সময় জার্নাল প্রতিবেদক : সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ একেবারে বন্ধ না হওয়ায় করোনা শঙ্কার মধ্যেও তাকে আপাতত হাসপাতালেই থাকতে হচ্ছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্য গঠিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গতকাল এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনার আগ্রহ দেখিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওবিটি পরীক্ষার ফল পজিটিভ অর্থাৎ অল্প পরিমাণ রক্তক্ষরণ হচ্ছে- এমন রিপোর্ট পাওয়ার পর মেডিক্যাল বোর্ড এই সিদ্ধান্ত দেয়।
এ ছাড়াও মেডিক্যাল বোর্ড নতুন আরও কয়েকটি পরীক্ষা দিয়েছে। তাকে আরও এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। মোটামুটি ঝুঁকিমুক্ত হলেই বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের এক চিকিৎসক এ তথ্য জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আগের মতোই আছেন। এখন কিছুটা স্থিতিশীল বলা যায়। কেবিনে স্থানান্তরের পর বড় ধরনের রক্তক্ষরণ হয়নি। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, করোনা বাড়ছে, এ বিষয়ে চিকিৎসকরা অবগত আছেন। তাদের সিদ্ধান্ত ছাড়া তো তাকে বাসায় নেওয়া সম্ভব নয়।
খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্য জানান, প্রথমবার ম্যাডাম করোনা পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে হাসপাতাল থেকেই আবার তার করোনা সংক্রমিত হয়। এ জন্যই এবার ভয় কাজ করছে। হাসপাতালে প্রচুর কোভিড রোগী আসা-যাওয়া করছে। কেবিনেও নার্স, স্টাফ, আয়া, ক্লিনারসহ অনেকেই যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারেন। মেডিক্যাল বোর্ড এ জন্যই খালেদা জিয়াকে বাসায় রেখে চিকিৎসার চিন্তা করেছিল। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা স্বস্তিদায়ক নয়। লিভারসিরোসিসে আক্রান্ত উনার অবস্থা আজ ভালো তো কাল খারাপ। সবচেয়ে ভয়ের কারণ রক্তক্ষরণ, যা গতকালও অল্প পরিমাণে হয়েছে। এটি কোনোভাবেই পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে না। রক্তের হিমোগ্লোবিন হু হু করে কমে যায়। আবার সময় নিয়ে একটু বাড়ে।
তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের ডায়াবেটিসও কখনো নিয়ন্ত্রণে ছিল না। ইনসুলিন দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। এ জন্য কেবিনে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিসিইউর সাপোর্টও রাখা হয়েছে। ইলেক্ট্ররাল ইমব্যালেন্স অর্থাৎ খনিজে অসমতা দেখা দিচ্ছে মাঝেমধ্যে। এ জন্য শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যায়। রুচি কমে যায়।
মেডিক্যাল বোর্ডের ওই সদস্য আরও জানান, ‘ম্যাডাম’ হাসপাতালে থাকতে চান না। উনি বাসায় যেতে চাচ্ছেন। এ বয়সের একজন মানুষকে টানা হাসপাতালের বিছানায় থাকা ভীষণ যন্ত্রণার। চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করে বাসায় নেওয়া হলে তো আবার হাসপাতালে নিতে হবে। তাই বারবার আনা-নেওয়া উনার জন্য খুব ক্ষতি।
গতকাল শনিবার বোর্ডের বৈঠকের পর খালেদা জিয়ার কেবিনে চলাচল একেবারে সীমিত করা হয়েছে। কেবিনে প্রবেশের আগে নার্স ও স্টাফদেরও তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাইরে থেকে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আসলে দেশের বাইরে নিয়ে যত দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে, ততই তার জন্য মঙ্গল। দেশে যে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, তা দেওয়া হয়েছে। তার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে উন্নত সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এটি আমরা পরিবারকে বারবার অ্যাড্রেস করছি।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর পর ওইদিন তাকে হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার তার শরীরে রক্তক্ষরণ হয়। দীর্ঘদিন সিসিইউতে থাকার পর গত ৮ জানুয়ারি তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
সময় জার্নাল/এসএ