আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যবহৃত পোশাক দেখতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে হিরকা-ই শেরিফ মসজিদে ভিড় করছে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ। করোনা মহামারিতে মহানবীর পোশাক প্রদর্শনী দুই বছর বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (২২ এপ্রিল) থেকে আবারও শুরু হয়েছে।
তুরস্কের প্রকাশিত সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এক হাজার ৪০০ বছর ধরে এই পোশাকটি সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই পোশাকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিখ্যাত সুফি হযরত উয়াইস কারনিকে (রহ.) উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন।
তুরস্কে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় গত দুই বছর ধরে এই পোশাক প্রদর্শনী বন্ধ ছিল। করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসায় গত শুক্রবার থেকে পোশাকটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ নিদর্শন শুধুমাত্র পবিত্র রমজান মাসে প্রদর্শন করা হয়। ইস্তাম্বুলের গভর্নর আলী ইরলিকায় ও ফাতিহ মেয়র ইর্গুন তুরান এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
জুমার নামাজের কয়েক ঘণ্টা আগে পোশাকটি দেখার সুযোগ দেয়া হয়। বাইরে আলাদা আলাদা সারিতে হাজারো নারী ও পুরুষ মসজিদের ভেতরে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করে দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। পোশাকটি দেখতে পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে। অনেকের চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। মহানবীর ব্যবহৃত এই পোশাকটির প্রদর্শনী চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
হযরত উয়াইস করনি মুহাম্মদ (স:) এর সমসাময়িক হলেও তাঁদের একে-অপরের কখনও দেখা হয়নি। কারণ উয়াইস করনি ধর্ম সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি তাহার অন্ধ মায়ের দেখাশোনা করতেন। মহানবীর সঙ্গে তাঁহার দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও অসুস্থ মাকে রেখে তিনি যেতে পারেননি।
দূরে অবস্থান করলেও ধর্মপ্রাণ এবং মায়ের সেবায় নিয়োজিত হযরত ওয়াইস করনি সম্পর্কে অবগত ছিলেন বিশ্বনবি ।
তাই মহানবী (স:) হজরত ওমর (রা.) ও হজরত আলী (রা.) কে বললেন, আমার গায়ের জুব্বাটা আমার মৃত্যুর পর শ্রেষ্ঠ আশেক ওয়াইস করনিকে পৌঁছে দিও। তাকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, তিনি যেন আমার উম্মতের গুনাহ মাপের জন্য আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে। নবীজীর এই আদেশ পালিত হয় যথাসময়ে। হজরত ওমর (রা.) তাহার শাসনকালে হযরত আলী (রা.) কে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন কুফার পথে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর উয়াইস করনিকে পেলেন। তখন উয়াইস করনি নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষে অতিথিদের সালাম দিলেন। অতিথিরা উয়াইস করনির পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তার হাতে চুমু দিলেন। তাঁরা নবীজী (সা.) এর নির্দেশ মতো উয়াইস করনির হাতে জুব্বা তুলে দিলেন। তাঁকে মহানবীর আহ্বান জানালেন। ওয়াইস করনি তখনি জুব্বাটি নিয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করলেন উম্মতদের গুনাহ মাফ করার জন্য।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে হিরকা-ই-শেরিফ মসজিদে হযরত উয়াইস কারনিকে উপহার দেওয়া মহানবীর সেই জামাটির প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয় প্রতিবছর রমজান মাসে।
ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুযায়ী, উয়াইস করনি সিফফিনের যুদ্ধে আলি ইবনে আবি তালিবের পক্ষে লড়াই করে শহীদ হন। সিরিয়ার রাক্কাহতে তাহার মাজার ছিল। ২০১৩ সালে চরমপন্থি ইসলামি গোষ্ঠী এটি গুঁড়িয়ে দেয়। তাহার সম্মানে তুরস্কের সির্ত প্রদেশের বায়কানে আরও একটি মাজার নির্মাণ করা হয়েছে।
সময় জার্নাল/ইএইচ