স্পোর্টস ডেস্ক, সময় জার্নাল : তিন বছর আগে গোলরক্ষকের মারাত্মক দুটি ভুলে ভেঙেছিল শিরোপা স্বপ্ন। এবার ভুল হলো রক্ষণে, কিছুটা দায় আছে গোলরক্ষকেরও। তাতে প্রতিশোধ নেওয়ার বাসনা পূরণ হলো না লিভারপুলের। বড় জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের পথে এগিয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ।
তবে, প্রতিপক্ষের মাঠে একটি গোল পাওয়ায় ফিরতি লেগে ইয়ুর্গেন ক্লপের দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা টিকে আছে ভালোমতোই। আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতে কোয়ার্টার-ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-১ গোলে জিতেছে প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা।
ভিনিসিউস জুনিয়রের গোলে রিয়াল এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মার্কো আসেনসিও। মোহামেদ সালাহর গোলে লিভারপুল ম্যাচে ফেরার আভাস দিলেও কিছুক্ষণ পর আবার ব্যবধান বাড়িয়ে নেন ভিনিসিউস।
২০১৭-১৮ আসরের ফাইনালে গোলরক্ষক লরিস কারিয়ুসের ভুলে দুটি গোল হজম করেছিল লিভারপুল। শেষ পর্যন্ত তারা হেরেছিল ৩-১ গোলে। হ্যাটট্রিক শিরোপা জিতেছিল রিয়াল।
মূল দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার সের্হিও রামোস ও রাফায়েল ভারানেকে ছাড়া খেলতে নামা রিয়ালের রক্ষণভাগকে প্রথমার্ধে কোনো পরীক্ষাই নিতে পারেনি লিভারপুল। উল্টো তাদের ভঙ্গুর রক্ষণে শুরু থেকেই চাপ বাড়ায় স্বাগতিকরা।
প্রথম ১৫ মিনিটে দুটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করে তারা। দ্বিতীয় মিনিটে করিম বেনজেমা গোলরক্ষক বরাবর শট নেওয়ার পর ভিনিসিউসের দূরের পোস্টে নেওয়া হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
গোলের অপেক্ষা অবশ্য দীর্ঘ হয়নি রিয়ালের। ২৭তম মিনিটে দুর্দান্ত প্রতি-আক্রমণে দলকে এগিয়ে নেন ভিনিসিউস। প্রতিপক্ষের রক্ষণ অনেকখানি সামনে উঠে আছে-সেটা দেখে নিজেদের ডি-বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে উঁচু করে বল বাড়ান টনি ক্রুস। দুই ডিফেন্ডারের মাঝে বুক দিয়ে বল নামিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে নিচু শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে রিয়ালের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হলেন ভিনিসিউস, ২০ বছর ২৬৮ দিন বয়সে। তালিকার শীর্ষে আছেন রাউল গনসালেস; ১৯৯৬ সালের মার্চে ইউভেন্তুসের বিপক্ষে ১৮ বছর ২৫৩ দিন বয়সে গোল করেছিলেন তিনি।
রক্ষণের ভুলে ৩৬তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম করে লিভারপুল। এই গোলেও জড়িয়ে ক্রুস। জার্মান মিডফিল্ডারের লম্বা উঁচু করে বাড়ানো বল হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে দিশাহীনভাবে নিজেদের ডি-বক্সে বাড়ান ট্রেন্ট-অ্যালেকজ্যান্ডার আর্নল্ড। সুযোগ বুঝে ছুটে গিয়ে প্রথম টোকায় আগুয়ান গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে সামনে বাড়িয়ে দ্বিতীয় টোকায় বল জালে পাঠান আসেনসিও।
নিজেদের ভুলে বিরতির আগে আবারও বিপদে পড়তে বসেছিল লিভারপুল। তরুণ ডিফেন্ডার ওজান কাবাকের ভুলে বল ধরে ডান দিক থেকে কোনাকুনি শট নেন আসেনসিও। পা দিয়ে কোনোমতে বলের দিক পাল্টে ব্যবধান বাড়তে দেননি গোলরক্ষকের আলিসন।
প্রথমার্ধে লিভারপুলের পারফরম্যান্স ছিল ভীষণ হতাশাজনক। রিয়ালের ৯ শটের মধ্যে যেখানে চারটি ছিল লক্ষ্যে, সেখানে গোলের উদ্দেশে কোনো শটই নিতে পারেনি ক্লপের দল।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে অবশ্য বেশ গোছালো ফুটবল খেলতে থাকে তারা। ধারাবাহিকতায় ৫১তম মিনিটে ব্যবধান কমায় দলটি। দিয়োগো জটার শট মদ্রিচের পায়ে লেগে গতি হারিয়ে যায় সালাহর কাছে। মিশরের এই ফরোয়ার্ডের শটে তেমন গতি ছিল না, বলে হাতও লাগিয়েছিলেন গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া। কিন্তু বল ঠিকই খুঁজে পায় ঠিকানা।
৬৫তম মিনিটে আবারও নিজের সামর্থ্য দেখান ভিনিসিউস এবং স্কোরলাইন হয় ৩-১। ডান দিক থেকে মদ্রিচের পাস পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় প্লেসিং শটে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড। বলে তেমন গতি ছিল না, নাগালের বাইরেও নয়, তাই দায় এড়াতে পারবেন না আলিসন।
শেষ ১৫ মিনিটে রক্ষণাত্মক কৌশল নেয় জিনেদিন জিদানের দল। চাপ বাড়ায় লিভারপুল। তবে নিশ্চিত কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা।
অপেক্ষা এখন ফিরতি পর্বের লড়াইয়ের। অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আগামী ১৪ এপ্রিল অ্যানফিল্ডে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে মাঠে নামবে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নরা। ভীষণ বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দলটির ঘরোয়া ফুটবলে সব শিরোপার আশাই শেষ হয়ে গেছে। একমাত্র সম্ভাবনা বেঁচে আছে এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে।
সময় জার্নাল/আরইউ