আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
বাইডেনকে ‘পাত্তা দিচ্ছেন না’ আরব নেতারা মোহাম্মদ বিন সালমান, জো বাইডেন ও শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও পশ্চিমারা একের পর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ বলে মনে করছে রাশিয়া।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাশিয়াকে কোণঠাসা করতে গিয়ে আরেক সংকটে পড়েছে পশ্চিমাদের নেতৃত্ব দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রাশিয়ার বিকল্প তেল-গ্যাসের বাজার তৈরি করতে চেষ্টা চালিয়ে গেলেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে দেশটি।
বুধবার (৯ মার্চ) মার্কিন সংবাদমাধ্যম দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমর্থন পেতে এবং তেলের বাজার তৈরি করতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি তিনি।
যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন বাইডেন। কিন্তু এতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন।
২০১৮ সালে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়ী করে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি যুবরাজের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে মার্কিন প্রশাসনের। ওই ঘটনার পর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ দেখাননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ খবর জানিয়েছে রয়টার্স।
তবে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্ববাজারে। ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উঠেছে জ্বালানি তেলের দাম। সোমবার অপরিশোধিত তেলের দাম এশিয়ার বাজারে ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলার ছুঁয়েছে। পরে প্রতি ব্যারেলে তেলের বাড়তি এ দাম গিয়ে স্থির হয়েছে ১৩০ ডলারে।
জ্বালানি তেলের এই সংকট যে শুরু হবে তা আগেই বুঝতে পেরেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর আগেই গত মাসে রিয়াদে যান মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ দূত আমোস হোচস্টেইন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে তেলের বাজারে সম্ভাব্য প্রভাব ঠেকাতেই সৌদি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি।
রুশ আগ্রাসনের পর তেলের বাজারের অস্থিরতায় বিপাকে পড়ে ভেনেজুয়েলায় ছুটছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। গত শনিবার দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। ইউক্রেন হামলার ঘটনায় রাশিয়াকে একঘরে করতে ভেনেজুয়েলাকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় রাশিয়া। দেশটি বলেছে, পশ্চিমা দেশগুলো যদি রাশিয়ার তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তারা ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেবে।
রাশিয়ার এই হুঁশিয়ারির পরও দেশটি থেকে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বুধবার হোয়াইট হাইস থেকে এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন জো বাইডেন।
সূত্র: রয়টার্স, নিউ ইয়র্ক টাইমস, দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, আরটি।
এমআই