বুধবার, জানুয়ারী ২৬, ২০২২
মো. মাইদুল ইসলাম: তিতুমীরের নামে নামকরণ করা হলেও তার জন্মদিনে কোন আয়োজন দেখা যায় না কলেজটিতে। এ বছর করোনা প্রকোপ ঠেকাতে বন্ধ রয়েছে কলেজ। তবে অনলাইনে চলছে ক্লাস। কিন্তু তিতুমীরের জন্মদিনে অনলাইনেও কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এর আগে কখনো এই দিনে কোন আয়োজন করা হয়নি বলে জানা গেছে।
সরকারি তিতুমীর কলেজ, 'জিন্নাহ কলেজ' নামে ১৯৬৮ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কলেজটির নাম পরিবর্তন করে তিতুমীর কলেজ রাখা হয়। অথচ মীর নিসার আলী তিতুমীরের জন্মদিনে এই কলেজে নেই কোনও আয়োজন।
এ ব্যাপারে কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ ফেরদাউস খান বলেন, তিতুমীর স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহীদ। শোষিত মানুষের প্রেরণা তিনি। শোষকরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন? তাদের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম করা যায়-এটা আমাদের তিনিই শিখিয়েছেন । বৃটিশ বিরোধী বা পাকিস্তানের শোসনের বিরুদ্ধে সব আন্দোলন সংগ্রামে সাহস যুগিয়েছেন তিতুমীর। তার নাম অনুসারে কলেজের নামকরণ করায় আমরা গর্বিত। তার আজ জন্মদিন। কলেজের উচিৎ ছিল আজ কোন প্রোগ্রাম করার। নতুন প্রজন্মকে তার অবদান সম্পর্কে জানাতে। নইলে এরা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারবে না।
করোনার কারণে নতুন প্রজন্মকে জানাতে অনলাইনেও এর আয়োজন করা যেত। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কলেজের কোন আয়োজন আমার চোখে পড়েনি, যা খুবই দুঃখজনক। আমাদের অগ্রজ এবং দায়িত্বশীলদের বলতে চাই, আপনারা যদি নতুন প্রজন্মকে এমন গর্বিত ইতিহাস জানাতে ব্যর্থ হন। তাহলে আপনাদের এই ব্যর্থ ভবিষ্যতে দেশকে ভুল পথে নিতে পারে। আমি আশা করবো আগামীতে নতুন প্রজন্মকে তিতুমীরকে জানানোর ব্যবস্থা করবে। অনুজরা সঠিক ইতিহাস জানুক, আলোকিত দেশকে আলোকিত করুক জাতিকে প্রত্যাশা রইলো। সেই সাথে এই উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম শহীদ তিতুমীরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
এ বিষয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তালাত সুলতানা বলেন, এখন তো সরকারি বিধিনিষেধ চলছে আর ৬০% লোক নিয়ে কলেজ চলছে সবকিছু অনলাইনে তাই আজকের দিনে কোন আয়োজন করা হয়নি।
তার নামে কলেজ হলেও তার জন্মদিনে কোন আয়োজন কেন করা হয়না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা ঠিক জানিনা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আয়োজন করার কথা জানান তিনি।
জিন্নাহ কলেজ যেভাবে হলো তিতুমীর কলেজ
'জিন্নাহ কলেজ' নামে ১৯৬৮ সালে সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান রেডিও-টেলিভিশনে এক ভাষণে জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে জিন্নাহ কলেজ শাখার ছাত্র সংসদের প্রথম সহ-সভাপতি (ভিপি) সিরাজউদ্দৌলার নেতৃত্বে টিপু মুনশি ও শাহাবুদ্দিনসহ তৎকালীন কতিপয় ছাত্রনেতা প্রতিক্রিয়া হিসেবে জিন্নাহ্ কলেজের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেন। তখন আনিসুজ্জামান খোকন (জিন্নাহ কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক) জিন্নাহ কলেজের নাম 'তিতুমীর কলেজ' প্রস্তাব করেন। ২ মার্চ ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় জড়ো হলে সেখানে তৎকালীন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রবের মধ্যস্থতায় জিন্নাহ্ কলেজের নাম 'তিতুমীর কলেজ' হিসেবে চূড়ান্ত হয়। ঐ রাতেই 'তিতুমীর কলেজ' নামকরণের সাইনবোর্ড লেখা হয় এবং দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হয়। এলাকার কিছু যুবক "তিতুমীর"নামকরণের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করেন।
উল্লেখ্য, তিতুমীর ১৭৮২ সালের ২৭ জানুয়ারি ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার চাঁদপুর (মতান্তরে হায়দরপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
এমআই