আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর আগ্রাসনে পূর্ব ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় এই ভূখণ্ডটি মূলত একটি শিল্প এলাকা এবং বর্তমানে এই অঞ্চলকে ঘিরেই সামরিক আক্রমণ পরিচালনা করে আসছে মস্কো।
বিদ্যমান এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির জন্য লাখ লাখ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার অঙ্গীকার করেছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। শুক্রবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, রাশিয়া ইউক্রেনে প্রায় তিনমাস ধরে সামরিক অভিযান চালালেও রুশ সেনারা প্রাথমিকভাবে প্রায় পুরো ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলা পরিচালনা করে। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মূল মনোযোগ দেয় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস এলাকায়। মূলত তখন থেকে এই অঞ্চলে ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে রুশ সেনারা।
আরও স্পষ্ট করে বললে, রুশ-ভাষী মানুষকে রক্ষা এবং রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রক্ষার কথা বলে দোনেতস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত ডনবাস ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। আর এতেই রুশ সেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণে বিধ্বস্ত হচ্ছে ইউক্রেনের এই শিল্প এলাকা।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দেওয়া ভিডিওবার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘(ডনবাসে) দখলদাররা আরও শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করছে। এই অঞ্চলটি নরকে পরিণত হয়েছে এবং এটি মোটেই বাড়িয়ে বলা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওডেসা অঞ্চল-সহ মধ্য ইউক্রেনের শহরগুলোতে ক্রমাগত রুশ হামলা চলছে। আর ডনবাস সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।’ জেলেনস্কির ভাষায়, ‘এটি যতটা সম্ভব ইউক্রেনীয়কে হত্যা করার, যতটা সম্ভব বাড়িঘর, সামাজিক সুবিধা এবং উদ্যোগগুলোকে ধ্বংস করার জন্য ইচ্ছাকৃত এবং অপরাধমূলক প্রচেষ্টা।’
অবশ্য ইউক্রেনকে ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য মস্কো তার এই আক্রমণকে একটি ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে দাবি করে আসছে। আর এর বিপরীতে কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্রদের দাবি, এটি আসলে ভিত্তিহীন যুদ্ধের অজুহাত।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।
আর সপ্তাহখানেক বাদেই ইউক্রেনে চলমান রুশ অভিযান তিন মাস পার করবে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ইউক্রেনের জন্য প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নতুন সহায়তা অনুমোদন করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মার্কিন সহায়তা প্যাকেজ।
এছাড়া জি-৭ এর অন্তর্ভুক্ত সাতটি ধনী দেশও ইউক্রেনকে ১৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। ইউক্রেন বলছে, মিত্রদের এই অর্থ সহায়তা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের জয়কে তরান্বিত করবে এবং এটি ‘সরবরাহকৃত অস্ত্রের’ মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
এমআই