নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজধানীর জুরাইনে মোটরসাইকেল আরোহী দম্পতিকে আটকানোর পর বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধী যেই হোক তার বিচার হবে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ওই মামলায় দুই আইনজীবীসহ পাঁচজনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
আপিল বিভাগ বলেছেন, ‘পুলিশ যদি অপরাধ করে, তার বিচার হবে। আইনজীবী অপরাধ করলে তারও বিচার হবে। যে অপরাধ করেছে, তার বিচার হবে।’ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আজ মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশে আপিল বিভাগ বলেন, ‘আপনারা বিচারিক আদালতে দুই আইনজীবীর জামিন আবেদন করুন। তারা জামিন না দিলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করুন। হাইকোর্টে জামিন না দিলে তারপর আমরা দেখব।’
পরে আদালত আগামী রোববারের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল করতে নির্দেশ দেন এবং শুনানি মুলতবি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার অনিক আর হক।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী ও শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।
গত ৮ জুন রাজধানীর জুরাইনে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় দুই আইনজীবীসহ পাঁচজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত এ রিমান্ড আদেশ দেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন শিক্ষানবিশ আইনজীবী সোহাবুল ইসলাম রনি ও তার শ্যালক আইনজীবী ইয়াসিন আরাফাত, স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ শরীফ, মোঃ নাহিদ এবং মোঃ রাসেল।
অন্যদিকে, মামলার একমাত্র নারী আসামি আইনজীবী ইয়াসিন জাহান ভুইয়া নিশানের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে রিমান্ড আপাতত স্থগিত রয়েছে বলেও জানা গেছে।
জানা যায়, গত ৭ জুন রাজধানীর জুরাইন রেলগেট দিয়ে উল্টোপথে আসা একটি মোটরসাইকেলকে গতিরোধ করলে সার্জেন্ট আলী হোসেনের সাথে বিতর্কে জড়ান মোটরসাইকেল আরোহী সোহাগ উল ইসলাম রনি ও তার স্ত্রী ইয়াসিন জাহান নিশান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে লোকজন জড়ো হওয়ায় ওই এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) বিপ্লব ভৌমিক কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে এসে তাদের সবাইকে মীমাংসার জন্য সড়কে থাকা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। এসময় মোবাইলে ইয়াসিন জাহান নিশান বিষয়টি তার ভাই ইয়াসির আরাফাতকে জানান। তিনি লোকজন নিয়ে এসে পুলিশ বক্সে প্রবেশ করেন। এরপর পুলিশ বক্স ভেঙে তারা বের হয়ে আসেন।
পুলিশ বক্সের গ্লাস দিয়ে সার্জেন্ট আলী হোসেনকে আঘাত করলে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গা কেটে যায়। উত্তেজিত হামলাকারীরা ইউনিফর্মে থাকা সবার ওপরই হামলা করে। এসময় শ্যামপুর থানার এসআই উৎপল চন্দ্র ও এসআই সাকিব সেখানে গেলে তাদের ওপরও হামলা হয়।
ওই ঘটনায় গত ৭ জুন সার্জেন্ট আলী হোসেন শ্যামপুর থানায় পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশের কাজে বাধা, হত্যাচেষ্টা ও সরকারি স্থাপনা ভাঙচুরের অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় এজাহারভুক্ত তিনজনের নাম উল্লেখসহ ৩৫০/৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। দুই আইনজীবীর রিমান্ড বিষয়ে নথি তলবের আদেশ স্থগিত করেন চেম্বার জজ আদালত।
সময় জার্নাল/এলআর