সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ কী জাপান হতে চলছে?

বৃহস্পতিবার, মে ১২, ২০২২
বাংলাদেশ কী জাপান হতে চলছে?

ড. নাদিম মাহমদু : 

প্রায় আট বছর আগে যখন জাপানে এলাম, তখন বাজারে গিয়ে আমার চোখ কপালে উঠেছিল। সেই সময়, এক কেজি বাসমতি চালের দাম ৫০০ ইয়েন, চার/পাঁচটি মাঝারি ধরনের আলুর দাম ছিল ২০০ ইয়েনের মত  বর্তমানে ১০০ ইয়েন =৭২ টাকা), চারটি টমেটোর দাম পেলাম সাড়ে তিনশো ইয়েন, দুটা করলার দাম ২৩০ ইয়েন, চারটি কলার দাম ১৫০ ইয়েন, একটি বড় মুলার দাম ১৬০ ইয়েন, তিনটি লেবুর দাম ৩৫০ ইয়েন, একটি ফুলকপির দাম ১৯৮ ইয়েন, এক লিটার দুধের দাম ১৯০ ইয়েন, চার/পাঁচটি কলমি শাকের দাম ১৪০ ইয়েন, ১ কেজি গরুর মাংস ১২০০ ইয়েন,  এক কেজি খাসির মাংসের দাম ৮৫০ ইয়েন থেকে ১০০০ ইয়েনর মধ্যে পাওয়া যেত। ওই সময় দেড় লিটার সয়াবিন তেলের মূল্য ছিল ৩৫০ ইয়েন যা গত কয়েক মাসে সাড়ে ৪ ইয়েনে পাওয়া যাচ্ছে।

দেশে থাকতে যেখানে ৩/৪ শ টাকার সবজি কিনলে সপ্তাহ চলে যেত, সেখানে এইসব দাম শুরুতে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছিল। তবে আয়ের সাথে এখানকার জিনিসের দামের সামঞ্জস্য থাকায় ধীরে ধীরে এইসব সয়ে গিয়েছে। এখানে প্রতি ঘণ্টা শ্রমের সবনিম্ন মূল্য ১০০০ ইয়েন, সেখানে বাংলাদেশে ৩০/৫০ টাকা।

সেই আট বছর আগে যেমন এইসব জিনিসের দাম ছিল, এখনো প্রায় একই দামে আমরা বাজার করছি। উল্লেখযোগ্য চোখে ধরার মত দামের হেরফের তেমন পাইনি। মাঝখানে এই দেশের ’কর’ ৮ ইয়েন থেকে ১০ ইয়েন হয়েছে মাত্র। জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে যারা উচ্চশিক্ষায় আসছে, তাঁরা এক দশক আগে যে পরিমান অর্থের বৃত্তি পেত, এখনো তাই পাচ্ছে। যে ব্যক্তির বেতন দশ বছর আগে বেতন দশ বছর আগে যেমন ছিল, এখনো প্রায় তেমনই রয়েছে। ফলে, এই দেশে বাজার স্থিতিশীল রাখা সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বটে।

আমাদের দেশে গত কয়েক বছর অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক এগিয়ে গিয়েছে। একমাত্র কৃষক ব্যতিত এই দেশের সব শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে, কয়েকগুণ। ফলে নিত্যপণ্যের দাম চড়াও হচ্ছে। এখন কেউ যদি বাংলাদেশের সাথে জাপানের তুলনা করতে চায়, তাহলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে ব্যয়বহুল দেশ বলা যেতে পারে। আমরা বছরের পর বছর ধরে, এক কেজি খাসির মাংস ১০০০ ইয়েনের মধ্যে পাচ্ছিলাম, সেখানে বাংলাদেশে মূল্য ৮৫০ টাকা বা ১২৬০ ইয়েন। এক কেজি গরুর মাংস ১২/১৩ শ ইয়েন দিয়ে দিয়ে কিনছি, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ এক কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা বা ১০০০ ইয়েন দিয়ে ক্রয় করছে। ১ লিটার সয়াবিনের দাম বাংলাদেশ ও জাপানে প্রায় সমান সমান।

জাপানে নিজেদের কৃষি পণ্যে দিয়ে চাহিদা না মেটায়, এই দেশের সিংহভাগ পণ্যে বাহিরের দেশ থেকে আমদানি করা। আমাদের মত এরা গরু-ছাগল চাষ না করলে এখানে মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকছে বছরের পর বছর। 

অথচ আমাদের দেশের দিকে তাকান, দেখবেন এই দেশের পত্রিকায় ছবি ছাপছে, কৃষকরা শশা, টমেটো, বেগুণ, ফুলকপি রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে, কারণ এই দেশের কৃষিপণ্যের দাম বাড়ে না। কৃষকদের উৎপাদন বাড়লেও নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কৃষি কাজ করে মাসের পর মাস ধরে গরুর মাংস খেতে চাইলে কৃষকরা কিনতে পারছে না।

বছরের পর বছর জাপানিরা প্রায় এক বাজেটে মাসের বাজেট রাখলেও আমাদের দেশের মানুষরা তা পারছে না। শ্রমজীবী মানুষদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছে। বাজার করতে গিয়ে হাঁসফাঁস করছে মধ্যবিত্তরা। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না। নিজেদের উৎপাদিত পণ্যে নিজেদের চাহিদা পূরুণের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। 

আর তা পারছে না মূলত, গুটিকয়েক লোভী ও অসৎ ব্যবসায়ীদের কারণে। ইচ্ছেমত তাঁরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে, সরকার নিয়ন্ত্রণ করছে, পুরো দেশটাই নিয়ন্ত্রণ করছে তাঁরা, যা হওয়ার কথা ছিল না। এই কারসাঁজিতে ব্যবসায়ীরা পটু। এরা একাট্টা থেকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, সরকারকে চাপে ফেলে দাম বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে। কারণ, তাঁরা ভাল করে জানে, একবার যে পণ্যের দাম বাড়বে, তা আর কমবার নয়। দুই চারদিন আন্দোলন, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হবে আবার তা ইস্যূতে হারিয়ে যাবে।

মাসের মাঝখানে বেতন শেষ হয়ে যাওয়া মানুষদের কষ্টে সামিল হচ্ছে না কেউ। কারণ, দেশটাকে যারা চালাচ্ছে, তাঁদের তো সমস্যা নেই, সমস্যা কেবল খেটে খাওয়া মানুষদের।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও মানুষের এমন পরিস্থিতি আমাদের দেখতে যখন হচ্ছে, তখন চোর-বাটপারদের হাতে জিম্মি হওয়া দেশটাকে উদ্ধার করবে কে? দেশের আনাচে-কানাচে যে আত্মনাদ তা শুনবে কে?

লেখক : পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস, ওসাকা ইউনিভার্সিটি, জাপান। 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল