শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ভয় দূর করতেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছি : মুসকান

বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারী ১০, ২০২২
ভয় দূর করতেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলেছি : মুসকান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

ভয় দূর করতেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলার কথা জানিয়েছেন ভারতের কর্নাটকের আলোচিত মুসলিম কলেজছাত্রী মুসকান। বিবিসি হিন্দি সার্ভিসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ছেলেগুলো আমাকে এমনভাবে অনুসরণ করছিল যেন তারা সবাই আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা ছিল ৪০ জনের মতো। আমি ছিলাম একা। কারো মধ্যে আমি মনুষ্যত্ব আমি লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করতে লাগল। কারো কারো হাতে ছিল কমলা রঙের স্কার্ফ।
আর আমার মুখের সামনে এসে স্কার্ফ দোলাতে দোলাতে বলতে লাগলো - জয় শ্রী রাম, চলে যাও, বোরকা খুলে ফেলো। তাই আমি বললাম, আল্লাহু আকবার। কারণ আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেলে আমি আল্লাহর নাম নিই। আল্লাহর নাম নিলেই আমার সাহস বেড়ে যায়।

পাঠক, তরুণীর প্রতিবাদী কন্ঠে আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার। আমরা সকলেই অবগত আছি যে, দুই দিনে আগে ভারতের কলেজছাত্রীর একটি ভিডিও স্যোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে।

তাতে দেখা গেছে, মুসকান নামে একজন শিক্ষার্থী বোরখা ও হিজাব পড়ে কলেজে প্রবেশ করছিলেন কিন্তু বেশ কিছু ছেলে তার দিকে 'জয় শ্রী রাম' 'জয় শ্রী রাম' ধ্বনি তুলে আক্রমনাত্বক আচরণ করছিলেন এ অবস্থায় মুসকান একটা একটা মেয়ে ভয় না পেয়ে সাহসের সাথে উগ্রবাদী হিন্দু ছেলেদের প্রতি আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানান।

ওই ঘটনার পুরো ভিডিওটি ইতিমধ্যে আলোচনার ঝড় তুলেছে।

কর্ণাটকের মান্ডা জেলার একটি প্রি-ইউনিভার্সিটি কলেজের বি.কম দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর নাম মুসকান খান। এ ঘটনা নিয়ে বিবিসি হিন্দি সার্ভিসের মুখোমুখি হয়েছেন ওই ছাত্রী। সেটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। 

প্রশ্ন করা হয় কী হয়েছিল সেদিন আপনার সাথে?

মুসকান: আমি আগে থেকে কিছুই জানতাম না। সবসময় যেভাবে কলেজে যাই, সেভাবেই গেলাম। বাইরে থেকে আসা একদল লোক সেখানে বললো যে বোরকা পরে কলেজের ভেতরে যাবে না। কলেজে যেতে হলে বোরকা ও হিজাব খুলে ভেতরে যেতে হবে। তুমি যদি বোরকা পরে থাকতে চাও, তবে বাড়ি ফিরে যাও।

আমি ভিতরে এলাম। ভেবেছিলাম চুপচাপ চলে যাব। কিন্তু সেখানে অনেক শ্লোগান উঠছিল। ‘বোরকা কাদ’, ‘জয় শ্রী রাম’-এর মতো স্লোগান উঠছিল।
আমি ভেবেছিলাম আমি ক্লাসে যাব, কিন্তু ছেলেগুলো আমাকে এমনভাবে অনুসরণ করছিল যেন তারা সবাই আমাকে আক্রমণের চেষ্টা করছে। তারা ছিল ৪০ জনের মতো। আমি ছিলাম একা। কারো মধ্যে আমি মনুষ্যত্ব আমি লক্ষ্য করিনি। হঠাৎ তারা আমার কাছে এসে চিৎকার করতে লাগল। কারো কারো হাতে ছিল কমলা রঙের স্কার্ফ।
আর আমার মুখের সামনে এসে স্কার্ফ দোলাতে দোলাতে বলতে লাগলো - জয় শ্রী রাম, চলে যাও, বোরকা খুলে ফেলো।

আপনি কতদিন ধরে হিজাব পরছেন?

প্রি-ইউনিভার্সিটিতে যাওয়ার পর থেকে আমি হিজাব পরে আসছি। কলেজে কোনো সমস্যা হয়নি। সবকিছু আগের মতোই ছিল। আমরা হিজাব পড়ে ক্লাসে যাচ্ছিলাম।
আমরা বোরকা পরি না। শুধু হিজাব পরি। চুল আড়াল করে ক্লাসে যাই।
কিন্তু ওই লোকেরা আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতেও দিচ্ছিল না। তারা অনেক বহিরাগত ছিল এবং কলেজের ছাত্র ছিল কম। বেশিরভাগই ছিল বহিরাগত।

ওই লোকগুলো কী বলছিল?

তারা বলছিলেন, বোরকা খুলে ফেল, না হলে কলেজে যেতে পারবে না। তারা সবাই আমাকে ভয় দেখাচ্ছিল।
আমার সামনে চার মেয়ে এসেছিল। গেট তালাবদ্ধ ছিল। তারপর কোনোমতে প্রিন্সিপাল এলেন। অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা আমাকে রক্ষা করেন। ছেলেরা তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভেতরে গিয়েছিল। কিন্তু বেরিয়ে এসে একই কাজ করল। আমি কাঁদিনি। আমি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।

আপনি কী বললেন…?

আমি বললাম, আল্লাহু আকবার। কারণ আমি ভয় পেয়েছিলাম। ভয় পেলে আমি আল্লাহর নাম নিই। আল্লাহর নাম নিলেই আমার সাহস বেড়ে যায়।

কলেজে আমাদের প্রিন্সিপ্যাল নিজেই বলেছিলেন যে তুমি হিজাব পরে আসতে পার। এর বাইরের লোকগুলো এসে এমন চমক তৈরি করছে। তিনি নিজেই বললেন, আগে যেভাবে আসতে, এসো। কোনো সমস্যা নেই।

কার হিজাব পরা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

হ্যাঁ, আমার এটি পরিধান করা উচিত।

এ বিষয়ে আপত্তি থাকলে আপনার মতামত কী হবে?

ভারতের সংবিধানে আমার বিশ্বাস আছে। এমনভাবে করে সংবিধানের বিপক্ষে যাব না। ইনশাআল্লাহ, আমরা হাইকোর্টের আদেশের অপেক্ষায় আছি।

এ মুহূর্তে যে হিজাব বনাম গেরুয়া বিতর্ক চলছে তা কি অন্যান্য ছাত্রদের সাথে আপনার সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে?

আমি এখানে হিন্দু বা মুসলিম কোন জাতপাত ছড়াচ্ছি না। আমি শুধু আমার শিক্ষার জন্য, আমার অধিকারের জন্য দাঁড়িয়েছি। আমরা হিজাব পরছি বলে আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
 
আমরা বছরের পর বছর ধরে এটি পরছি। এটি নতুন কিছু নয়। কিন্তু এ লোকগুলো এমনভাবে বলছে যে তুমি যদি এটা পরে আসো, তাহলে আমরা এটা (গেরুয়া) পরে আসব।

ছেলেরা আমার কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে বলছে, সে যদি বোরকা পরে আসে, তাহলে আমরাও এসব সরাবো না (গেরুয়া, গামছা-পাতা ইত্যাদি)। আমাদের কোন সমস্যা নেই। তারা যেকোন ভাবে আসতে পারে। আমাদের শুধু হিজাব পরার অনুমতি দরকার। যেভাবেই তারা আসুক না কেন, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।

আমাদের শুধু দরকার শিক্ষা। আমাদের অধ্যক্ষ আমাদের সঙ্গে আছেন, শিক্ষকরা আমাদের সাথে আছেন। বাইরে থেকে এসে কিছু লোক কেবল নজর কাড়ার চেষ্টা করছে। আর সংবিধানের প্রতি আমাদের আস্থা আছে। হাইকোর্ট থেকে নেতিবাচক কিছুই আসবে না।

সময় জার্নাল/এসএম


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল