নিজস্ব প্রতিবেদক:
পানির অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পানিসম্পদ অপচয় করলে কোনো সম্পদই থাকে না শেষ পর্যন্ত।
সোমবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর গ্রিন রোডের পানি ভবনে বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে অমূল্য সম্পদটা রয়েছে, এটা কীভাবে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করব এবং ভবিষ্যৎ বংশধররা কীভাবে ব্যবহার করতে পারবে। সেই দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে পরিশুদ্ধ করে পাইপের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করি। এগুলো করতে অনেক অর্থ খরচ হয়। তাই পানির অপচয়টা বন্ধ করতে হবে। সেটা নির্মাণ কাজে হোক, গৃহস্থালি কাজে হোক বা সেই গাড়ি ধোয়ার কাজেই হোক, যে কাজেই হোক, লন্ড্রি ব্যবহারে হোক, সবক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি যাতে ভূগর্ভে যেতে পারে সেই দিকে দৃষ্টি রেখেই পরিকল্পনা নিতে হবে। সব জায়গায় সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দিলাম, আর বৃষ্টির পানি গড়িয়ে চলে গেলো, সেটা নয়। বৃষ্টির পানি আন্ডারগ্রাউন্ডে একেবারে নদীতে পড়বে, সেটা না। আমাদের আশপাশের জলাধারে যেন সংরক্ষণ করা যায় সেই দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ভৌগোলিক ও ভূপ্রকৃতি অবস্থার কথা বিবেচনা করে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই দেশ আমাদের, মাটি আমাদের, মানুষ আমাদের। তাদের কল্যাণ ও মঙ্গল কীসে হয় সেটাই দেখতে হবে। শুধু আজকের জন্য নয়, ভবিষ্যতে এ দেশ যাতে উন্নত ও সমৃদ্ধ থাকে। পানির অপর নাম জীবন। তাই এই পানিসম্পদকে রক্ষা করা একান্তভাবে প্রয়োজন। আর ভূগর্ভস্থ পানি যত কম ব্যবহার করা যায়, ভূ-উপরিস্থ পানি যত বেশি ব্যবহার করা যায়, সে দিকে লক্ষ্য রেখে পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার।
নগরায়ন ও বাসস্থান নির্মাণের জন্য দুটি জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা, আরেকটা হচ্ছে জলাধার থাকা। এটা থাকা একান্ত প্রয়োজন, সেখানেও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রকৃত পক্ষে মিঠা পানির দেশ। তারপরও জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি-৬ বাস্তবায়নের দিকে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং স্যানিটেশন নিশ্চিত করা এসডিজি-৬-এর সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। ইতোমধ্যে স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে আমরা ৯৭ ভাগ সাফল্য অর্জন করেছি। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় সারা দেশেই স্যানিটারি ল্যাট্রিন তৈরি করা হয়েছে। প্রকাশ্য মলমূত্র ত্যাগ কমই দেখা যায়, সেটা নেই। সেই দিক থেকে আমরা যথেষ্ট অগ্রগামী।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানে সুপেয় পানি পাওয়া কষ্টকর। কিন্তু আমাদের বিশাল পানিসম্পদ রয়েছে। আমাদের এই সম্পদ যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি, আমাদের দেশের মানুষের এই কষ্টটা হবে না। আমরা বিশ্বকে পানি সরবরাহ করতে পারব। সেই বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।
এ সময় সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার সীমিত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকায় নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে সরবরাহ করা শুরু করেছি। ঠিক সেইভাবে জেলা ও উপজেলায় যেখানে লাইনের মাধ্যমে সুপেয় পানি দিচ্ছি, সেখানেও নদীর পানি পরিশুদ্ধ করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বন্যা হয়, সেখানে অনেক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার জন্য আমরা ড্রেজিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সেটা শুধু নদীর নাব্যতাই বাড়াবে না, নৌপথগুলো সচল হবে। স্বল্পমূল্যে পণ্য পরিবহন করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমে যাবে। বাংলাদেশের জন্য ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার করা ক্ষতিকর হবে। কারণ, বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ একটি জায়গা। এই পানি আমাদের রক্ষা করে। বাংলাদেশের নিচে শিলা আছে, তার নিচে আরও বিশাল পানির স্তর আছে। এটাই আমাদের রক্ষা করছে। সেখানে আমরা ভূগর্ভস্থ পানি বেশি ব্যবহার করলে ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভবনা বেশি দেখা দেবে।
বর্ষা ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নদীগুলো দীর্ঘদিন ড্রেজিং না হওয়ায় তলদেশ উঁচু হয়ে গেছে। এতে নদীর বিশালতা ও চওড়া বেড়ে গেছে। এত চওড়া নদী আমাদের প্রয়োজন নেই। এখানে বিভিন্ন পকেট তৈরি করে, নদী ড্রেজিং করা পলি সেখানে ফেলে ভূমি উত্তোলন করতে পারি।
ড্রেজিং করা পলির কারণে চাষ উপযোগী জমি যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জলবদ্ধতা দূরীকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেকোন নির্মাণ হবে এবং প্ল্যান্ট ও প্রোগ্রাম হবে। তখন মাথায় রাখতে হবে যে, বন্যার সময় যাতে পানি বহমান থাকে এবং পানি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে দেখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বন্যার সময় পানির ধারণ ক্ষমতা যেন থাকে। নদী ড্রেজিংয়ের সময় নদীর নাব্যতা বাড়াবে। আবার বন্যার সময় বাফার জোন রেখে দিতে হবে, যাতে অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে পারে। যেটা আমরা শীতকালে ব্যবহার করতে পারি।
বন্যার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। একে আপন করতে হবে। বন্যার সময় বসবাসের পদ্ধতি আমাদের শিখতে হবে। কারণ বাংলাদেশ ব-দ্বীপ বন্যার সময় পলি পড়ে আমাদের…। জলবায়ুর অভিঘাতের কারণে আমাদের দেশ ও ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে লাগছে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে দেশকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
রাস্তাঘাট নির্মাণের সময় পানির প্রবাহ ও নৌপথ যাতে ঠিক থাকে সেই দিকে নজর রাখার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, হাওর-বাওড় এলাকায় রাস্তা নির্মাণের সময়, সেগুলো মাটি ভরাট করে যাতে না করা হয়। সেটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে পানির প্রবাহ যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়।
এমআই