নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে শেষ হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা। বাকযুদ্ধ, একে-অপরকে দোষারোপ, জনগণের আস্থায় দরজায় দরজায় গিয়ে নানান প্রতিশ্রুতি আর নানান অভিযোগ, আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে চলছে প্রচারণা। কে হচ্ছে নগর পিতা। তা নিয়ে দলে এবং দলের বাইরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এবারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়ছেন সাত জন প্রার্থী। সবাই সবার প্রচারণা চালিয়ে গেলেও পুরো নারায়ণগঞ্জ এবং সারা দেশ তাকিয়ে আছে নৌকা এবং হাতির দিকে।
নৌকা প্রতীক নিয়ে নানান রকম প্রতিশ্রুতি আর চলমান কাজকে গতিশীল করার ওয়াদা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি। অপরদিকে হাতি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে নির্বাচন করছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার। তিনিও নগরকে ঢেলে সাজানো এবং গত ১৮ বছরের নানান অসঙ্গতি জনগণের সামনে তুলে ধরে চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা।
তবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় আইভি-তৈমুরের লড়াই যতটা সরগরম হয়েছে তারচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান। আইভি-তৈমুরের প্রচারণায় এমন দিন একেবারেই নেই যেদিন শামীম ওসমান ইস্যু উঠে আসে নাই।
শহরের সাধারণ জনগণও বিষয়টি নিয়ে ছিলেন চরম উত্তেজনায়, তাদের মধ্যেও ছিল নানান মত আর বক্তব্য। সিটির অনেক জনগণ মনে করছেন শামীম ওসমান সাপোর্ট দিচ্ছে তৈমুরকে। খোদ সেলিনা হায়াৎ আইভিও অভিযোগ তুলেছেন এই সাংসদকে নিয়ে। বলেছেন, তৈমর চাচা বিএনপির ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরও না তিনি নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমানের লোক।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে আইভি এটাও বলেছেন যে, শামীম ওসমান গডফাদার এটা সারা দেশ জানে। তিনি তার ৩০ বছর কর্মের গুণে মানুষের কাছে গডফাদার হয়েছেন।
এছাড়া শুরুর দিকটাতেই অভিযোগ ছিলে শামীম ওসমানকে নিয়ে আইভির।অভিযোগ ছিল নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের কমিটি নিয়েও। যার রেশ ধরে বাতিল করা হয় ছাত্রলীগের কমিটি, দেয়া হয় নতুন নেতৃত্ব।
এত অভিযোগের ভিত্তিতে নির্বাচনের শুরু থেকে নিরব থাকলেও গত ১০ জানুয়ারি মুখ খোলেন শামীম ওসমান। শুরুতেই ঘোষণা দেন ১৬ তারিখ খেলা হবে। নৌকার হয়ে কাজ করবেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ নৌকার ঘাঁটি, নৌকা স্বাধীনতার প্রতীক। সুতরাং নারায়ণগঞ্জে নৌকার জয় হবেই হবে।
অপরদিকে তৈমুর আলম খন্দকারকে দলহীন শুরু থেকে একা লড়তে দেখা গেলেও শেষ দিকে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির অনেক নেতা কর্মীদের সমর্থন।
শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় তৈমুর আলম খন্দকার আনেন নানা অভিযোগ। তার ভিতরে শঙ্কা কাজ করছে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে। তিনি বলেন, পুলিশের কার্যক্রম দেখে জনগণের মাঝে একটা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ তুলে বলেন, আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। কাউকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না। গ্রেফতারে মহড়া চলছে নারায়ণগঞ্জে। তিনি বলেন, বিএনপি করে না, তবে আমাকে সমর্থন দিচ্ছে তাদের হয়রানি করছে পুলিশ।
তিনি বলেন, আমাকে যারা সমর্থন দিচ্ছে তারাতো আমাকেই ভোট দিবে। ওদের নিজেদের মধ্যেইতো ফাটল। ঢাকা থেকে মেহমান এসেও এই ফাটল বন্ধ করতে পারে নাই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমারই জয় হবে। এছাড়া তিনি সবাইকে কেন্দ্রে গিয়প ভোট দেয়ার কথা বলে বলেন, আমরা কেন্দ্র রক্ষায় আলাদা কমিটি গঠন করেছি। কোন রকম বানচাল হতে দিবো না।
এ রকম নানান বক্তব্য আর মন্তব্যের মধ্য দিয়েই আজ শেষ হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনী প্রচারণা। ভোটের বাকি আর একদিন। এই শহরে বসবাস প্রায় ২০ লাখ লোকের। ভোট দিবে ৫ লাখ জনগণ। ভাগ নির্ধারণ হবে কে হবে নগর পিতা।
জনগণ কি আবারও ভরসা রাখবে নৌকায় নাকি আস্থা রাখবে হাতিতে।এমনি চরম উত্তেজনা আর উৎসাহ কাজ করছে সবার মনে। নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের চোখ এখন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ঘিরে।
সময় জার্নাল/এলআর