মো. কাওছার আলী, ডিআইইউ:
''বার মাসে তের পার্বণ' খ্যাত বাঙালিদের অনেক প্রিয় উৎসবের একটি পহেলা বৈশাখ। ১৪২৮ এর সকল বাধা, আনন্দ - বেদনা, সুখ - দুঃখ পেরিয়ে আগমন ঘটলো ১৪২৯ এর। নতুন বছরের আগমন মানেই নতুন কিছুর সম্ভাবনা। এই সম্ভাবনাগুলো সব শ্রেণিবিবাদ ভুলে গিয়ে প্রতিটি মানুষের দরজায় গিয়ে হাতছানি দিবে।
নতুন বছরকে কেন্দ্র তরুণ প্রজন্মেরও রয়েছে নানা প্রত্যাশা। আছে নানা চিন্তা-ভাবনা। তাদের সেই প্রত্যাশা আর ভাবনার কথা সরাসরি জেনেছেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মো. কাওছার আলী।
মুক্তা সাউদ (মেহেজাবিন), আইন বিভাগ
অস্থিতিশীলতার মাঝেও আমাদের মাতিয়ে তোলে বর্ষবরণ
নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনে সুখ-সমৃদ্বিতে ভরে উঠুক, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরো সুনাম লাভ করুক প্রত্যাশা আমাদের। নিজের সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করা এবং চর্চা করা যে কোন জাতির জন্যই গৌরবের।এ জাতি তার দেশকে ভালোবাসে, ভালোবাসে তার সংস্কৃতিকে, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারন নববর্ষ বরণ বাঙ্গালী জাতিসত্তাকে উজ্জ্বল করে। সব কিছুর বিনিময়ে হলেও এ জাতি তার স্বাধীনতা রক্ষা করবে,রক্ষা করবে প্রানের চেয়েও প্রিয় এ ভাষা, হাজার বছরের সংস্কৃতি, বাঙালী জাতি গানে-কবিতায়,নানা লোকাচারে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অতীত থেকেই বয়ে চলেছে নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। চৈত সংক্রান্তির নানা লোকাচারে আর নববর্ষ বরনে কৃষিজীবী সমাজের বিচিত্র আয়োজন লোকায়ত উৎসব হিসেবেও তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও বৈশাখের গুরুত্ব যথেষ্ট। মুসলমান-হিন্দু-বৌদ্ব-খ্রিস্টান-আদিবাসী সব ধর্ম-বর্নের মানুষের এমন সর্বজনীন উৎসব খুব কম দেশেই আছে।এটাই আমাদের বাঙ্গালী ঐতিহ্য, এটাই আমাদের বৈশাখের ঐতিহ্য, সব রকম বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, সহস্র প্রতিকূলতা ছাড়িয়ে, রাষ্ট্রীয় অস্থিতিশীলতার মাঝেও আমাদের মাতিয়ে তোলে বর্ষবরণ উদযাপনে।
মোঃ মেহেদী হাবিব অভ্র,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
প্রত্যাশার বাইরেও কিছু চাওয়া থাকে
অপ্রত্যাশিত জীবনের মূল্য থাকে না। জীবনের প্রতি খন্ডে, চাওয়া পাওয়ার সংসারে তারুণ্যের প্রত্যাশার মূল্য অপরিসীম। নতুন বছর জীবনে বয়ে নিয়ে আসুক নতুনত্বের আভাস। ঢেলে সাজিয়ে দেই এই জীবন।আগামীর বাংলাদেশ তৈরি হবে এই তারুণ্যের হাত ধরেই। কোভিড পরবর্তী সময়ে দেশের পিছিয়ে যাওয়া ইকোনমি, যানযটের এই ব্যাস্ত শহর, তরুণ /তরুণীদের মধ্যে পাশ্চাত্যের ছোয়া, আধুনিক জীবনকে করে তুলেছে আরো দূর্বিষহ। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ধর্ষণের মতো জঘন্য কাজ গুলোর নিপাত কাম্য। জীবন যেখানে বাধাহীন সেখানে তৈরি হোক ধর্মীয় অনুশাসন, স্বাধীন এই দেশের স্বাধীন জীবন যাপন হোক সৃষ্টিশীল। রেখে যাও অজস্র স্মৃতি,কলমের নিভে হোক লিখা তোমার'ই নাম। শত বাধা পেরিয়ে তুমিও একদিন জয় করেছিলে বিশ্ব। নতুন বছর হোক সকলের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনুক।
আদিবা মেহনাজ,সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
মানবজীবনে বেঁচে থাকার সত্যকে অর্থবহ করে তোলে
স্বাগত বাংলা নববর্ষ, ১৪২৯। পয়লা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব। আমরা উৎসবের দিনকে বৎসরের সাধারণ দিনগুলোর চেয়ে একটু অসাধারণ করে তুলি। উৎসব এভাবেই মানবজীবনে বেঁচে থাকার সত্যকে অর্থবহ করে তোলে। আমাদের বাংলা নববর্ষ ঠিক যেন জাতি গোষ্ঠির শেকড় সন্ধানী এক অনুপ্রেরণা। বাঙালির পথচলায় নববর্ষ বাতিঘর। বিভ্রান্তির জাঁতাকলে পিষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই বাঙালির। অমোঘ শক্তির দীপ্তি তার মাথার ওপর ছায়া হয়ে আছে। বাংলা নববর্ষের উৎসব আছে বলেই বাঙালির পরাজয় নেই। জাগরণের ঘণ্টাধ্বনি বাজায় এই উৎসব। কবিগুরুর ভাষায় : নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে/শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে...। আবার জাতীয় কবি নজরুল লিখেছেন: তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ তোরা সব জয়ধ্বনি কর/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবৈশাখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর...। নববর্ষ হোক নব জাগরণের।নতুন বর্ষে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ হোক চিরতরে নির্মূল।জয় হোক মানবতার। জয় হোক বাঙ্গালীর।। আমি আদিবা মেহনাজ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সকল শিক্ষক, শিক্ষিকা ও ভাই বোনদের জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
সান্ত পাল,রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ফিরে যেতে হবে নতুন সুরে নতুন গানে
নতুন আলো নতুন ভোর, আসল বছর কাটল প্রহর। অতীতের হলো মরণ , নতুন কে কর বরণ !! "পহেলা বৈশাখ" যেটা এক অন্য রকম অনুভুতির শব্দ। নতুন বছরের নতুন দিনে স্বপ্ন সাজাও রঙের মেলায়, জীবন ভাষাও রঙিন ভেলায়। বাংলা সন গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। তার পর থেকে প্রতি বছর পালিত হয় পহেলা বৈশাখ। পুরনো সুর ভুলে গিয়ে ফিরে যেতে হবে নতুন সুরে নতুন গানে। নতুন সকল আশা প্রত্যাশা ফিরে পেতে হবে , খুঁজে নিতে হবে নতুন করে নতুন বছরে বাঁচার মানে। নতুন বছরের নতুন সব স্বপ্ন নিয়ে সবাইকে নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। পুরনো সব স্মৃতি করে ফেল ইতি, সবাইকে জানাই, শুভ নববর্ষ প্রীতি ।
নুসরাত জাহান, আইন বিভাগ
বৈশাখ বাঙ্গালির ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি
পহেলা বৈশাখ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। পহেলা বৈশাখ মানেই বৈশাখী মেলা, মঙ্গল শোভাযাত্রা, ইলিশ মাছ সাথে পান্তা ভাত। তাছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখের সকালে শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়। এইদিন বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসাবে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি এবং শাড়ি পরার রেওয়াজ প্রচলিত। বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও পৃথিবীর আরো নানান দেশে পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয়ে থাকে। তাই আমার মতে,পহেলা বৈশাখ কেবলমাত্র বঙ্গাব্দের প্রথম দিন নয়, এই পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালির ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে ফূটিয়ে তুলে। সুতরাং, বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় ও বিশ্বের বুকে বাংলার এই সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে এই দিনটির গুরুত্বপূর্ন অবদান রয়েছে। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।
এমআই