নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ২৬শে মার্চ। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। ২৫ মার্চের কালরাতের ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাঙালি এই দিন থেকে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গে উজ্জীবিত সশস্ত্র জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মুক্তির ইতিহাস-স্বাধীনতার ইতিহাস। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংহত করার নতুন শপথে বলীয়ান হওয়ার দিন আজ। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় একের পর এক মাইলফলক অর্জন এবারের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনকে মহিমান্বিত করেছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি স্বাধীন বাংলাদেশের স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছর মুজিববর্ষ উদযাপনের পর এবার মহান স্বাধীনতা উদযাপনে যোগ হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এর আগে স্বাধীনতার ৫০ বছরে আর একটি নতুন পালক যোগ হয় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ। অনেক প্রাপ্তি নিয়ে এবার স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকাসহ সারা দেশে প্রত্যুষে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। এ উপলক্ষে জাতির শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির বীর সন্তানদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিশিষ্ট জনেরা শ্রদ্ধা জানাবেন।
এ দিবসে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান; শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে। এছাড়া মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহিদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হবে। কোস্ট গার্ডের জাহাজসমূহ এদিন দুপুর ২টা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
রাষ্ট্রপতির ভাষণ
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন, সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই দিনে আমি পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। টেকসই উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে সব বাংলাদেশিকে ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে লালন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত, আত্মপ্রত্যয়ী ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নের যে গতিধারা সৃষ্টি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ অচিরেই একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদের রক্ত এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনের আত্মত্যাগের ঋণ কখনো শোধ হবে না। সম্মান জানাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সব বন্ধুরাষ্ট্র, সংগঠন, সংস্থা, ব্যক্তি এবং বিশেষ করে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বোতভাবে সহায়তা করেছিলেন।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে, সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টায় সীমিত পরিসরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগ শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আগামীকাল রবিবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করবেন এবং বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপির বিবৃতি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫২তম দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি ও দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে জেপি নেতৃদ্বয় বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ কারাগারে নিহত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামান এবং ৩০ লাখ শহিদ ও বীর মুক্তিযুদ্ধা যারা দেশ মাতৃকাকে শৃঙ্খল মুক্ত করতে নিজেদের আত্মোৎসর্গ করেছেন তাদের সবাইকে গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসায় স্মরণ করছি। বঙ্গবন্ধুর আজন্ম লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গঠনের শপথ গ্রহণ করতে হবে। অর্থনীতির অগ্রগতির পাশাপাশি আমাদের সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এমন এক বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলোর দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করতে হবে।
জেপির কর্মসূচি
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় পার্টি-জেপি দুই দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির প্রথম দিন আজ সকাল ৬টায় জাতীয় পার্টি-জেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৯টায় সাভারস্থ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। বাদ জোহর মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহিদদের জন্য প্রার্থনা। দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি হলো :আগামীকাল রবিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জহুর হোসেন হলে’ (২য় তলায়) আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান এমপি। আলোচনাসভায় অংশ নেবেন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও লেখক অজয় দাস গুপ্ত প্রমুখ। জাতীয় পার্টি-জেপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম জেপির সব শাখাকে কেন্দ্রের অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস পালনে নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ সড়কে তোরণ নয়
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলী থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কে কোনোভাবেই ত্রিমাত্রিক অথবা বক্স আকারে তোরণ তৈরি করা যাবে না। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
এমআই