বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

করোনা রোগীদের ৮৮ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত : বিএসএমএমইউ’র গবেষণা

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ৯, ২০২২
করোনা রোগীদের ৮৮ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত : বিএসএমএমইউ’র গবেষণা

সময় জার্নাল প্রতিবেদক :

বাংলাদেশে বর্তমানে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের ৮৮ শতাংশই (ওপিডি) ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা আক্রান্ত। ভর্তিকৃত রোগীদের ৬৫ শতাংশ ওমিক্রন এবং ৩৫ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। ওপিডি ও ভর্তিকৃত রোগীদের ৮২ শতাংশ ওমিক্রনে আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯-এর সর্বমোট ৯৩৭টি জেনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার প্রকাশিত ফলাফল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। গবেষণার প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, বর্তমানে ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট BA.1, BA.1.1, BA.2  এই ৩টি ধরণ পাওয়া গেছে। 

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্যাম্পলের সংখ্যা ১৬৮টি। ১৬৮টি স্যাম্পলের মধ্যে ওপিডির স্যাম্পলের সংখ্যা  ১২০টি এবং ভর্তিকৃত রোগীদের স্যাম্পল সংখ্যা ৪৮টি। ওপিডির স্যাম্পলের জেনোম সিকোয়েন্সিং করে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের ৮৮ শতাংশ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ১২ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বর্তমানে ভর্তিকৃত রোগীদের ৬৫ শতাংশ ওমিক্রন এবং ৩৫ শতাংশ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া গেছে। ওপিডি ও ভর্তিকৃত রোগীদের ৮২ শতাংশ ওমিক্রনে আক্রান্ত। বর্তমানে ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট BA.1, BA.1.1, BA.2  এই ৩টি ধরণ পাওয়া গেছে এবং BA.2 বেশি সংক্রামক। আজ ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর জেনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্ট-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক (সুপারভাইজার)-মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এই তথ্য জানান। উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে গত ৮ জানুয়ারি ২০২২ইং পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল। 

ফলাফল প্রকাশকালে উপাচার্য অধ্যাপক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যেক করোনা ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট বিপদজনক এবং তা মারাত্মক অসুস্থতা এমনকি মৃত্যুও কারণও হতে পারে। পাশাপাশি ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনের আমাদের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। তাই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ও টিকা গ্রহণ করতে হবে।

উপাচার্য আরও বলেন, ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট-এর চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট-এ অনেক বেশি সংক্রামক। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট জেনোমের ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এর চেয়ে বেশি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশির ভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিন-এর উপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়ে থাকে। স্পাইক প্রোটিন-এর গঠনগত বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমনের সম্ভাবনা থেকে যায়।

অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ আরও জানান, কোভিড-১৯ এর জেনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার উদ্দেশ্য SARS-CoV-2--এর জেনোমের গঠন উন্মোচন ও পরিবর্তনের ধরণ এবং বৈশ্বিক কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনোমের সাথে এর আন্তঃসর্ম্পক বের করা, ভাইরাসের বিবর্তনীয় সম্পর্ক, রোগের উপসর্গ, রোগের প্রখরতা, তুলনামূলক হাসপাতাল অবস্থানের মেয়াদকাল এবং বাংলাদেশী কোভিড-১৯ জেনোম ডাটাবেস তৈরি করা। আন্তর্জাতিক সিকোয়েন্সিং ডাটাবেজ জিন ব্যাঙ্ক এ বিএসএমএমইউ-এর ৯৩৭টি ভাইরাল জেনোম জমা দেওয়া হয়েছে। জেনোমিক ডাটাবেজ বিএসএমএমইউ-এর এই গবেষণার ফলাফল ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রেও বৈজ্ঞানিক অবদানের একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। 

সংবাদ সম্মেলনে সম্মানিত উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মোঃ জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, প্রধান গবেষক অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও জেনেটিক্স এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ক অধ্যাপক প্রধান গবেষক ডা. লায়লা আনজুমান বানু প্রমুখ  উপস্থিত ছিলেন।  

প্রধান গবেষক ডা. লায়লা আনজুমান বানু জানান, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এখন বাংলাদেশের কোভিড-১৯ সংক্রমনের প্রধান উৎস যেটি কিছুদিন পূর্বে ডেলটা ছিলো। ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেয়া ছিলো। এতে এটা প্রমাণ করে যে, ভ্যারিয়েন্ট নয় টিকা নেওয়ার জন্য রোগের প্রখরতা কম হয়েছে। তৃতীয়বারের মত আক্রান্ত হয়েছে এরকম রোগীরও ওমিক্রন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তিরোগী জিনোম সিকোয়েন্স করে ৬৫% রোগীতে ওমিক্রন এবং ৩৫% রোগীতে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। মৃদু উপসর্গের কারণে ওমিক্রন রোগীদের থেকে দ্রুত সংক্রমন প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট থেকে কম মাথাব্যাথা এবং সর্দির মত উপসর্গ হয়। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে কম। এই গবেষণা জেনোমিক ডাটাবেজ থেকে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে সম্ভবনা সৃষ্টি করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,  গত ২৯ জুন ২০২১ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত সারা দেশব্যাপী রোগীদের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় বাংলাদেশের সকল বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়েছে। গবেষণায় মোট ৯৩৭ কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যাযোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হয় এবং জেনোম সিকোয়েন্সিং-এর সাথে রোগীর তথ্য উপাত্তের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। 

বিএসএমএমইউ-এর গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০ থেকে ৫৯ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা বেশি। শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমন পাওয়া গেছে। পুরুষ ও নারীদের আক্রান্তের হার প্রায় সমান সংখ্যক ৪৯% পুরুষ ৫১% নারী। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কো-মরবিডিটি রয়েছে, যেমন- ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তাদের রোগের প্রকটতা বেশি। 

কোভিড-১৯-এর জেনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় জুলাই ২০২১ এ দেখা যায় যে, মোট সংক্রমনের প্রায় ৯৮ শতাংশ ছিল ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ১ শতাংশ হয়েছিল সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমন, ১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছিলাম মরিসাস ভ্যারিয়েন্ট বা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। আগস্ট ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২১-এর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্স এ প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী ৯৯.৩১% ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন - আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পল এ সনাক্ত হয় 20B  ভ্যারিয়েন্ট - যা SARS-CoV-2--এর একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট। আমাদের গবেষণায় প্রধাণত ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট এর মধ্যে ডেলটার ৮ টি সাব-ভ্যারিয়েন্ট পর্যবেক্ষিত হয়েছে। সেগুলো হলো- AY.122, AY.122.1, AY.131, AY.26, AY.29, AY.30, AY.39, AY.4।

৮ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে ৮ জানুয়ারি ২০২২ এ পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছিল। এ সময় ওমিক্রনের মাত্র একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট BA.1 পেয়েছিলাম এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। সেসময়ে আমরা পরবর্তী মাসে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশংকা ব্যক্ত করেছিলাম। 

৯ জানুয়ারী ২০২২ তারিখ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২২ তারিখ পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি রোগী এবং বর্হিবিভাগ রোগীর মধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ৮২ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। এই সময়ে ওমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট BA.1, BA.1.1, BA.2  (৩টি ধরণ) পরিলক্ষিত হয়েছে এবং WHO-এর মতে BA.2 বেশি সংক্রামক। 

সময় জার্নাল/ইএইচ


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল