সময় জার্নাল ডেস্ক: আজ মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও মহান ভাষা শহীদ দিবস। মাতৃভাষা অধিকার আন্দোলনের ৭০ বছর পূর্ণ হলো এ বছর। জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ভাষা শহীদদের স্মরণে যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালিত হবে।
রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
মাতৃভাষার জন্য রক্ত ও জীবন দেওয়ার ইতিহাস জ্বলজ্বল করছে। এই অনন্য ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হয় এ আওয়াজ- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
১৯৫২ সালের এদিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলন করছিল। পাকিস্তানি দুঃশাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে বাঙালি জাতিসত্তা বিনির্মাণের প্রথম সোপান এই একুশ।
রাষ্ট্রভাষা উর্দু ঘোষণা করা হলে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে পূর্ববাংলার ছাত্র-জনতা। রাজপথে নেমে আসে তারা। সেদিন চেতনায় উদ্বুদ্ধ একটি জাতিকে স্তিমিত করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ছাত্র-জনতার এ বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালায়। শহীদ হয়- সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক।
এর আগে তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে সর্ব প্রথম ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এর চরম প্রকাশ ঘটে। ওইদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর নির্বিকারে গুলি চালায়।
প্রতিবাদের লড়াইয়ে সর্বপ্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলার ছাত্র সমাজ এ ঘোষণার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে ঢাকার রাজপথে। রাষ্ট্রভাষার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখার কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবরণ করতে হয়।
ঢাকার রাজপথ ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়। পুলিশের গুলিতে রঞ্জিত হয় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অগণিত শহীদের রক্তে। মায়ের ভাষার অধিকার ও রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিলবীর বাঙালি জাতির লড়াই-সংগ্রাম আর বীরত্বের গৌরবগাঁথা।
আজ শহীদের রক্তে রঞ্জিত অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতি হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠা, আত্মবিকাশ ও আত্ম বিশ্লেষণের দিন।
কারণ বায়ান্ন’র অমর একুশের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ১৯৭১ সালে মুক্ত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, প্রিয় বাংলাদেশ।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।
দিবসটির প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
একুশে ফেব্রুয়ারি শোকাবহ হলেও এর যে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় তা পৃথিবীর বুকে অনন্য। কারণ বিশ্বে এ যাবতকালে একমাত্র বাঙালি জাতিই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ছুটির দিন। এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচি
একুশে ফেব্রুয়ারিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস’ হিসেবে উদযাপন উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অবদানের বিষয়টি উপস্থাপন করার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনসমূহে ২১শে ফেব্রুয়ারি সঠিক নিয়মে, সঠিক রঙ ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোও যথাযথ কর্মসূচি নেবে।
২২ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সকল কর্মসূচি যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সর্বস্তরের নেতাকর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়াও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনিস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শিশু একাডেমিসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ।
বাদ জোহর অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সকল হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত/প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
এমআই