শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

হাতীবান্ধায় নিপাহ ট্রাজেডির মাস ফেব্রুয়ারী, সচেতনতায় নেই প্রচারণা

রোববার, ফেব্রুয়ারী ৬, ২০২২
হাতীবান্ধায় নিপাহ ট্রাজেডির মাস ফেব্রুয়ারী, সচেতনতায় নেই প্রচারণা

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১ম সপ্তাহে হঠাৎ জ্বরে মানুষ আক্রন্ত হওয়ার তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ঢলে পড়তে থাকেন মৃত্যুর কোলে। একাধিক বাবা মা হারিয়েছেন তাদের অবুঝ সন্তানকে। হাতের মেহেদির রঙ শুকানোর আগে হতভাগিনী হারিয়েছেন তার স্বামীকে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে মরদেহের মিছিলে যুক্ত হয়েছিল অবুঝ শিশু, সদ্য বিবাহিত যুবক ও নারীরা। একে একে চির বিদায় নিয়ে পৃথীবি থেকে চলে যান ২৪ জন। অনেকে বলেন চির বিদায় নেওয়ার সংখ্যা ২৪ এর চেয়ে বেশী হবে কারণ সঠিক হিসাব কেউ রাখেনি সে সময়।। হঠাৎ শুরু হয়েছিল এক অচেনা/অজানা রোগের আক্রমন। যে রোগের উপসর্গ ছিল “জ্বর”। হতাশ হয়ে এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় আত্বীয় স্বজনের বাড়ী গিয়ে আশ্রয় নেয়।  

বিভিন্ন সুত্রে জানাগেছে, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ১ম সপ্তাহে হঠাৎ করে দেখা যায় অজানা ‘জ্বর’। জ্বরে সংক্রামিত হওয়ার তিন থেকে চার দিনের মধ্যে আক্রান্তরা ঢলে পড়তে থাকেন মৃত্যুর কোলে। হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই এ অজানা রোগে তেমন কোন চিকিৎসা। পরে ঢাকা থেকে (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞরা এসে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে জানান এটি আসলে এনকেফালাইটিস। যা নিপাহ ভাইরাস হিসেবে পরিচিত। ভাইরাসটি বাঁদুড় থেকে ছড়িয়েছে। খেজুড়ের রস খেয়ে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণে। যদিও সরকারিভাবে এ মৃত্যুর সংখ্যা ১৮ জন বলে দাবি করা হয়। 

তবে এলাকাবাসীর সুত্রে জানাগেছে, মাত্র কয়েকদিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিশু, নারীসহ বিভিন্ন বয়সী ২৪ জনেরও বেশী প্রাণ হারান। 

হাতীবান্ধা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক অশোক ঘোষ-তাপসী ঘোষ দম্পতি ২০১১ সালের এই সময়ে নিপা ভাইরাসের কারণে হারিয়েছিলেন তাদের দুই সন্তানকে। অপরদিকে, দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের জাহাঙ্গীর (বিবাহ রেজিষ্ট্রি:কাজী) তিনিও হারিয়েছিলেন তার ছোট্ট দুই মেয়ে জয়ী ও সর্বাকে। বিয়ের ১১ মাস পর নিপাহ ভাইরাসের আক্রমণে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ছেড়ে চির বিদায় নেন আজিজুল (২৭), হাতের মেহেদির রঙ শুকানোর আগে হতভাগিনী লিপি বেগম স্বামীকে হারিয়ে শোকাহত। কিছুদিন পর লিপির কোলে ফুটফুটে এক শিশুর জন্ম হয় ঠিকই কিন্তু বাবা নামক সেই প্রিয় ডাক অধরাই থেকে গেল তার। ভাইরাস আক্রমন বৃদ্ধির কারনে কয়েক দিনের মধ্যে এলাকায় হতাশা বৃদ্ধি,নিরাপদ আশ্রয় এর আশায় নিজ নিজ বাড়ী ছাড়তে শুরু করেন অনেকে। শুরু হয় ঘোষনা বিহীন জনশুন্য শহর। হাট বাজার,শহর বন্দরের প্রায় সকল দোকান বন্ধ, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ীর বাহীরে কেউ বের হয়না। দীর্ঘ ১১ বছর পরে ২০১১ সালের সেই ফেব্রুয়ারী মাস- আবারো ফিরে এলেও ঐসব প্রাণ হানির কথা মনে করে দেয় এলাকাবাসীর। তাই আপনজনদের হাড়ানোর ব্যথায় আজও ব্যথিত স্বজনেরা।

সূত্র মতে, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারীতে হাতীবান্ধায় আসা রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) বিশেষজ্ঞ দল জানিয়েছিলেন, যেহেতু নিপা ভাইরাসের বাহক বাঁদুড় তাই কোনো এলাকায় একবার এ রোগ দেখা দিলে পরবর্তী কয়েকটি বছর শীতের মৌসুমে রোগটি পুনরায় ফিরে আসার আশঙ্কা থাকে। তাই স্বাস্থ্য সচেতনতাই এই ঘাতক নিপা থেকে রক্ষার একমাত্র পথ বলে জানান বিশেষজ্ঞ দলটি। সেই থেকে পরবর্তী বছরগুলোতেও বেশ প্রচার-প্রচারণা হওয়ায় জনসাধারণ মোটামুটি সর্তক হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এ বছর স্বাস্থ্য সচেতনতায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রচার-প্রচারণা লক্ষ করা যায়নি।

মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: নাঈম হাসান নয়ন এর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল