তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি:
‘প্রজন্মের দীপ্ত উচারণ’ স্লোগানকে ধারণ করে তিতুমীরের আকাশে শুদ্ধতা ছড়িয়ে দেয়ার সাত বছর পূর্ণ হলো।৮ম বর্ষে পদার্পণ করলো 'শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ সরকারি তিতুমীর কলেজ'। সংগঠনটি আবৃত্তি, নাচ ও গানসহ নানা সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে তিতুমীর কলেজকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে সর্বত্র।
সদস্যরা নিজস্ব প্রতিভা দিয়ে ইতোমধ্যে তিতুমীর কলেজে জনপ্রিয় হয়েছে সংগঠনটি। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের পরিবেশনা সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে বেশ। শুরুটা হয়েছিল আড্ডায় কবিতা আবৃত্তি দিয়ে। পর যোগ হয়ে নাচ ও গান।
জানা যায়, ২০১৫ সালে মিরাজুল ইসলাম মিরাজ, আব্দুর রহমান তিতুমীর, মো. ইসহাক আলী ও তৈমুর মিলে দুই দফা মিটিং করে সংস্কৃতিপ্রেমি শিক্ষক নাছিমা আক্তার চৌধুরীর সাথে। তিনি একমত পোষণ করেন। সাংগঠনিক কার্যক্রমের সূচনা হয়। ঠিক করা হয় নাম, লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও স্লোগান। অল্প কয়েকজন সদস্য মিলে আড্ডায় কবিতা গানের চর্চা চলে। আরো কিছু সদস্য যুক্ত হয় এই পরিবারে। চলে সংস্কৃতি অনুরাগী শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ। এভাবে কেটে যায় ১ বছর।
২০১৬ সালে আরো নতুন উদ্যমে কাজ চলতে থাকে। এসময় দল বেঁধে আসেন প্রতিভাবান কিছু সদস্য। এবছর শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর ভালবাসা পায়। বেশ কয়েকটি আলোচনা সভা ও নিয়মিত আড্ডা চলতে থাকে। ১৬ তে কলেজ প্রশাসনের মৌখিক অনুমোদন মিলে। বিজয় দিবস ২০১৬ অনুষ্ঠানে প্রথম অংশগ্রহণ করে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের সদস্যরা।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চূড়ান্ত পরিষদ কার্যনির্বাহী পরিষদ। তাই ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ সালে লিখিত আবেদন পত্রে কার্যকরী পরিষদ উল্লেখপূর্বক অনুমোদন নেওয়া হয়। শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের অনলাইন যাত্রা শুরু হয় ২০১৬ এর আগস্ট মাসের ২০ তারিখ। তবে টেকনিক্যাল অভিজ্ঞতা না থাকায় এর কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চলেনি।
১৭ মার্চ ২০১৭ শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের প্রথম বড় প্রযোজনা ‘মহানায়কের আগমন’ মঞ্চায়িত হয়। এটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় ছিলেন শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের উপদেষ্টা প্রফেসর নাছিমা আক্তার চৌধুরী।
এরপর সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও নিজেদের বিভিন্ন প্রযোজনায় মুখরিত করতে থাকে প্রিয় ক্যাম্পাসকে।
সরকারি তিতুমীর কলেজে বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। যা সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে।
শুধু সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নয়, শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ নানান মানবিক কাজ করে থাকে।২০১৯ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়ার জন্য সাংবাদিক সমিতির ডাকে একযোগে সকল সংগঠন নানান উদ্যোগ গ্রহণ করে ও বাস্তবায়ন করে তার পাশে দাঁড়ায়, তখন একটিগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সংগঠনটি।
‘কনসার্ট ফর সাদিয়া’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে ফান্ড সংগ্রহ করে তুলে দেন তার পরিবারের কাছে।
তাছাড়া সম্মিলিত কার্যক্রমে (বক্স করে সাহায্য গ্রহণ) নিয়মিতভাবে অংশ নেয় সংগঠনের সদস্যরা।
বৈশ্বিক মহামারি করোনায় দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ায় শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চএই পথচলায় সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রতিটি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সংগঠনগুলো সাহায্য করেছে এবং করছেন।
সংগঠনের কর্মচঞ্চল সাত বছরের পথচলার বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক প্রান্তিক হোসাইন বলেন, শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের ৮ম জন্মবার্ষিকী নিয়ে আমি দোটানায় ভুগছি। দল নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবো নাকি বিভিন্ন কারণে বাস্তবায়ন করতে না পারা অসম্পূর্ণ স্বপ্নগুলোকে নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করবো বুঝতে পারছি না।
বর্তমানে সমগ্র দেশব্যাপী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করে যাওয়া যেকোনো সংগঠন চেয়ে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ অনেক সক্রিয় এবং মানসম্মত কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কিছু ব্যারিকেড থাকায় আমরা অনেক কিছু চাইলেও হয়তো করা সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে আমরা দলগত ভাবে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। যা আগামীতেও বজায় থাকবে।
আজকের এই দিনে আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাদের শুদ্ধস্বরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নাছিমা আক্তার চৌধুরী ম্যাম কে। যাঁর অকৃত্রিম আন্তরিকতা প্রতিনিয়ত আমাদের কে সামনে এগিয়ে যেতে সাহস যোগায়।
আমার ইচ্ছে আগামীর শুদ্ধস্বর হবে আরো অনেক গোছানো, সক্রিয়। শুদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চায় শুদ্ধস্বর একটি রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে।
সময় জার্নাল/এমআই