নতুন ভেন্যুতে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরের পর্দা উঠছে আজ। পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এ মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি যুক্ত থাকবেন।
শুক্রবার বিবিসিএফইসিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর আয়োজনে মেলা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
‘ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)-২০২২’ উপলক্ষ্যে শুক্রবার দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মেলাটি দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাকে তাদের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধাদি এবং নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে ক্রেতাদের অবহিত করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। ক্রেতারাও এ বৃহৎ আয়োজন থেকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য ক্রয়ের সুবিধা পাবেন। এ মেলার সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। স্টল কমিয়ে খালি জায়গা বেশি রাখা হয়েছে। করোনার কারণে অনেক বিদেশি প্রতিষ্ঠান মেলায় আসেনি। নতুন ভেন্যুর কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকির কথা ভেবে দেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও স্টল দেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে এই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। তবে এবারই প্রথম স্থায়ী মেলা কমপ্লেক্সে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রবেশ মূল্য বড়দের জন্য ৪০ ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা।
সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত ৩০টি স্পেশাল বাস চলবে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। মতিঝিল ও মিরপুর থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি বাস চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল এবং ১৫টি ফুড স্টল দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা অন্য বছরের তুলনায় অর্ধেক। মেলায় মাত্র ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিদেশি স্টল থাকবে। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন এবং ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটিএইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস আইটেম, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্প পণ্যসহ হোম ডেকর পণ্য মেলায় প্রদর্শন করা হবে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় এক্সিবিশন সেন্টারে বিল্ট ইন ১৬০টি সিসিটিভি থাকছে। অতিরিক্ত ৬০টি সিসিটিভি ক্যামেরা মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। মেলার প্রবেশ গেটে পর্যাপ্ত আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক ফায়ার ব্রিগেড নিয়োজিত থাকবে।
মুজিববর্ষ, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ ইত্যাদি বিষয়কে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক জানা যাবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেওয়ার প্রকৃত ইতিহাস জানা যাবে। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র প্রদর্শন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে। সর্ববৃহৎ পার্কিং সুবিধা থাকবে। এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ৫০০ আসনবিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনা করা হবে। মেলায় একটি অস্থায়ী সচিবালয় থাকবে। যেখান থেকে মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে। দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে তথ্যকেন্দ্র, জনতা ব্যাংক, মসজিদ ও বেশ কয়েকটি ব্যাংক বুথ স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। মা ও শিশুদের কথা বিবেচনা করে মেলায় ২টি মা ও শিশু কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।