আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বায়ুদূষণে টানা চতুর্থবারের মতো ২০২১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশের তকমা পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বিশ্বের ১১৭টি দেশ, অঞ্চল ও ভূখণ্ড এবং ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের বায়ুর মান নিয়ে বিশ্লেষণ করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক দূষণ প্রযুক্তি সংস্থা আইকিউএয়ারের প্রকাশিত তালিকায় শীর্ষে আছে বাংলাদেশ।
বিশ্ব বায়ুমান সমীক্ষা ২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনে আইকিউএয়ার দেশের পাশাপাশি বিশ্বের দূষিত রাজধানীর তালিকাও প্রকাশ করেছে। আইকিউএয়ারের এই তালিকায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানী চিহ্নিত হয়েছে নয়াদিল্লি। শীর্ষ দূষিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের শীর্ষ দূষিত রাজধানীর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে রাজধানী ঢাকা।
পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম-২.৫) বা বস্তুকণার ২.৫ মানের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ ও শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে আইকিউএয়ার। সংস্থাটি বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বের কোনো দেশই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশিত বায়ুমানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
গত বছর ডব্লিউএইচও তার বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন পরিবর্তনের পর জানায়, পিএম২.৫ নামে পরিচিত ছোট এবং বিপজ্জনক বায়ুকণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে এরচেয়েও কম ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
সুইস এই সংস্থার মতে— গত বছর সামগ্রিক বায়ু মান বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বায়ুতে প্রাণঘাতী পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-২.৫ এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে কয়েক গুন বেশি। এর আগে, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশে পিএম-২.৫ এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ছিল যথাক্রমে ৯৭.১, ৮৩.৩ ও ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম।
বাংলাদেশের পরই এই তালিকায় আছে আফ্রিকার দেশ চাদ; এই দেশটি প্রথমবারের মতো আইকিউএয়ারের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান (তৃতীয়), তাজিকিস্তান (চতুর্থ), ভারত (পঞ্চম) এবং ওমান ষষ্ঠ স্থানে আছে।
আইকিউএয়ারের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে বিশ্বের মাত্র ৩ দশমিক ৪ শতাংশ শহর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত বায়ুমানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। তবে বিশ্বের ৯৩টি শহরে পিএম২.৫ এর মাত্রা ডব্লিউএইচওর প্রস্তাবিত স্তরের চেয়েও ১০ গুণ বেশি ছিল।
আইকিউএয়ারের বায়ুমান বিজ্ঞান ব্যবস্থাপক ক্রিস্টি শ্রোডার বলেছেন, বিশ্বে অনেক দেশ আছে যারা বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে। চীন খুব বড় সংখ্যা দিয়ে শুরু করেছিল এবং সময়ের সাথে সাথে তা হ্রাস পাচ্ছে। তবে বিশ্বে এমন জায়গাও আছে, যেখানে বায়ু দূষণ পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
বায়ুদূষণ কমানোর লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে লড়াই করছে চীন। ২০২১ সালে আইকিউএয়ারের তালিকায় তার আগের বছরের ১৪তম স্থান থেকে ২২তম স্থানে নেমে এসেছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে চীনে পিএম২.৫ মাত্রা ৩২ দশমিক ৬ মাইক্রোগ্রামে নেমে এসেছে।
আইকিউএয়ার বলছে, বায়ুদূষণ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি। প্রত্যেক বছর বিশ্বজুড়ে ৭০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে বায়ু দূষণের কারণে।
মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক বিভিন্ন ধরনের রোগ যেমন— প্রাণঘাতী ক্যান্সার এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করে পিএম-২.৫। আইকিউএয়ার বায়ূতে পিএম-২.৫’র যে উপস্থিতি পেয়েছে তা বৈশ্বিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে সতর্ক করে দিয়েছে।
সূত্র: আইকিউএয়ার, রয়টার্স।
এমআই