স্পোর্টস ডেস্ক : নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে টাইগারদের হারের সংখ্যাটা সুধু বাড়ছেই। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিও অনায়াসে জিতে আবারও সিরিজ জয় নিশ্চিত করল নিউ জিল্যান্ড। এদিন না বোলিংয়ে, না ব্যাটিংয়ে কোন অংশেই ফিনিশিং একদমই ভালো হলো না। সাকিব, তামিম ,মুশফিকদের অনুপুস্থিতিতে তরুণদের সুযোগ ছিল নিজেদের প্রমাণের। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট বলে আশাও দেখেছিলেন অনেকে কিন্তু এখানেও ব্যর্থতার চক্র থেকে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ দল।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে নিউ জিল্যান্ডের জয় ২৮ রানে। নিয়মিত খেলোয়াড়দের বেশ কজনকে ছাড়া খেলতে নামা দলটি তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে।
নিউ জিল্যান্ড ইনিংসে দুই দফায় বিঘ্ন ঘটে বৃষ্টিতে। প্রথমবার খেলা বন্ধ থাকে ২৫ মিনিট। পরেরবার বৃষ্টি নামলে সেখানেই থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস। ১৭.৫ ওভারে নিউ জিল্যান্ডের রান ছিল ৫ উইকেটে ১৭৩।
বাংলাদেশ পায় ১৬ ওভারে ১৭০ রানের লক্ষ্য। সৌম্যর ফিফটির পর দল করতে পারে কেবল ১৪২ রান। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ঝড়ো ফিফটিতে কিছুটা সময় ছড়াল উত্তেজনা ছড়ালেও ম্যাচের ফলাফল কিউইদের পক্ষেই গেছে।
নেপিয়ারের ম্যাকলিন পার্কে টস জিতে ফিল্ডিং নেন মাহমুদউল্লাহ। মার্টিন গাপটিল ও ফিন অ্যালেন নিউ জিল্যান্ডকে এনে দেন উড়ন্ত সূচনা। অভিষেকে ‘গোল্ডেন ডাক’-এর স্বাদ পাওয়া অ্যালেন রানের খাতা খোলেন রিভার্স সুইপে বাউন্ডারি মেরে।
মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় এই ম্যাচে খেলা তাসকিন আহমেদের হাত ধরে আসে প্রথম সাফল্য। এর আগেই অবশ্য দেখা গেছে সফরে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিয়মিত ঘটনা- ক্যাচ হাতছাড়া।
তাসকিনকে ছক্কায় ওড়ানোর পরের বলেই ক্যাচ দেন অ্যালেন। অনেক উঁচুতে উঠে যাওয়া ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। চড়া মাশুল অবশ্য দিতে হয়নি। ওভারের শেষ বলে আবার আকাশে তুলে দিয়ে স্কয়ার লেগে মোহাম্মদ নাঈম শেখের হাতে ধরা পড়েন অ্যালেন (১০ বলে ১৭)।
সফরে যার বলে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ পড়েছে, তিনিই দেখান ক্যাচ কীভাবে মুঠোয় নিতে হয়। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে লেগ স্টাম্পে ফুল লেংথ বলে ব্যাট চালান গাপটিল। শর্ট ফাইন লেগে বাঁ দিকে লাফিয়ে অবিশ্বাস্য ক্ষীপ্রতায় এক হাতে বল মুঠোবন্দি করেন তাসকিন।
ফিল্ডারও বিশ্বাস করতে পারছিলেন এই ক্যাচ তিনি ধরেছেন, বিশ্বাস হচ্ছিল না ব্যাটসম্যান গাপটিলেরও। আরও একবার ভালো শুরুটা বড় করতে ব্যর্থ হলেন তিনি (১৮ বলে ২১)।
দারুণ ছন্দে থাকা ডেভন কনওয়ে এবার যেতে পারেননি বেশি দূর। শরিফুল ইসলামের একটু বাড়তি লাফানো বলে পুল করে ধরা পড়েন মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে। আগের ম্যাচে দুঃস্বপ্নের অভিষেকের পর তরুণ বাঁহাতি পেসারের এটি প্রথম উইকেট।
মেহেদি হাসানের বল বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় স্টাম্পড হয়ে ফিরেন উইল ইয়াং। অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার পরে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে দ্রুত বিদায় করেন মার্ক চাপম্যানকে।
নিউ জিল্যান্ড ইনিংসে দুই দফায় বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। দুই বৃষ্টির মাঝের সময়ে খেলা হয় ৫.৩ ওভার নিউ জিল্যান্ড যোগ করে ৭১ রান। গ্লেন ফিলিপস ও ড্যারিল মিচেলকে থামানোর পথ যেন পাচ্ছিলেন না বাংলাদেশের বোলাররা।
রানের জোয়ারের মধ্যেই আসে বৃষ্টি। এবার লম্বা সময় বন্ধ থাকে খেলা। স্বাগতিকদের ইনিংসও শেষ হয়ে যায় সেখানেই।
৬ চারে ১৬ বলে ৩৪ রান করেন মিচেল। ৩১ বলে দুই ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫৮ রান করেন ফিলিপস। মাত্র ২৭ বলে তারা গড়েন ৬২ রানের জুটি।
দারুণ বোলিংয়ে ৩ ওভারে ১৬ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন শরিফুল। ৪ ওভারে কেবল ২৫ রান দেন নাসুম আহমেদ। খরুচে ছিলেন বাকি তিন বোলার।
বাংলাদেশের রান তাড়ার শুরুতে নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের অফিসিয়াল টুইটার পাতায় বলা হয়, ১৬ ওভারের লক্ষ্য ১৪৮। ধারাভাষ্যকাররাও বলছিলেন একই লক্ষ্য, তবে নিশ্চিত ছিলেন না তারাও। এটি নিয়ে সংশয়েই দ্বিতীয় ওভারের মাঝপথে কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে খেলা। পরে ১৬ ওভারে ১৭০ রানের লক্ষ্য পায় সফরকারীরা।
সেই ওভারেই লিটন দাসকে হারায় বাংলাদেশ। হামিশ বেনেটকে ঠিক মতো পুল করতে না পেরে ফিলিপসের হাতে ধরা পড়েন লিটন।
আগের ম্যাচে ঝড় তোলা নাঈম পারেননি দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দিতে। তাই জোর ছিল না পাওয়ার প্লেতে। বাংলাদেশ ৫ ওভারে ১ উইকেটে তুলে ৩৭ রান।
এরপর কব্জির জোরটা দেখান সৌম্য। চড়াও হন আগের ম্যাচে বাংলাদেশকে গুঁড়িয়ে দেওয়া ইশ সোধির উপর।
রিভার্স সুইপ করে চার মারার পর এই লেড় স্পিনার ওড়ান টানা দুই ছক্কায়। ওভার থেকে আসে ১৯ রান। অ্যাডাম মিল্নের পরের ওভার থেকে আসে ২০। ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর আর এগোতে পারেনি পরিকল্পনা মতো।
গ্লেন ফিলিপসের অফ স্পিন থমকে দেয় বাংলাদেশকে। তার দুই ওভারে আসে কেবল ১৩ রান। সোধির পরের ওভারে কেবল ৫। আবার চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সাউদিকে ছক্কায় উড়িয়ে চাপ কাটাতে চেয়েছিলেন সৌম্য। কিন্তু স্লোয়ার বল বুঝতে পারেননি। ধরা পড়েন লং অনে। ২৭ বলে তিন ছক্কা ও পাঁচ চারে ৫১ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
অনেকটা সময় ক্রিজে থাকলেও প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে পারেননি নাঈম। মেটাতে পারেননি পরিস্থিতির দাবি। ফিলিপসের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার ভোগান্তি। শুরু থেকেই যেখানে বল প্রতি প্রায় ২ রান প্রয়োজন সেখানে, ৩৫ বলে চারটি চারে করেন ৩৮ রান।
চেষ্টা করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। মিল্নের কাটারে স্কুপ খেলার চেষ্টায় হন বোল্ড। সেই ওভারেই লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরেন আফিফ হোসেনও। বাংলাদেশ পারেনি কাছাকাছি যেতেও।
এই সিরিজ জয় দিয়ে চলতি গ্রীষ্মে নিজেদের চারটি টি-টোয়ন্টি সিরিজই জিতল কিউইরা। আগের তিনটি জয় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে ১ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন ফিলিপস।
নিউ জিল্যান্ডে তাদের বিপক্ষে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙার আরেকটি সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনে। আগামী বৃহস্পতিবার অকল্যান্ডে হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ১৭.৫ ওভারে ১৭৩/৫ (গাপটিল ২১, অ্যালেন ১৭, কনওয়ে ১৫, ইয়াং ১৪, ফিলিপস ৫৮*, চাপম্যান ৭, মিচেল ৩৪*; নাসুম ৪-০-২৫-০, সাইফ ৩-০-৩৫-১, তাসকিন ৩.৫-০-৪৯-১, শরিফুল ৩-০-১৬-১, মেহেদি ৪-০-৪৫-২)।
বাংলাদেশ: (লক্ষ্য ১৬ ওভারে ১৭০) ১৬ ওভারে ১৪২/৭ (নাঈম ৩৮, লিটন ৬, সৌম্য ৫১, মাহমুদউল্লাহ ২১, আফিফ ২, মিঠুন ১, মেহেদি ১২*, সাইফ ৩, তাসকিন ০*; সাউদি ৪-০-২১-২, বেনেট ৪-০-৩১-২, মিল্ন ৩-০-৩৪-২, সোধি ৩-০-৩৪-০, ফিলিপস ৩-০-২০-১)।
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২৮ রানে জয়ী নিউ জিল্যান্ড।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ২-০তে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড।
ম্যান অব দা ম্যাচ: গ্লেন ফিলিপস
সময় জার্নাল/এমআই