এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর গর্ভে জন্ম নেওয়া নবজাতক আব্দুল্লাহর স্থায়ী ঠিকানা মিলেছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা'র দ্বায়িত্ব ও উদ্যোগ গ্রহণের পর আব্দুল্লাহ ইসলামের স্থায়ী দায়িত্ব নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম-ফারজানা আক্তার দম্পতি।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানজিলা কবীর ত্রপা শিশুটিকে তুলে দেন রফিকুল ইসলাম-ফারজানা আক্তার দম্পতির কোলে। নিঃসন্তান রফিকুল ইসলাম একটি সন্তানের জন্য চারটি বিয়ে পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখা হয়নি। নিঃসন্তান ওই দম্পতি নবজাতক আব্দুল্লাহকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
অনেকেই আব্দুল্লাহকে দত্তক নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী নিবাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম-ফারজানা আক্তার দম্পতিকে ওই শিশুর লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাদ খান জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর থেকে রফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা তার দেখভাল করে আসছিলো। শিশুটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে রফিকুলকে দিয়ে শিশুটির নামে ১৩ শতাংশ জমি লিখে দেওয়া হয়। ওর শিক্ষার জন্য ৩ লাখ টাকা ১৫ বছর মেয়াদী স্থায়ী আমানত হিসাবে রাখা হয়। এসব শর্ত নিয়ে রফিকুলের সঙ্গে একটি চুক্তিবদ্ধ করে তারপর নবজাতকটিকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, নবজাতক শিশুটিকে দত্তক নিয়ে লালন পালন করার জন্য এলাকার বেশ কয়েকজন আবেদন করেন। রোববার উপজেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে সভা করা হয়। শিশুটির ভবিষ্যতের কথা ভেবে আবেদনের ভিত্তিতে অভিভাবক নির্ধারণ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, রফিককে অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব দিলেও শিশুটির প্রতি আমার দায়িত্ব শেষ হয়নি। আমি শিশুটির বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখবো। পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে তার পাশে থাকার চেষ্টা করবো।
প্রসঙ্গত, প্রায় দেড় মাস আগে উক্ত গ্রামের পদ্মাপাড়ে এলাকাবাসী অজ্ঞাত এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। পরে গর্ভবতী নারীকে পার্শ্ববতী মুনা মাস্টারের ছেলে শহীদ খানের বাড়ির একটি পরিত্যাক্ত ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেন। শুক্রবার সকালে ওই নারী পদ্মাপাড়ে ঘোরাফেরা করছিল। হঠাৎ প্রসব বেদনা উঠলে সে বিবস্ত্র অবস্থায় সেখান থেকে বসতি এলাকায় ছুটে আসে। এ সময় স্থানীয় নারীরা শহীদ খানের উক্ত পরিত্যাক্ত ঘরে নিয়ে তার প্রসব করান।
খবর শুনে দুর্গম পদ্মাপাড়ে ছুটে যান ইউএনও। তিনি নবজাতক শিশুসহ প্রসূতিকে স্থানীয় মহিলা সংরক্ষিত ইউপি সদস্য আছিয়া খাতুন ও ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. বাবুল মোল্যার হেফাজতে রাখেন।
সময় জার্নাল/এলআর