সর্বশেষ সংবাদ
সময় জার্নাল প্রতিবেদক : বাংলাদেশের কৃষি শিল্প বিকাশে দেশিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বালাইনাশক উৎপাদনে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা নিরসনে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিএএমএ)।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় কৃষিমন্ত্রী ড. মো.আব্দুর রাজ্জাক সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও ধন্যবাদ জানান বিএএমএ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রোপাইটার এম এ মান্নান, রহমান পেস্টিসাইডস এন্ড কেমিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু জাহাঙ্গীর খান, পদ্মা এগ্রো স্প্রেয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল আলীম ও আলফা এগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ইকবাল সাঈদ। এসময় বালাইনাশক উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি সহ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএএমএ নেতারা সরকারের কাছে ৫টি দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো হলো- ১. বালাইনাশকের সোর্স উন্মুক্ত করণ, ২. এনওসি বিষয়ক জটিলতা নিরসন, ৩. পেটেন্ট স্বত্ব দূরীকরণ, ৪. বালাইনাশক কারিগরী কমিটিতে বিএএমএ'র প্রতিনিধি রাখা এবং ৫. বিএএমএ কতৃক উৎপাদিত পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএএমএ নেতারা বলেন, বাংলাদেশে কোন প্রিন্সিপাল কোম্পানী (বালাইনাশকের কাঁচামাল ও সহায়ক উপাদান উৎপাদনকারী) না থাকায় দেশীয় বালাইনাশক ম্যানুফ্যাকচারার্সগণ বিদেশ থেকে যেমন ভারত, চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, জার্মানী ইত্যাদি দেশ সমূহ হতে (সক্রিয় ও সহযোগী উপাদান) কাঁচামাল এনে দেশে উৎপাদন করে আসছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মিটানোর জন্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়ে এবং কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে ধান, গম, আলু, ভুট্টা, সবজি ইত্যাদির উৎপাদন বহুগুন বৃদ্ধি পায়। কৃষিকার্যে ব্যবহার্য আবাদী জমি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদিত ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণও বাড়তে থাকে। ফলশ্রুতিতে কৃষক পর্যায়ে বালাইনাশকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ৪৫ হাজার ১৭২ দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন (কিলো লিটার) বালাইনাশক ব্যবহার হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৭৬৮ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে মোট ২২টি বালাইনাশক উৎপাদনকারী এবং প্রায় ৭০০ বালাইনাশক আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই ধারার বাংলাদেশে ৪ ধরনের বালাইনাশক ব্যবসা গড়ে উঠে। যেমন- ১. বালাইনাশকের কাঁচামাল (সক্রিয় ও সহযোগী উপাদান) আমদানি করে দেশে ম্যানুফ্যাকচার/ফরমুলেশন করে বিক্রয় করা, ২. বালাইনাশকের বাল্ক এনে রিপ্যাকিং করে বিক্রয় করা, ৩. বালাইনাশকের বাল্ক অন্য দেশীয় কোম্পানীগুলোতে সরববাহ করা এবং ৪. বিধি বহির্ভূতভাবে বালাইনাশকের সার্টিফিকেট ভাড়া দেওয়া বা বিক্রয় করা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশে বালাইনাশকের শ্রেণি বিভাগ রয়েছে। ১এ (এক্সট্রিমলি হ্যাজারডাস), ১বি (হাইলি হ্যাজারডাস), ২ (মডারেটলি টক্সিক) ও ৩ (গ্লাইটলি টক্সিক)। বালাইনাশকের অপরিকল্পিত ব্যবহার না হয় এবং পরিবেশের উপরে যেন বিরুপ প্রভাব না পড়ে তার জন্য বালাইনাশক ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়। রাসায়নিক বালাইনাশকের ব্যবহার পরিমিতকরণের বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে উঠে।
বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশনের নেতারা জানান, দেশীয় বালাইনাশক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বিভিন্ন সোর্স (বিদেশী মানুফ্যাকচার্সগণ) হতে কাঁচামাল (সক্রিয় ও সহযোগী উপাদান) এনে দেশে ম্যানুফ্যাকচার করে চাহিদা পূরণ করে আসছিলো। বালাইনাশক আইন ২০১৮ এবং ইতিপূর্বে প্রদানকৃত বিধি সমূহে সোর্স (বিদেশে উৎপাদনকারী/সরবরাহকারী) বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। দেশীয় বালাইনাশক কোম্পানিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ৬৮তম পেস্টিসাইড কারিগরি উপদেষ্টা কমিটি পর্যন্ত শুধুমাত্র উদ্ভিদ সংরক্ষণ উইং-এ নমুনার ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে সোর্স পরিবর্তন করা হয়। ৬৯-৭০তম বালাইনাশক কারিগরী উপদেষ্টা কমিটি সময়কালীন বালাইনাশকের সোর্স পরিবর্তন বন্ধ রাখে। পিটিএসির ৭৭তম সভার আলোচনায় রেজিস্টার্ড বালাইনাশকের ম্যানুফ্যাকচার বা সোর্স পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি বিষয়টি সভায় উত্থাপন করেন। সোর্স পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনা ও পর্যালোচনা শেষে দুইটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১. বালাইনাশকের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তির তারিখ হতে ২ বছরের মধ্যে রেজিস্টার্ড বালাইনাশকের ম্যানুফ্যাকচারার যা সোর্স পরিবর্তনের আবেদন করা যাবে না। ২. রেজিস্টার্ড বালাইনাশকের সোর্স পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নমুনাটির ল্যাব টেস্ট করতে হবে এবং এক মৌসুমে ও দুই লোকেশনে মাঠ পরীক্ষা করতে হবে।
বিএএমএ গঠনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে এসোসিয়েশনের নেতারা জানান, উক্ত সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন এসোসিয়েশন কতিপয় কোম্পানীর স্বার্থ ও বহুজাতিক কোম্পানীর পূর্ণ স্বার্থ সিদ্ধির প্রতিফলন প্রকাশ পায় এবং সোর্স পরিবর্তনের বিষয়টি রুদ্ধ হয়ে যায়। ওই অবস্থায় বালাইনাশকের উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এই অবস্থার প্রেক্ষাপটে দেশীয় শিল্প বিকাশের লক্ষ্যে গঠিত হয় দেশের বালাইনাশক ম্যানুফ্যাকচারারদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যালস ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন (বিএএমএ)। পরবর্তী সময়ে সংগঠনটি কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সোর্স উন্মুক্ত সহ বিভিন্ন দাবী সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করে। যা ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক বিবেচিত হয়েছে এবং দেশীয় বালাইনাশক ম্যানুফ্যাকচারার্সগণের সোর্স উন্মুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এই নির্দেশনা কার্যকর করা হলে আমাদের দেশেই মানসম্পন্ন বালাইনাশক উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে এবং রফতানির দ্বার উন্মোচিত হবে। বালাইনাশক উৎপাদনকারী দেশীয় কোম্পানিগুলোর জন্য সরকারের এই পদক্ষেপ সময়োচিত।
সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএএমএ নেতারা বলেন, দেশীয় বালাইনাশক শিল্প বিকাশে যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তের জন্য আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতার সুযোগ্য সন্তান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশীয় শিল্প বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাঁর দৃঢ়তা ও কার্যকর পদক্ষেপের কারণেই বালাইনাশক উৎপাদনকারী দেশীয় কোম্পানিগুলোর দাবি পূরণ হলো।
সময় জার্নাল/এসএ
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল