শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ এখন শুধুই ছাত্রলীগ

শুক্রবার, জানুয়ারী ১৪, ২০২২
ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ এখন শুধুই ছাত্রলীগ

ডা. রাসেল চৌধুরী :

সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের ২০০৩-৪ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার খাতিরে নিশ্চিতভাবে তাঁকে উর্দুতে লিখতে এবং পড়তে হয়েছে।

উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল, বিজ্ঞান, কলা, বাণিজ্য, চারুকলার শিক্ষার্থীদের নেতা হতে পেরেছিলেন। কারণ মনে প্রাণে তিনি আওয়ামী লীগ, বংগবন্ধু আর ছাত্রলীগের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি এ পদে আসীন হয়েছিলেন।

আমি ব্যাপারটাকে ভীষণ ইতিবাচকভাবেই দেখেছিলাম। এটা থেকে প্রমাণিত হয়েছিলো, মাদ্রাসাসহ সকল শ্রেণির, সকল বিষয়ের শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষার্থীরাই আদর্শগুণে বংগবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্রলীগের পতাকাতলে আসতে পারেন। শুধু আসতেই পারেন না, শীর্ষ পদেও আসীন হতে পারেন।

পাকিস্তান আমলের তৎকালীন ছাত্রলীগ তুমুল প্রভাবশালী ছাত্র ইউনিয়নের সংগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সাধারণ ছাত্রদের হৃদয়ে আসীন হতে পেরেছিলো। মূল কারণ ছাত্র ইউনিয়ন ছিলো সমাজের এলিট শ্রেণির ছাত্রদের রাজনৈতিক রোমান্টিসিজিম আর ছাত্রলীগ ছিলো সাধারণ ছাত্রদের রাজনৈতিক আশা আকাংখার বাস্তবতা।

অথচ আজ ছাত্রলীগ নিজেই নিজেদের সীমাবদ্ধ চিন্তা চেতনার মাঝে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তারই সাম্প্রতিক প্রমাণ মামুলি একটা কাওয়ালি সন্ধ্যা ভন্ডুলকে ঘিরে তুমলভাবে বিতর্কিত হওয়া। 

কি হতো এই গানের আসর হলে? কতটুকু মিডিয়া কভারেজ পেতো এই আয়োজন? কতজন শিক্ষার্থী এই গানের অনুষ্ঠানে যেতো? এদেশের কতভাগ ধর্মান্ধ উগ্রপন্থী দল সমর্থক, কর্মী বা সাধারণ মানুষ কাওয়ালি শোনে? অথচ কাওয়ালি আসর ভেংগে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ আজ সমালোচনার মুখে।

আচ্ছা উর্দু কাওয়ালি মানেই পাকিস্তানপন্থী এটা তাঁরা কেনো ভেবেছেন? এক পুরনো ঢাকারই বহু মানুষ আজো উর্দুতে কথা বলেন, কাওয়ালি গান বাজনা করেন। কোনো সমস্যা গত ৫০ বছরে হয়েছে? পুরনো ঢাকায় ছাত্রলীগ নেই? 

যদি ধরেও নিই ধর্মীয় উগ্রপন্থী বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এর সাথে জড়িত ছিলো, তাতেও কি এটা ছাত্ররাজনীতিতে আহামরি কোনো প্রভাব ফেলতো? তাঁরা কি খুব পরিচিতি পেতো? ছোট এই গানের আসর থেকে আয়োজকদের সেই পরিচিতি কি এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরবর্তী পরিচিতির চেয়ে বেশি হতো?

হতো না। ছাত্রলীগ বারবার নিজেরাই নিজেদের অনাবশ্যক বিতর্কের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। খুব প্রয়োজন হলে সরকার সমর্থক এই সংগঠন চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিয়ে প্রশাসনিকভাবে এটা বন্ধ করতে পারতো। কিন্তু বারবার স্রেফ পেশিশক্তির প্রয়োগে সংগঠনটি অনাবশ্যক বিতর্কে জড়াচ্ছে।

আচ্ছা এই যে ছাত্রলীগ কাওয়ালি সন্ধ্যাকে ক্যাম্পাসের জন্য হুমকি মনে করলো, সেটার যৌক্তিক বিরোধিতা করে ছাত্রলীগের নেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দু লাইন লিখেছিলেন? আমার চোখে অন্তত পড়েনি। 

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বা ঢাবি ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক কি এই বিষয়ে কোনো বিবৃতি দিয়েছেন। দেননি। দুয়েকজন নেতা যা বলেছেন, তাতে সন্দেহ জাগে আদৌ তাঁরা ক্যাম্পাসের খোঁজ খবর রাখেন কিনা। তাঁদের ধারনাই হয়তো নেই, আজো সারা দুনিয়ায় ছাত্রদের আদর্শিক বিরোধিতার মূল অস্ত্র মসি বা লেখনী, অসি বা লাঠি নয়। 

কাওয়ালী গানের আসরের আয়োজক সিলসিলার একজন সদস্য কিন্ত ফেসবুকে নিজেদের আয়োজনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কমেন্টে লিংক দিয়ে দিচ্ছি।

এর আগে ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আয়োজনকে ঘিরে তৎকালীন ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতা, শোভন ও রব্বানী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ফলে এই উৎসব বাতিল হয়। এতে চরম ক্ষুব্ধ হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

শুধু শোভন রব্বানীই নয়, ২০০৮ এর পর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই মূলত ছাত্রলীগের একাধিক গ্রুপ নিজেদের মধ্যে দৃশ্যমান বা অদৃশ্য বিরোধ ও সংঘর্ষে লিপ্ত। এতে করে আদর্শ চর্চার বদলে, ভাইনীতিই এখন প্রায়ক্ষেত্রে মুখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি। ভাইয়ের জন্মদিন পালন আর ভাইয়ের লেখার কপি পেস্টই এখন প্রধান রাজনৈতিক চর্চা। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ছাত্রলীগের নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডও তাই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।

ছাত্রলীগের দায়িত্ব ছিলো সকল ক্যাম্পাসে সকল ধারার সাংস্কৃতিক চর্চাকে নিরাপত্তা দেয়া। পাশাপাশি বংগবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী সাংস্কৃতিক দলগুলোর চর্চাকে বেশি করে এগিয়ে নেয়া, যাতে করে প্রতিক্রিয়াশীলরা ছাত্রদের মনে জায়গা না পায়।

অথচ হচ্ছে উল্টোটা। ছাত্রলীগের কারণেই ছাত্রলীগ বিরোধী সংগঠন বা প্রতিক্রিয়াশীলরা অপ্রত্যাশিত মিডিয়া কভারেজ পাচ্ছে, সাধারণ ছাত্রদের মনে সহানুভূতি পাচ্ছে।

আমরা যেনো ভুলে না যাই, নূরুল হক নূরুর মতো উগ্রপন্থী ও মোটামুটি স্থুল রুচির একজন ছাত্রনেতা ডাকসুর ভিপি বা দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন স্রেফ ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের হৃদয়ের দাবির কাছাকাছি না থাকতে পারার কারণেই।

নিজ আদর্শের পক্ষে চমৎকার যুক্তির বিতর্ক না করে ভয় দেখিয়ে, ভাংচুর করে, ধ্বংসলীলায় ছাত্রছাত্রীরা ভয় হতো পায়, শ্রদ্ধা কি করে? ছাত্রলীগের আদর্শে উজ্জীবিত হয়? তাই ছাত্রলীগের প্রতিপক্ষ এখন শুধুই ছাত্রলীগ। শিক্ষা শান্তি প্রগতির মূলনীতিতে বিশ্বাসী ছাত্রলীগ নেতৃত্ব যত দ্রুত এই কথা হৃদয়ংগম করবেন ততই মংগল।


লেখক : এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (শিশু)

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ।



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল