সময় জার্নাল ডেস্ক :
হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে খুচরা ফল বিক্রেতা ব্যাবসায়ীরা। রোজার মাস ঘিরে তারা বাড়তি মুনাফা করার পরিকল্পনা তৈরি করছে। পাইকারি বাজার থেকে কম মূল্যে ফল কিনলেও খুচরা পর্যায়ে প্রায় দ্বিগুণ দরে তা বিক্রি করছে। তদারকি না থাকায় পরিস্থিতি এমন হয়েছে। এতে রোজা উপলক্ষ্যে ফল কিনতে গিয়ে ক্রেতার পকেট কাটা যাচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি ফলের আড়ত বাদামতলীর আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৩২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে প্রতি পিস তরমুজের দাম হয় ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা। পাশাপাশি ৪ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। সেক্ষেত্রে প্রতি পিস তরমুজের পাইকারি মূল্য হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
তবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে পিস হিসাবে তরমুজ বিক্রি করতে দেখা যায়নি। বিক্রেতারা খুচরা পর্যায়ে ১০ থেকে ১২ কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজ ওজন হিসাবে কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছে। এ হিসাবে ১০ কেজির একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা। আর ১২ কেজির দাম পড়ে ৬০০-৭২০ টাকা। সেক্ষেত্রে এই সাইজের তরমুজ খুচরা বিক্রেতারা পাইকারি পর্যায়ের তুলনায় ২৮০-৩৭০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছে। পাশাপাশি ৪-৫ কেজি ওজনের প্রতি পিস তরমুজ খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। এতে ৫ কেজির একটি তরমুজের দাম পড়ছে ২০০-২৫০ টাকা। অথচ আড়ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই তরমুজের পিস কিনছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
বাদামতলী ফল আড়তদার হাসান সিকদার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে খুচরা বিক্রেতারা তরমুজ বিক্রিতে ক্রেতার পকেট কাটছে। তারা আমাদের কাছ থেকে কম দামে পিস হিসাবে তরমুজ কিনে কেজি হিসাবে বিক্রি করে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করছে। যা কোনো ভাবেই ঠিক নয়। নয়াবাজারের খুচরা ফল বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, আমরা পিস হিসাবে কিনে আনি এটা সত্য। কিন্তু রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের চাঁদা দিয়ে খুচরা পর্যায়ে আনতে হয়। যে কারণে আমরা খুচরা বিক্রেতারা মিলে কেজি হিসাবে বিক্রি করে চাঁদায় খরচকৃত টাকা ও পরিবহণ ভাড়ার টাকা হিসাব করে কিছু লাভে বিক্রি করি। এ ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
এদিকে গত বছর ২৭ এপ্রিল তরমুজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজশাহীর আড়তগুলোতে জেলার দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ ও অভিজিত সরকার অভিযান পরিচালনা করেন। তারা তরমুজ আর কেজি দরে বিক্রি করা যাবে না বলে নির্দেশনা দেন। এরপর গত বছরই তরমুজ কেজি দরে বিক্রি রোধে রাজধানীসহ দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তরমুজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালাচ্ছেন। আইন ভঙ্গের দায়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ইতোমধ্যে জরিমানাও করা হয়েছে। শনিবারও রাজধানীতে ভোক্তা অধিদপ্তর নিত্যপণ্যসহ তরমুজের বাজারে অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে ওজনে তরমুজ বিক্রি করা ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, তরমুজ বিক্রিতে কারসাজি হচ্ছে। অনেকেই বেশি মুনাফা করতে তরমুজ কেজি হিসাবে বিক্রি করছে। সেটা রোধে তদারকি করা হচ্ছে। অনিয়ম পাওয়ায় ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তদারকি চলমান থাকবে। অনিয়ম পেলে কাউকেই ছাড়া দেওয়া হবে না।
এদিকে কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তদারকির কথা থাকলেও তারা তা করছে না। বরং এই বিষয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আ. গাফ্ফার খান বলেন, বাজার তার নিজ নিয়মে চলে। সেই নিয়ম অনুযায়ী যদি বিক্রেতারা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করে তাহলে সেভাবেই বিক্রি করবে। তবে কেজি দরে বিক্রি না করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি চলছে, পাশাপাশি বিপণন অধিদপ্তরেরও ভূমিকা থাকা দরকার। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি মহাপরিচালক। প্রশ্ন এড়িয়ে অন্য বিষয়ে কথা বলেছেন।
অন্যদিকে বাদামতলীর পাইকারি আড়তে প্রতি কেজি আপেল বিক্রি হয়েছে ৯০-১৩০ টাকা। প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। প্রতি কেজি কমলা বিক্রি হয়েছে ১১০-১৩০ টাকা। লাল আঙুর প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা ও সবুজ আঙুর ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে খুচরা ফল বিক্রেতা এই আপেল প্রতি কেজি বিক্রি করছে ২০০-২৪০ টাকা। প্রতি কেজি কমলা বিক্রি হয়েছে ১৮০-২২০ টাকা। প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি করেছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। লাল আঙুর প্রতি কেজি বিক্রি করছে ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা। আর সবুজ আঙুর বিক্রি করেছে ২০০-২২০ টাকা।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে ফল কিনতে আসা কচি খন্দকার বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে ফল কিনি। রোজা উপলক্ষ্যে শনিবার ফল নিতে এসে দেখি সব ফলের দাম বাড়তি। কিন্তু দেখেন বাজারে কোনো দোকানে ফলের সংকট নেই। কিন্তু বিক্রেতারা বাড়তি দরে বিক্রি করছে।
বাদামতলী জননী ফলের আড়তের মহাজন জালাল উদ্দিন বলেন, আমরা আমদানিকারকদের কাছ থেকে যে দরে ফল আনি পরে কিছু কমিশনে বিক্রি করে দেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে রোজা উপলক্ষ্যে খুচরা বিক্রেতারা সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। তারা আমাদের কাছ থেকে কম দামে ফল নিলেও খুচরা পর্যায়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছে। এ সিন্ডিকেট না ভাঙলে ক্রেতারা রোজায় ফল কিনতে স্বস্তি পাবে না। তাই তদারকি করা প্রয়োজন।
রামপুরা বাজারের খুচরা ফল বিক্রেতা মো. হাকিম বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমরা যে দরে ফল আনি কিছু লাভে তা বিক্রি করি। আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। পাইকারি পর্যায় থেকে ফল আনতে কিছু ফল নষ্ট হয়। পাশাপাশি রোজায় ফলের চাহিদা বাড়ায় খুচরা বাজারে দাম একটু বাড়তি।