াই লাখেও পৌঁছাতে পারে। এ ছাড়া ফ্রেঞ্চ হসপিটাল ফেডারেশন সতর্কবার্তা দিয়েছে যে, ‘সবচেয়ে কঠিন সপ্তাহ এখনও আসতে বাকি’।
ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী জ্য কাস্টেক্স এ সপ্তাহের শুরুতে কিছু নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছিলেন। এসবের মধ্যে রয়েছে—জানুয়ারির শুরু থেকে সপ্তাহে যাদের পক্ষে সম্ভব, তাদের কমপক্ষে তিন দিন বাড়ি থেকে কাজ করা বাধ্যতামূলক।
ফ্রান্স এরই মধ্যে সে দেশে বুস্টার ডোজ প্রয়োগের গতি বাড়িয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৩০ লাখে বেশি বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করা হয়েছে।
ইউরোপের চিত্র
ইতালিতে দৈনিক সংক্রমণ সংখ্যা ৭৮ হাজারে পৌঁছেছে, যা মহামারি শুরুর পর থেকে নতুন রেকর্ড। এ ছাড়া দেশটিতে কোভিডে আরও ২০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতালিতে কোভিডে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৫৩ জনে।
এ ছাড়া দৈনিক সংক্রমণ বেড়েছে পর্তুগাল, গ্রিস, সাইপ্রাস ও ইংল্যান্ডেও।
এমন পরিস্থিতিতে প্যারিস, লন্ডন, বার্লিনসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি শহর সরকারিভাবে নববর্ষ উদ্যাপন বাতিল করেছে। যদিও, কিছু দেশের সরকার দেশব্যাপী বিধিনিষেধ আরোপে তেমন আগ্রহী নয়।
ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে জনগণকে নিজস্ব বোধ-বুদ্ধি ব্যবহার করে আচরণ ও চলাফেরা করতে বলা হয়েছে। আর, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ বলেছে—তারা পুয়ের্তা দেল সোল স্কয়ারে উপস্থিতি সংখ্যা কমিয়ে উদ্যাপন চালিয়ে যাবে।
অন্যদিকে, ইতালিতে গণজমায়েত ও বাইরে অনুষ্ঠান নিষিদ্ধসহ নাইটক্লাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে, ব্যক্তিগত জমায়েতে কোনও বিধিনিষেধ দেওয়া হয়নি।
আর, পোল্যান্ড নববর্ষের প্রাক্কালে নাইটক্লাবগুলো পুনরায় খোলার অনুমতি দিচ্ছে। তবে শর্ত থাকছে—একেকটি ক্লাবে টিকা না নেওয়া সর্বাধিক ১০০ জনকে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। আর, যারা টিকা নিয়েছে, তাদের জন্য কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না।
সময় জার্নাল/আরইউ