আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দিনভর নাটকীয়তার পর জাতীয় পরিষদ পুনর্বহালের নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট। অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে ডেপুটি স্পিকারের দেয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই রায় দেয়।
রায়ে বলা হয় আজ শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় অধিবেশন বসবে এবং ওই অধিবেশনেই ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ডেপুটি স্পিকার গত ৩রা এপ্রিল অনাস্থা ভোটকে খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু তার এই ঘোষণা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো।
করাচিভিত্তিক গণমাধ্যম ডন জানিয়েছে, মূলত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এই রায় হওয়ার কথা থাকলেও তা এক ঘণ্টা দেরি হয়। রায় উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয় দাঙ্গা পুলিশ।
রায় প্রদানের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিকান্দার সুলতান রাজাকে তলব করেছে সুপ্রিম কোর্ট। তিনি আইনি দলকে সঙ্গে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছেন। এছাড়া রায় ঘোষণার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রধান রাজনীতিবিদরা। ছিলেন পিএমএল-এন দলের শেহবাজ শরিফ এবং পিপিপি নেতা বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি।
এর আগে গত ৮ই মার্চ ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকারের প্রতি লিখিত আবেদন জানায় তারা।
২৫শে মার্চ শুক্রবার আবারো অধিবেশন ডাকা হলেও সেদিন অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন ছাড়াই ২৮ তারিখ পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার। ২৮ তারিখের অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন বিরোধীদলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ। সংবিধান অনুযায়ী প্রস্তাব উত্থাপনের পর তিন দিন পার হলেই ভোটাভুটি করা যায়। তবে ভোটাভুটির জন্য সাত দিনের বেশি সময় নেয়া যাবে না। ২৮ তারিখ প্রস্তাব উত্থাপনের পর আবারো ৩১শে মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এরপর সর্বশেষ এ নিয়ে ৩রা এপ্রিল ভোটাভুটির তারিখ নির্ধারিত হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিকে। রাশিয়া সফরে যান ইমরান খান। সে সময় ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে রাশিয়াকে শাস্তি দিতে উন্মুখ হয়ে উঠেছে পশ্চিমা বিশ্ব। নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার চেষ্টা চলছে। এরইমধ্যে ইমরানের মস্কো সফরকে ভালোভাবে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। সে সময়ই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাক রাষ্ট্রদূতকে তলব করেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডনাল্ড লু। তিনি অবিলম্বে ইমরান খানের সফর বাতিলের জন্য চাপ দেন। কিন্তু পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র।
৭ই মার্চ পাক রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদের সঙ্গে আবারো বৈঠক করেন লু। এতে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ইমরান খান যদি অনাস্থা প্রস্তাবে টিকে যান তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব হবে না। একই ঘটনার কথা জানানো হয়েছে রাশিয়ার তরফ থেকেও। পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করছে দাবি করে এর নিন্দা জানায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ইমরান খানকে শাস্তি দিতেই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
গত ৩রা এপ্রিল পার্লামেন্টে অধিবেশন শুরু হয়। হিসাব অনুযায়ী ওইদিনই অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নেয়ার কথা ইমরান খানের। কিন্তু সেদিন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হতে না হতেই শুরু হয় আরেক নাটকীয়তার। স্পিকার কাসিম সুরির সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে খারিজ করে দেন তিনি। এর পরপরই ইমরান খানের পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট। স্পিকারের এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে অনাস্থা প্রস্তাবের স্বপ্ন ভেঙে যায় বিরোধীদের। এরপরই এই রাজনৈতিক সংকট সুপ্রিম কোর্টে গড়ায়। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায় এলো বিরোধীদের পক্ষেই। এখন পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে বিপক্ষে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমরান খানের পরাজয় হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সময় জার্নাল/এলআর