বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

ডায়াবেটিসের কারণ আবিষ্কার করল বাংলাদেশি গবেষকেরা

মঙ্গলবার, মার্চ ২২, ২০২২
ডায়াবেটিসের কারণ আবিষ্কার করল বাংলাদেশি গবেষকেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ডায়াবেটিস হওয়ার মূল কারণ আবিষ্কারের দাবি করেছেন একদল বাংলাদেশি গবেষক। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহকারী অধ্যাপক মধু এস মালো ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে এক দল গবেষক এ কারণ আবিষ্কার করেন। তাদের এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত জার্নাল ‘দি বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ এন্ড কেয়ারে' প্রকাশিত হয়েছে।

আজ বুধবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর বার্ডেমে চতুর্থতলায় কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

এতে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গত ৫ বছর ধরে ৩০-৬০ বছর বয়সী ৫৭৪ জন সুস্থ লোকের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গত কয়েক দশক ধরে অন্যান্য গবেষকরা প্রতিষ্ঠা করেছেন যে, ডায়াবেটিসের প্রত্যক্ষ কারণ হলো, টক্সিন-নিয়ন্ত্রিত নিম্ন-গ্রেডের সিস্টেমিক প্রদাহ, যার ফলে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ইনসুলিনের উৎপাদন ও কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস হয়। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা মৃত ব্যাকটেরিয়ার কোষ-প্রাচীরের অংশ টক্সিন (এন্ডোটক্সিন) হিসেবে কাজ করে। এই টক্সিন সাধারণত মলের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। তবে, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার, ফুকটোজ বা এলকোহল টক্সিনকে রক্তে ঢুকতে সহায়তা করে। এর ফলে নিম্ন গ্রেডের সিসটেমিক প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং যার ফলে ডায়াবেটিস হতে পারে। মানবদেহের অন্ত্রে থাকা ইন্টেস্টিনাইল আলকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম এই টক্সিনকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে এই এনজাইমের ঘাটতি হলে অন্ত্রে অতিরিক্ত টক্সিন জমা হয় এবং এই টক্সিন রক্তে ঢুকে সিসটেমিক প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিস হতে পারে, তেমনি ইশকেমিক হার্ট ডিজিজও হতে পারে (কেননা ইশকেমিক হার্ট ডিজিজেরও অন্যতম কারণ সিসটেমিক প্রদাহ)। 

গবেষণায় দেখা যায়, যাদের শরীরে এই এনজাইম বেশি থাকে, তাদের তুলনায় যাদের কম থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ১৩.৮ গুণ বেশি। অল্পবয়সী যাদের অন্ত্রে এ এনজাইমটি দ্রুত কমতে থাকে, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৭.৩ গুণ বেশি।

ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের গবেষণায় ওঠে এসেছে, যাদের অন্ত্রে এই এনজাইমটি কম ছিল এবং পরে তা বেড়ে গেছে তাদের ডায়াবেটিস হয়নি। এনজাইমটি যাদের অন্ত্রে কম ছিল তাদের ফাস্টিং সুগার বৃদ্ধির মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ। এনজাইমের মাত্রা বেশি হলে স্থুল ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হয় না।

গবেষকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, যাদের দেহে এই এনজাইমের পরিমাণ কম তাদেরকে এই এনজাইম খাওয়ানো সম্ভব হলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বর্তমানে গবেষকরা এ এনজাইমটি তৈরির চেষ্টা করছেন। 

গবেষণাপত্রটি সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ও আমেরিকান ডায়াবেটিস সমিতির যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত জার্নাল ‘দি বিএমজে ওপেন ডায়াবেটিস রিসার্চ এন্ড কেয়ার'-এ প্রকাশিত হয়েছে।

অধ্যাপক মধু এস মালো এর আগে মানবদেহে থাকা ইন্টেস্টিনাইল আলকালাইন ফসফাটেস নামক এনজাইম পরিমাপের লক্ষ্যে স্টুলভিত্তিক টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। এই টেস্টের মাধ্যমে এই এনজাইমের স্বল্পতার কারণে একজন ব্যক্তির ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা, তা শনাক্ত করা সম্ভব হবে। যাদের ঝুঁকি রযেছে, তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ডায়াবেটিস হতে মুক্ত থাকতে পারবে। ড. মালো ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বর্তমানে তিনি বাডাস-এর উপদেষ্টা এবং বারডেমের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত আছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারাবিশ্বে বর্তমানে ৪৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে বাংলাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮৬ লক্ষেরও বেশি। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ১৯৫৬ সাল থেকে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে।

গবেষণাটি বারডেমের প্রফেসর ফারুক পাঠান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রফেসর সালিমুর রহমান ও প্রফেসর মুহাম্মদ হাসানাত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সালেকুল ইসলামের সহযোগিতায় পরিচালিত হয়েছে। এতে আরও সহযোগিতা করেছেন বাডাস-এর জগন্নাথ মালো, মো. মেহেদী হাসান রকি, মিসেস জিনোক বর্মন, মিসেস শামেমা আক্তার তিন্নি, স্বপন কে. বর্মন, তাপস সরকার, বারডেমের ড. মো. আব্দুল মোত্তালিব ও মো. নাঈমুল ইসলাম খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালসের ড. কনকরাজু কালিয়ান্নান। 

এমআই


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল