নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এ্যানেল:
সোনার হরিণের খোঁজে সোনার বাংলার ছেলেরা যাচ্ছে প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ২০২১ সালের অর্থবছরের রেমিটেন্স প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রণোদনা আড়াই শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
মূলত প্রবাসীদের আয়ের একটি অংশ দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। এ কারণে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্স যোদ্ধা বলা হচ্ছে। কিন্তু সবাই কি রেমিটেন্স যুদ্ধা হতে পারছেন? ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে রেকর্ড সংখ্যক প্রবাসী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে যা ছিলো ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন। ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৮ হাজারে। ২০২০- ২০২১ সালে দীর্ঘ দুই বছরের করোনা মহামারীর কারণে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
২০২২ সাল থেকে পৃথিবীর অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ায় জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে আবার অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে! রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বর্তমান পৃথিবীর অষ্টম অবস্থান আছে বাংলাদেশ। করোণা মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয় ছিলো উল্লেখযোগ্য।
ভাগ্য বদলানোর জন্য বাড়ি-ভিটা বিক্রি করে অনেকে প্রতিদিন পা রাখছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে... এক সময় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির মূল গন্তব্য ছিলো সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, ওমান ও বাহারাইন...পরবর্তীতে মালয়েশিয়া- সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ছাড়িয়ে বর্তমান পৃথিবীর ১৭২ টির অধিক দেশে বাংলাদেশী নাগরিকরা কাজ করছেন বলে জানা গেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অপার সম্ভাবনার শ্রম বাজার সম্প্রসারণে দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে পারলে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় । বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি সমস্যা ও সম্ভাবনার চিহ্নিত করা যায়নি এখন পর্যন্ত। জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে দালালের দৌরাত্ম্যের পাশাপাশি সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মাত্রা অতিরিক্ত নিয়ম কারণ এর ফলে হয়রানির শিকার হচ্ছে অনেকেই।
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শ্রম বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে কিন্তু পরিতাপের বিষয় যেসব নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের যে সব জনগোষ্ঠীর বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই অদক্ষ, অশিক্ষিত! আবার অনেকেই শারীরিকভাবে অযোগ্য। তাদের নেই ভাষাগত জ্ঞান, কারিগরি শিক্ষা, এবং অভিবাসী দেশের আইন কানুন ও কর্মক্ষেত্রে যথাযথ জ্ঞান না থাকায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে অনেক প্রবাসী বেকারত্বের অভিশাপে জর্জরিত হচ্ছে ।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ জনশক্তি রপ্তানি দেশ আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনেক প্রবাসী বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ পাচ্ছে। বেকার হয়ে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা শ্রম বাজারে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার জন্য কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে করণীয় ঠিক করে এগুতে হবে বাংলাদেশকে।
দেশের জমিজমা বিক্রি করে বিদেশে গিয়ে বেকার হয়ে পড়া নিঃসন্দেহে দুর্বিষহ জীবনের অংশ। ভাগ্য বদলানোর জন্য বিদেশ যাওয়ার আগেই নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এখনই। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পদযাত্রায় হাঁটছে পৃথিবী। বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে পড়বে? আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে বাংলাদেশই হোক তৃতীয় বিশ্বের অন্যতম জনশক্তি রপ্তানি দেশ।
যান্ত্রিক বিশ্বায়নের এই যুগে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পার্থ সারথী হতে যারা বিদেশ যাওয়ার চিন্তা করছেন তাদেরকে অবশ্যই কর্মদক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।এক্ষেত্রে সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে অনেক বেশি। কেননা প্রবাসী বাংলাদেশিদের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়াবে লাল সবুজের প্রিয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে পরিণত করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।জনশক্তি রপ্তানি ও কর্মসংস্থান অফিসগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে, হয়রানির পরিবর্তে প্রবাসীদের কল্যাণে যেন এসব প্রতিষ্ঠানের কাজে আসে।
একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত অভিবাসীদের কল্যাণে দূতাবাসগুলোকে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে। দূতাবাসগুলোকে আমলা কেন্দ্রিক না করে কীভাবে জনবান্ধব করা যায় তা চিন্তা করতে হবে এখনই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন প্রবাসীদের কল্যাণের পরিবর্তে হয়রানীর কারণ হয়ে না দাঁড়ায় এটাই প্রত্যাশা আজকের বাংলাদেশের।
-নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এ্যানেল,
সমাজচিন্তক ও কলামিস্ট
সময় জার্নাল/এলআর