কুবি প্রতিনিধি: পদের ক্ষমতাবলে নিজ গ্রুপের শিক্ষকদেরকে নানা অবৈধ সুবিধা দেয়া, অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষকদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করা ও বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকা, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ব্যাপারে অশালীন মন্তব্য ও দুর্ব্যবহার করা, বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের বেশি সুবিধা অপরদিকে আওয়ামীপন্থীদের অবহেলা ও বঞ্চিত করাসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আবু তাহেরের বিরুদ্ধে।
দিনকে দিন এমন নানা অভিযোগের পাহাড় জমলেও যেন ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়েছেন তিনি। হয়নি কোনো তদন্ত, নেই কোনো ব্যবস্থা।
চার শিক্ষককে চোর সম্বোধন: রেজিস্ট্রার ড. আবু তাহেরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষকে 'চোর' বলে সম্বোধন করার অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষকদেরকে নিয়ে এমন মন্তব্য করার প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, আমি কোন প্রসঙ্গে কার সাথে কি বলেছি সেটা আমি বলতে পারবো না। আর আদৌ বলেছি কি না সেটা আমার মনে পড়ছে না।
পদোন্নতিতে পক্ষপাতিত্ব: বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি, ইংরেজি ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার, ড. বনানী বিশ্বাস ও ড. মিজানুর রহমান আবেদনের ছয় মাস পরে পদোন্নতি পান। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আইনুল হক পদোন্নতি পেয়েছেন আবেদনের তিন মাস পর। তাদের অভিযোগ রেজিস্ট্রার তার পক্ষের শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা দেওয়ার জন্য তাদের পদোন্নতি বোর্ড দেড়ি করে ডেকেছেন।
অন্যদিকে পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়ার তিন দিনের মাথায় অনিয়ম করে গত বছরের ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিন (জাতীয় ছুটি) প্ল্যানিং করে শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামিমুল ইসলামের স্ত্রী অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাফিয়া ইসলাম লিনা এবং লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক রুহুল আমিনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। তারা দু্জনেই রেজিস্ট্রারের পক্ষের শিক্ষক তাই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে পদোন্নতি পায় বলে অভিযোগ উঠে।
রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতি: রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. মো. আবু তাহের সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে গড়ে দুই-তিনদিন করে উপস্থিত থাকেন বলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের অভিযোগ। রেজিস্ট্রারের বাসা ঢাকায় এবং তার পরিবার সেখানেই থাকে। প্রশাসনিক সকল কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের রেজিস্ট্রার অফিসের উপর নির্ভর করতে হয়। তার অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষাছুটিসহ বিভিন্ন ধরনের ছুটি, অনাপত্তিপত্র কিংবা যেকোনো ধরনের অনুমতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরীজীবীরা দীর্ঘসূত্রিতার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে ঢাকা যাতায়াত: রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করছেন। তিনি তার ঢাকার বাসায় যাওয়া-আসার জন্য নিয়মিত এ গাড়িটিই ব্যবহার করেন। অথচ বিশ্ববিদ্যায়ের আইনে সুস্পষ্টকরে বলা আছে, রেজিস্ট্রার হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বক্ষণিক আবাসিক কর্মকর্তা। কিন্তু এ আইনটি তিনি অমান্য করেই চলছেন।
সার্বক্ষণিক আবাসিক কর্মকর্তা হিসেবে থাকার কথা থাকলেও ঢাকা থাকার বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, আমি ঢাকা থাকি সেটা জেনেই আমাকে আগের উপাচার্য স্যার নিয়োগ দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উনাকে গাড়ি দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক কর্মকর্তা হিসেবে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি দিয়ে ঢাকা আসা-যাওয়া করেছেন এ বিষয়ে উপাচার্য মহোদয়কে (সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপন ড. এমরান কবির চৌধুরী) বারবার অবহিত করেছি, কিন্তু তিনি এ বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেননি।
রেজিস্ট্রার অফিস যেনো গ্রুপের কার্যালয়: রেজিস্ট্রার ড. তাহের যে কয়দিন অফিস করেন সে কয়দিন তার পক্ষের শিক্ষকেরা তার অফিসে গিয়ে বসে থাকেন। ওই কয়দিন তার কার্যালয়কে তার পক্ষের লোকদের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, রেজিস্ট্রারের ব্যাপারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন করেছে। তারাও অনেক অভিযোগ তুলেছে। এখন রেজিস্ট্রারের বিষয়ে যদি কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার থাকে সেটা উপাচার্য স্যার নিবেন। তবে উপাচার্য স্যার যেহেতু নতুন আসছে তাই উনাকে একটু সময় দেয়া দরকার।
সময় জার্নাল/আরইউ