নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৫ দিন পিছিয়ে যাওয়ার পরেও বইমেলা শুরু হচ্ছে অগোছালো দায়সারা আয়োজন নিয়ে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত বইমেলার স্টল নির্মাণের জন্য যে বাঁশের কাঠামো সেটাই শেষ হয়নি। এরপর প্রকাশকরা সেখানে স্টলের কাজ ধরবেন। ফলে ধরে নেওয়াই যায় আজ মেলা যখন শুরু হবে তখনো সব স্টল নির্মাণ শেষ করা যাবে না।
এদিকে, মেলার রাস্তারগুলোতে ইট বিছানোর কাজও শেষ হয়নি। শেষ হয়নি মেলার সীমানা দেওয়াল নির্মাণকাজও। এই সীমানার ওপরেই মেলার নিরাপত্তার বিষয়টি নির্ভরশীল। প্রবেশ পথ নির্মাণও এখনো শেষ হয়নি। আর লিটলম্যাগ চত্বরের তো কাঠামো নির্মাণই শেষ হয়নি। এমনি অগোছালো ও দায়সারাভাবেই আজ পর্দা উঠবে বইমেলার। আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলে মাঠে গড়াবে অমর একুশে বইমেলা।
আজ মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান করা হবে। মেলা চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে করোনা সংক্রমণ কমে এলে মেলার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হতে পারে।
যেখানে পহেলা ফেব্রুয়ারিতেই মেলা গুছিয়ে উঠে তাহলে ১৫ দিন পরে শুরু হওয়ার পরেও কেন মেলা এত দিন গোছানো হয়নি। এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি মেলা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের উত্তর, মেলা হয় কি হয় না এর জন্য কাজ ধীরগতিতে চলেছে।
এমনিতেই মেলার সময় অর্ধেকে নেমে আসায় অনেক প্রকাশকই মেলায় অংশ নিতে চাইছেন না। তারা বলছেন, মেলার খরচই উঠবে না। গত বছরও মেলায় অংশ নিয়ে তাদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যদিও বইমেলার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, যেহেতু করোনা পরিস্থিতি নিম্নমুখী ফলে মেলার সময় বাড়তে পারে। সরাসরি তিনি কোনো উত্তর না দিলেও বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, বইমেলার সময়সীমা ১২ মার্চ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বললেন, এমন অগোছালো মেলা গত ২০ বছরে দেখা যায়নি। একই সুর আগামীর প্রকাশক ওসমান গণির কণ্ঠে। তিনি বললেন, মেলা শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগেও মেলা প্রাঙ্গণ প্রস্তুত না হওয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এমন অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের বইমেলার প্রতি আগ্রহ কমে যাবে।
এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, মেলার প্রস্তুতি নিতেই দেরি করেছি। কারণ, মেলা শুরুর দিনক্ষণ নিয়ে আমরা দ্বিধায় ছিলাম। তবে আশা করছি, উদ্বোধনের আগেই মেলা প্রাঙ্গণ সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত হবে।
এদিকে, গতকাল সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে বইমেলা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলা একাডেমির পরিচালক ও বইমেলার সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ, বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান, বইমেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বিকাশ-এর চিফ মার্কেটিং অফিসার নহবত আলী প্রমুখ।
মেলার সার্বিক আয়োজনের বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, এবারের মেলায় প্রবেশের জন্য প্রত্যেককে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। মেলায় প্রবেশের আগে দর্শনার্থীদের স্যানিটাইজ করা হবে। তবে, দর্শনার্থীদের কোনো টিকা সনদ দেখাতে হবে না। মেলার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও স্টলের মালিক ও কর্মীদের করোনার ভ্যাকসিন প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
তিনি জানান, এবারের চারটি বিষয়কে মাথায় রেখে আয়োজন করা হচ্ছে। সেগুলো হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ, স্বাধীনতার সুর্বণজয়ন্তী, ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের ৫০ বছর।
এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রধান অংশে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চারটি প্রবেশ পথ ও তিনটি বের হওয়ার পথ থাকবে। বইমেলার প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকা জুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এসব আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বইমেলা ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত ৮টা ৩০ মিনিটের পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এমআই