নিজস্ব প্রতিবেদক:
শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী সংঘর্ষের ঘটনায় টানা দুই দিন বন্ধ থাকার পর আজ (বৃহস্পতিবার) খুলেছে রাজধানীর নিউ মার্কেট। বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকালে ৪৮ ঘণ্টার অচলাবস্থার পর নিউ মার্কেট ও আশপাশের বিপণীবিতানগুলো খুলতে দেখা যায়। তবে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা ছিল খুবই কম।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নিউ মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার ও এলিফ্যান্ট রোড ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ দোকান ও শোরুম খোলা হয়েছে। তবে ক্রেতাসমাগম এখনো কম। বেশিরভাগ দোকানের বিক্রয়কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। রমজানের শুরু থেকে পহেলা বৈশাখ ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে যে জমজমাট বেচাকেনা শুরু হয়েছিল, সেটি এখন নেই। অন্যান্য সময়ের মতো ফুটপাতে দোকান বসতেও দেখা যায়নি।
কয়েকজন দোকানি জানালেন, অর্ধেক দিন পার হয়েছে, এখনো তেমন কিছুই বিক্রি হয়নি। ক্রেতাসমাগম একেবারে নেই বললেই চলে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে ক্রেতার দেখা মিলবে এবং আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে আগের অবস্থায় ফিরবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।
সংঘর্ষের ঘটনার পর বেচাকেনায় আগের মতো জমজমাট অবস্থা না হওয়ার আশঙ্কা করছেন এই মার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী।
নিউ মার্কেটের ভেতরের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছেন বিক্রেতারা। বন্ধ রাখা হয়েছে ৪ নম্বর গেট। ২ নম্বর ফটকের পকেট গেট খুললেও বন্ধ মূল গেট। যে দুটি দোকান ঘিরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় (ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড) সে দুটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিউ মার্কেটে ক্রেতাসমাগম কিছুটা দেখা গেছে। তবে অন্য সময়ের তুলনায় তা একেবারেই কম। কিছু দোকানে নারী ও তরুণী ক্রেতাদের দেখা গেছে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন জানালেন শুক্রবার থেকে পুরোদমে সবকিছু খুলে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দোকান খুলতে পেরেছি। আর সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি চাই না। রাতেই আমরা উভয়পক্ষ একত্রে বসে একটি সমাধানে এসেছি। যেকোনো সমস্যায় শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে এবং ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন। কেউ নিজে থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না। এ অঞ্চলে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে একটি কোর কমিটি হবে। তাদের মাধ্যমেই সব সমস্যার সমাধান করা হবে।
বুধবার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত সায়েন্স ল্যাবরেটরির বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) মিলনায়তনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ী মালিক সমিতি ও ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সম্মিলিত আলোচনায় দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
মঙ্গলবার সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউ মার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী-কর্মচারী আহত হন।
সংঘর্ষের রেশ চলে বুধবার দিনভর। দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। বিকেলে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখান করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। এরপর রাতে তারা সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি জানান।
সংঘর্ষে মোরসালিন (২৬) ও নাহিদ (১৮) নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।
নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেছেন। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। দুই মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ এক হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এমআই