তবুও কি ফিরবে না?
যে চাষি ভোর থেকে সন্ধ্যা অব্দি মাঠে পড়ে থাকে,
সেও সূর্যের তেজ্ব দেখে সময় নির্ধারণ করে,
ক্ষেতের আ'লের পরে সিজদাবনত হয়,
বশ্যতাস্বীকার করে নেয় প্রভুর নৈকট্যে।
সেও ঘরে ফেরে,
সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা পাখিদের মতো।
সে জানে, ঘরে তার জন্য অপেক্ষা করছে,
শান্তি, স্বস্তি আর নিরাপত্তার এক কোমল চাদর।
যে লোকটা লোকাল বাসে ঝুলতে ঝুলতে রোজ অফিসে ছোটে,
হয়তো তাড়াহুড়োয় নাশতাটা ঠিক মতো হয়নি,
হয়তো বুক পকেটে খচখচ করছে বাজারের ফর্দ,
শিশুদের খেলনা গাড়ি, বউয়ের বাহারি চুড়ির আবদার,
হয়তো টাকার থলেটা তখন গড়ের মাঠ,
তাই তার সাথে পাল্লা দিয়ে
বিপরীতে বাড়ছে মেজাজের পারদ।
তবু্ও সে ঘরে ফেরে।
ন'টা-পাঁচ'টা অফিস করে,
ওভারটাইম ডিউটি সেরে,
ভিষণ ঘেমে-নেয়ে বিধ্বস্ত হয়ে সে ঘরে ফেরে।
সে জানে ঘরেই রয়েছে তার প্রিয়জন,
ঘর থেকেই সে যে পথে নেমেছিল।
যে ছেলেটা স্কুলের পাচিল টপকে
বন্ধুদের সাথে সিনেমা দেখতে যায়,
মা-বাবার শাসনের ভয়ে, সারাদিন রোদ্দুরে ঘুরে ঘুরে,
ক্লান্ত, ভগ্ন দেহে ঘরে ফেরে মাঝরাতে।
মা তাকে আঁচলে ঢেকে মুছে দেয়,
দিনভর যতসব দুষ্টুমি।
সেও তবু ঘরে ফেরে।
সে জানে মা-জননীর ক্ষমার দরজা কতো বিস্তৃত।
যে মেয়েটা একদিন ক্লাসের দোহাই দিয়ে,
বন্ধুর বাড়ি গিয়ে জন্মদিনের কেক কাটে,
হৈহৈ, হুল্লোড়েে ফেইসবুকে কতো ছবি,
ভুল করে বাবা যদি দেখে নেয়,
দুরুদুরু বুক কাঁপে,
তবুও সে ঘরে ফেরে সন্ধ্যার অন্তরালে।
সে জানে একবার বাবা বলে ডাকলেই,
রাগী রাগী চোখ দুটো থির হয়ে যাবে।
সব পাখি নীড়ে ফেরে,
বনের হিংস্র পশু, বিষধর গোখরো
কিংবা ছোট্ট পোকা, রঙচঙা প্রজাপতি,
দিনটা ফুরিয়ে এলে ঘরে ফিরে আসবেই।
তুমিও কি ফিরবে না?
বিকাল গড়িয়ে দেখ সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো,
কতটুকু আলো আর ও আকাশে থাকবে?
তোমাকে যে ভালোবাসে, সারাদিন ঘিরে রাখে,
চেয়ে দেখ তাঁর ঐ ক্ষমার দরজাখানা,
মাটির গভীর থেকে আকাশ ছাড়িয়ে গেছে,
উপলব্ধির আরও বাইরে।
প্রকাণ্ড দরজাটা হাট করে খোলা আছে,
আঁধার ঘনিয়ে এলো,
তবুও কি আজও তুমি ফিরবে না?
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৩ ডিসেম্বর ২০২১।