ডাঃ রাকিবুল হাসান :
রোগী-১
একবার মেডিসিন ওয়ার্ডে একটা রোগী দেখার অনুরোধ পেয়েছিলাম। রক্তের ক্যালসিয়াম অনেক কম, ৫.৫ মিলিগ্রাম/ডিএল। রোগীর হাত পা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ক্যালসিয়াম মুখে দেওয়া হচ্ছে কিন্তু কোন ভাবেই উন্নতি হচ্ছেনা।
৬১ বছরের এক মহিলা এই অবস্থা কেন? পরীক্ষার রিপোর্টে দেখি রক্তের ম্যাগনেসিয়াম অনেক কম। ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম যদি একই সাথে কম থাকে তাহলে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম রোগীকে দিতে হয়। আবার দুটোই ডাইভ্যালেন্ট ক্যাটায়ন হওয়াই মুখে যদি দুটোই দেন তাহলে এক্টির কারনে অরেকটি পরিপাক তন্ত্র থেকে শোষন হবেন না। সব কিছু মাথায় রেখে রোগীকে দুটোই একসাথে দিতে থাকলাম ভিন্ন রূটে। যে রোগীর ম্যাগনেসিয়াম কম তার রক্তে পটাশিয়াম কম থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি, সাথে সোডিয়ামও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কম থাকতে পারে। পরের দিন তাই রক্তের ইলেকট্রোলাইটস পরীক্ষা দিয়ে দেখি রোগীর পটাশিয়াম এবং সোডিয়ামও কম।
রোগীর এখন সমস্যা দাঁড়াল – রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম এই চারটি উপাদান একসাথে কম।
আসলে এটার প্রধান সমস্যা ম্যাগনেসিয়ামে, যার কারনে একসাথে রক্তের অন্যান্য মিনারেল গুলো কমে গেছে। আরেকটা কারন হতে পারে। পরিপাক্বতন্ত্র বা কিডনী থেকে সবগুলো উপাদান একসাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
উপরের বিষয় মাথায় রেখে রোগীর সকল রোগের খোঁজ খবর নেওয়ার পর তেমন কিছুই পেলাম না।
(Starvation, malnutrition (alcoholism), parenteral alimentation, Prolonged vomiting/nasogastric aspiration, chronic diarrhoea/laxative abuse, malabsorption, small bowel bypass surgery, fistulas, Diuretic therapy (loop, thiazide), alcohol, tubulotoxic drugs (gentamicin, cisplatin), post-obstructive diuresis, recovery from acute tubular necrosis , primary renal magnesium wasting)
শুধু একটা ইতিহাসই পেলাম, গত ২ বছর ধরে সকাল বিকাল গ্যাসের ওষুধ খাই রোগী।
আসলে মুল সমস্যা এই গ্যাসের ওষুধে। এটার দীর্ঘদিন সেবনে পরিপাকতন্ত্র থেকে ম্যাগনেসিয়াম (ও অন্যান্য মিনারেল) শোষন হয় না। রক্তে অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম ঘাড়তির দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল স্বরূপ অন্যান্য মিনারেল- ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম কমে গিয়েছে।
রক্তের ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য উপাদান সঠিক ভাবে আমরা চিকিৎসা করতে পেরেছিলাম রোগী ছুটি দেওয়ার আগে। গ্যাসের ওষুধ বন্ধ করার উপদেশ দেওয়া হয়েছিল জানিনা কতটুকু কার্যকর হবে।
রোগী-২
উপরের যে কাহিনী এটার ক্ষেত্রেও অনেকটা একই রকম। ২৭ বছরের একজন মহিলা বাচ্চা হয়েছে কয়েক মাস আগে, ডেলিভারীর পরে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং আয়রন খাওয়ার পরেও দুর্বলতা যাচ্ছেনা। পরীক্ষা করে দেখা যায় একই কাহিনী। গর্ভধারনের আগে থেকে শুরু হয়েছে, বাচ্চা প্রশবের পরেও চলছে উচ্চমাত্রায় গ্যাসের ওষুধ তাই অনেক কিছু খেয়েও আসলে কোন উপকারে আসছেনা।
আমাদের পাকস্থলীর এসিড আসলে খাবারের অনেক ভিটামিন মিনারেল খাবার থেকে বের করে পরিপাক্বতন্ত্র হতে শোষণ করে রক্তে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। ছোটখাটো কারনে বা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজ থেকে দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ খেলে এই রকম সমস্যার সম্মুক্ষীন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। চিকিৎসক এবং রোগী দুই পক্ষকেই সচেতন হতে হবে, তা নাহলে এই সমস্যা হতেই থাকবে।
ইনশাআল্লাহ পরবর্তী পোষ্টে- বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কিভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত ভাবে গ্যাসের ওষুধ বন্ধ করতে পারেন সেটা নিয়ে আলোচনা করব।
লেখকঃ ডাঃ রাকিবুল হাসান, এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজী)