ডা. তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী :
জীবন যাপনের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সরাসরি মূত্রথলিকে প্রভাবিত করে। যেমন- ধূমপান, অতিরিক্ত ওজন, কিছু খাদ্যদ্রব্য, পানি পান, শারীরিক কর্মকান্ড ও ব্যায়াম, মল ত্যাগের অভ্যাস, প্রস্রাব করার অভ্যাস ও পদ্ধতি উল্লেখ করার মত। ধূমপানে মূত্র থলির ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। যারা ধূমপান করে তাদের ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ৩ (তিন) গুণ বেশী। এছাড়াও যারা কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করেন যেমন বিভিন্ন ধরণের রংয়ের কারিগর, চাষী যারা কীটনাশক ও কৃত্রিম সার ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশী।
ধূমপায়ীদের মধ্যে যারা সিগারেট দীর্ঘ সময় ধরে পান করেন তাদের ঝুঁকি বেশী। ধূমপান ঠিক কি পদ্ধতিতে মূত্রথলির ক্যান্সার সৃষ্টি করে তা এখনও উদঘাটিত হয়নি তবে নিকোটিনের ক্যান্সার তৈরীর ক্ষমতা আছে বলে প্রমাণ মিলে। ধূমপান বন্ধ করে দিলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে আসে। ক্যান্সারের ঝুঁকি ছাড়াও ধূমপানের ফলে ব্লাডার পেইন সিনড্রোম, ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স, ঘনঘন প্রস্রাব, রাত্রিকালীন প্রস্রাব, বিলম্বে প্রস্রাব শুরু হওয়া, প্রস্রাবের পর কিছু প্রস্রাব থেকে যাওয়া প্রভৃতি দেখা দিতে পারে। খাদ্যাভাসের মধ্যে কেফিন বা কেফিন সমৃদ্ধ কোমল পানীয় ঘনঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের তাগিদ এবং প্রস্রাব ধরে রাখার অক্ষমতা দেখা দিতে পারে। কেফিন প্রস্রাবের পরিমাণ বর্ধক এবং অল্প পরিমাণ প্রস্রাবেই মূত্র ত্যাগের তাগিদ সৃষ্টির মাধ্যমে মূত্রের ধারা ও পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
এলকোহল বা মদ মূত্র থলির স্নায়ুর যে সংকেত মূত্র নিয়ন্ত্রণ করে তা ব্যাঘাত ঘটায় এবং এটি মূত্র বর্ধক হিসেবে কাজ করে ফলে মূত্রত্যাগের তাগিদ বৃদ্ধি, ঘন ঘন মূত্র ত্যাগ ও অতিরিক্ত মূত্র ত্যাগের ফলে পানি শূন্যতা দেখা দিতে পারে।
কোমল পানীয়ের মধ্যে কার্বনেটেড ওয়াটার, চকোলেট মিল্ক, লেবু জাতীয় জুস, অধিকাংশ বোতল বা প্যাকেট জুস, হার্ব ও গ্রীন টি, কফি, সয়ামিল্ক, চা, এনার্জি ড্রিংক ইত্যাদি। দিনে কি পরিমাণ তরল খাবার গ্রহণ করবেন তার উপর মূত্র নিঃসরণ নির্ভর করে। বেশী পানি পান করলে ঘন ঘন প্রস্রাব হবে আর অল্প পানি পান করলে প্রস্রাব গাঢ় হয়ে মুত্রথলির ঝিল্লির প্রদাহ সৃষ্টি সহ প্রস্রাবের জ্বালা পোড়া সৃষ্টি করে।
১ জন ৭০ কেজির মানুষের দৈনিক ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করলে চলে। একজন মানুষ কত ঘন ঘন প্রস্রাব করবে তা নির্ভর করে তার মূত্রথলির সংবেদনশীলতা, পরিবেশ, সুযোগ, পানি পানের অভ্যাস ইত্যাদির উপর। ঘন ঘন প্রস্রাব করা অনেক সময় তীব্র তাগিদ বা মূত্র ঝরা থেকে রেহাই পেতে অনেকে অভ্যাসে পরিণত করে। কিন্তু এই অভ্যাসের ফলে মূত্রথলির ধারণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং এর সহজাত কার্যক্ষমতায় বৈকল্য দেখা দিতে পারে।প্রজননক্ষম মহিলাদের মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে মিলনের পর মূত্রত্যাগের অভ্যাস করা উচিত্।
চাপ দিয়ে অনেকেরই প্রস্রাব করার অভ্যেস থাকে আবার কেউ কেউ কমোডের উপর বসে প্রস্রাব করে থাকেন যা প্রস্রাব করার যথোপযুক্ত পদ্ধতি নয়। সঠিক মূত্রত্যাগের জন্য যথাযথ পজিশন যা পেলভিক ফ্লোর রিলাক্স করবে এবং পর্যাপ্ত সময় নিয়ে মূত্রথলি খালি করা উচিৎ।
মলত্যাগের অভ্যাসের সাথে মূত্রথলির অসুবিধার যোগসূত্র রয়েছে। যাদের কোষ্ঠ কাঠিন্য দেখা দেয় তাদের ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাবের তাগিদের তীব্রতা, রাত্রিকালীন প্রস্রাব ও মূত্রথলি সম্পূর্ণ খালি না হওয়া প্রভৃতি উপসর্গে ভুগেন। এদের কোষ্ঠ কাঠিন্যের চিকিত্সা করলে উপসর্গ থেকে আরোগ্য লাভ করে। পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ মূত্রথলির জন্য অত্যন্ত উপকারি। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে পুরুষ ও মহিলা মূত্রথলির অনেক উপসর্গ থেকে আরোগ্য লাভ করতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মূত্র ঝরা রোগ।
সুতরাং আপনার মূত্রথলির অসুবিধা থেকে রেহাই পাবার জন্য সঠিক ভাবে মূত্রথলি কি ও এর কার্যপ্রণালী বুঝতে হবে। ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিদিন পরিমাণ মত পানি (২৫-৩০মি.লি প্রতি কেজি শরীরের ওজন প্রতিদিন) পান করতে হবে। যে সমস্ত দ্রব্যাদি বা পানীয় মূত্রথলির জন্য ক্ষতিকর তা বর্জন করতে হবে। মূত্র ত্যাগের সঠিক অভ্যাস করতে হবে। পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ আপনাকে উপকার দেবে।বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে মিলন পরবর্তী মূত্রত্যাগের অভ্যাস করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তথ্য সূত্র ইন্টারনেট।
ডাঃ তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, সহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।