বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাজারে মিলছেনা সুফল তদারকিতে আছেন সরকারের ১৪ সংস্থা

শুক্রবার, এপ্রিল ১, ২০২২
বাজারে মিলছেনা সুফল তদারকিতে আছেন সরকারের ১৪ সংস্থা

সময় জার্নাল ডেস্ক:

আসছে রমজান মাসকে  উপলক্ষ্য করে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাজারে বাড়ানো হয়েছে পণ্যের যোগান। আমদানি ও মজুত পরিস্থিতিও চাহিদার চেয়ে বেশি।তারপরও কিছু পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। যার কারনে পণ্যের দাম আসছে না নিয়ন্ত্রণে। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের তরফ থেকে নীতি সহয়তায় ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাজার তদারকিতে মাঠে কাজ করছে সরকারি ১৪টি সংস্থা। তারা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন।অনিয়ম পেলেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কারসাজির দায়ে কয়েকটি কোম্পানির কর্মকর্তাদের তলব করার ঘটনাও ঘটেছে। এতসব উদ্যোগের পরও সুফল মিলছে না বাজারে। ফলে এবারও পণ্যের বাড়তি দামেই শুরু হচ্ছে রমজান।শনিবার চাঁদ দেখা গেলে রোববার থেকে শুরু হবে রোজা। চাঁদ দেখা না গেলে রমজান শুরু হবে পরশু সোমবার থেকে। সে হিসাবে ভোক্তাদের রোজার বাজারের একটি বড় অংশই শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যে সম্পন্ন হবে। ফলে এই দুদিন বাজারে রোজানির্ভর পণ্য কেনার চাপ থাকবে।এদিকে কিছু পণ্যের দাম বাড়ায় লাগাম পড়েছে। এর মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম নতুন করে আর বাড়ছে না। তবে সরকারিভাবে বেঁধে দেওয়া দামেও বিক্রি হচ্ছে না। এক মাস আগে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে প্রতি লিটার ২০৫ টাকায় উঠেছিল। এরপর তা কমে ১৭০ টাকায় নামে।সয়াবিন তেল আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের পর এর দাম কমিয়ে সরকার থেকে বোতলজাত তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ওই দামে নয়, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫-১৭০ টাকা দরে। সরিষার তেলের চাহিদাও বাড়ে রোজায়। এক মাস আগে প্রতি লিটার বোতলজাত সরিষার তেল ছিল ২৯০ টাকা। এখন তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা।রোজায় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার এক মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করে। কিন্তু করোনার পর হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও সর্বশেষ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম এক জায়গায় থাকছে না। এ অবস্থায় রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজার তদারকিতেও সরকারের ১৪ সংস্থা মাঠে কাজ করছে।‘দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল’ এটা মনিটর করছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ২৮টি মনিটরিং টিম বাজার দাম পর্যবেক্ষণ করছে। টিসিবির তরফ থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে তিন হাজার ডিলারের মাধ্যমে নায্যমূল্যে ট্রাকসেল চলমান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয়ে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে উচ্চপর্যায়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে।ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর থেকে সয়াবিন তেল পরিশোধন কাজে নিয়োজিত কয়েকটি কোম্পানিকে তাদের প্রধান কার্যালয়ে তলব করে শুনানি নেওয়া হচ্ছে। এতকিছুর পরও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সরকারের উদ্যোগের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কারসাজির মাধ্যমে পণ্যের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছেন।এদিকে শুক্রবার রাজধানীর নয়াবাজার, রায়সাহেব বাজার ও কেরানীগঞ্জের সর্ব বৃহৎ জিনজিরা কাঁচাবাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদরে সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, এদিন প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮৫ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। ছোট দানা মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা ১ মাস আগে ১২০ টাকা ছিল। অ্যাংকর ডাল বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজি। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৮২ টাকা। এক মাস আগে দাম ছিল ৮০ টাকা। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬৫-১৭০ টাকা।বিছুদিন আগেও ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা। যা এক মাস আগে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকা। আগে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা। যা এক মাস আগের দাম ১৬০ টাকা। প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা। দেশি শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২১০ টাকা। যা এক মাস আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।সম্প্রতি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের (সিপিজে) জরিপে দেখা যায়, মূল্যবৃদ্ধি ও আয় কমায় সংকটে আছে অনেক পরিবার। ফলে স্বল্প আয়ের অনেকে ঋণ করে পরিবারে জন্য খাদ্যের জোগান অব্যাহত রাখছেন। এসব ঋণ নেওয়া হচ্ছে মহাজন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব থেকে। প্রতিবেদনটি প্রকাশ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সিপিজের গবেষণা সহযোগী নাহিদা আক্তার বলেছেন-ঋণ নেওয়ার হার কমেছে। তার মানে এ নয় যে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়ে গেছে। অনেকে আগের ঋণ শোধ করতে পারেননি। তাই নতুন করে ঋণ নেওয়ার সক্ষমতা হারিয়েছেন।সূত্র জানায়, রোজায় পণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ৪০টি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। ওই দামে পণ্য বিক্রি করতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছিল অধিদপ্তর। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করলে শাস্তির আওতায় আনার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। অধিদপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি।এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি বলেছেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল, ডাল, তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদাসহ সব পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। মজুতের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় বেশি। কোনো পণ্যের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কৃত্রিম উপায়ে কোনো পণ্যের সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।ক্যাবের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, করোনাকালীন যখন লকডাউন ছিল, তখন কিন্তু পণ্যের দাম বাড়েনি। পরবর্তী সময়ে প্রতিযোগিতা করে দাম বাড়ানো হয়েছে। রোজা উপলক্ষ্যে আরেক দফা মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভোক্তা সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী বাজার ও দোকানে মূল্য তালিকা থাকার কথা। বাজার তদারকি যারা করছেন তারা প্রতিবারই জরিমানা করছেন। অল্প কিছু টাকা (পাঁচ থেকে ১০ হাজার) জরিমানা করা হচ্ছে। জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করলে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আরও বেড়ে যাবে।

এদিকে প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি মাঝারিমানের খেজুর বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা। যা এক মাস আগে ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মান ও বাজারভেদে প্রতি কেজি বেসন বিক্রি হয়েছে ৭০-১০০ টাকা। যা এক মাস আগে ৬০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি বুটের ডাল ৬০-৭০ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা। এ দিন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২০-২২ টাকা।বুধবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। সরকারের সময়োপযোগী ও ত্বরিত পদক্ষেপের ফলে এরই মধ্যে তেল, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কাউকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। যারা এর মাধ্যমে ফায়দা লোটার কথা ভাবছে ও অপচেষ্টা করছে, তারা চরম হতাশ হবে।

রাজধানীর জিনজিরা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সাক্কুর আলম বলেন, রমজান ঘিরে সব পণ্যের দাম বেশি। পাইকাররা গত দুই মাস থেকে ধীরে ধীরে সব পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। সর্বশেষ গত এক মাসে নতুন করে রমজাননির্ভর পণ্য- ছোলা, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, আদা, রসুনের দাম বাড়িয়েছে। এমনকি ইফতার তৈরি আইটেমগুলোর দামও বাড়িয়েছে। যে কারণে বাড়তি দরে এনে বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিয়মিত বাজার তদারকি হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিনের ঝটিকা অভিযানে একাধিক পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। রমজান ঘিরে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। কোনো অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল