আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইউক্রেনের বুচা শহরের একটি গণকবরেই প্রায় ৩০০ জনকে সমাহিত করা হয়েছে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছোট এই শহরটি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী পুনর্দখল করার পর এই তথ্য সামনে এসেছে।
বুচার মেয়রের বরাত দিয়ে রোববার (৩ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে বুচা শহরটি অবস্থিত এবং কিয়েভে প্রবেশ করতে হলে শহরটি পার করতে হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুচা শহরের মেয়র আনাতোলি ফেডোরুক শনিবার ফোনে বার্তাসংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, ‘বুচায় আমরা ইতোমধ্যেই ২৮০ জনকে গণকবরে দাফন করেছি। ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়া শহরের রাস্তাগুলো মরদেহে ছেয়ে গেছে।’
ফেডোরুক বলেন, ‘নিহত এই সকল মানুষকেই মাথার পেছনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে নারী-পুরুষ এবং এমনকি ১৪ বছর বয়সী একটি কিশোরও রয়েছে।’
এদিকে মেয়র আনাতোলি ফেডোরুক আলজাজিরাকে নিশ্চিত করেছেন যে, বুচার রাস্তায় তিনি কমপক্ষে ২২টি মরদেহ দেখেছেন। তিনি বলছেন, সবগুলো মৃতদেহ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি কারণ রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মৃতদেহগুলোকে বুবি-ফাঁদে ফেলেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বুবি-ফাঁদ মূলত একটি লুকানো বিস্ফোরক যন্ত্র যা কিছু নিরীহ চেহারার বস্তুকে স্পর্শ করলে বিস্ফোরিত হয়ে যায়।
পশ্চিম ইউক্রেনের লভিভ শহর থেকে আলজাজিরার রব ম্যাকব্রাইড জানিয়েছেন, ‘(ফেডোরুক) দাবি করছেন যে, রাশিয়ার সৈন্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে নিহত এসব মানুষকে হত্যা করেছে। মূলত রুশ সেনারা শহরে বেসামরিকদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে।’
কিয়েভের উপকণ্ঠে অবস্থিত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই ছোট শহর বুচা গত কয়েক সপ্তাহে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে ভয়ঙ্কর লড়াই দেখেছে এবং চলতি সপ্তাহে এটি পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত প্রায় এক মাস রাশিয়ার সেনাদের দখলে ছিল।
ম্যাকব্রাইড বলেন, ‘মেয়রের মতে (নিহত ব্যক্তিরা) ইউক্রেনীয় অধ্যুষিত অঞ্চলে পালানোর চেষ্টা করছিলেন, তবে তার (ফেডোরুক) মতে, তাদের কেবল গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, অন্য শহরগুলোতেও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এদিকে পৃথক এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর কিয়েভকে অবরুদ্ধ করা এবং তারপর সেখানে প্রবেশ করে ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে রাশিয়ার সেনারা উৎখাত করতে চাইলেও রাজধানী উপকণ্ঠে অবস্থিত বুচা শহরটি রুশ সেনাদের সেই আশার প্রথম কবরস্থানে পরিণত হয়েছিল।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর দুই বা তিনদিন পরই বুচা হয়ে কিয়েভের দিকে যাওয়ার সময় শহরের রাস্তায় তীব্র হামলার মুখে পড়ে রুশ সামরিক বাহিনী। এসময় বুচার রাস্তায় রুশ ট্যাংক ও সাঁজেয়া যানের বিশাল বহর ধ্বংস করে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া তাদের সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পর গত শুক্রবার বুচা শহরে ঢুকতে সক্ষম হয় তাদের সংবাদদাতাদের একটি দল। মস্কো অবশ্য কোনো প্রমাণ বা কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়াই এখন দাবি করেছে যে, মধ্য ইউক্রেনে তাদের যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে এবং কিয়েভ দখল করা তাদের লক্ষ্য ছিল না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কো ওই দাবি করলেও সত্য হচ্ছে, অপ্রত্যাশিতভাবে সাহসী ও সুসংগঠিত ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ রুশ সেনাদের রাজধানী কিয়েভের বাইরেই থামিয়ে দিয়েছিল এবং এর প্রমাণ হচ্ছে- রুশ ট্যাংক ও সাঁজেয়া যানের বিশাল বহরের মরিচা পাকানো ধ্বংসাবশেষ এখনও সেখানেই অর্থাৎ শহরতলির রাস্তায়ই রয়েছে যেখানে সেগুলো ধ্বংস হয়েছিল।
এমআই