স্পোর্টস ডেস্ক:
আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। বুধবার থেকে অ্যান্টিগায় শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াতে প্রস্তুত টাইগাররা।
কিন্তু তাদের ব্যাট ও বলের পারফরম্যান্স দেশের অগনিত ভক্ত, সমর্থক ও অনুরাগীরা দেখতে পাবেন, সে সম্ভাবনা কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ মুহূর্তে অতি নাটকীয় কিছু না ঘটলে বাংলাদেশ থেকে খেলা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে প্রচার স্বত্ব কিনে নেওয়া টোটাল স্পোর্টস মার্কেটিং ‘টিএসএম’-এর সঙ্গে বাংলাদেশে যে প্রাইভেট চ্যানেলগুলো সাধারণত আন্তর্জাতিক ম্যাচ সরাসরি টিভিতে সম্প্রচার করে, তাদের সিন্ডিকেটের একটি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেই মূলত জটিলতার সৃষ্টি।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত, তারা টোটাল স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের কাছ থেকে ফিড নেবে না। তাই বাংলাদেশের দর্শকদের ঘরে বসে টাইগারদের ক্যারিবীয় মিশন টিভিতে দেখতেও পারবেন না।
এমন ঘটনা শেষ কবে ঘটেছে? দেশের বাইরে বাংলাদেশ দল টেস্ট খেলছে, কিন্তু দেশের মানুষ টিভিতে তা দেখতে পারছেন না!একদম দিন তারিখ ও সিরিজ নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।
তবে খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই দশক পর এমনটা ঘটছে। সর্বশেষ ২০০৩ সালের জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি বাংলাদেশে সরাসরি সম্প্রচার হয়নি। তাই ভক্ত-সমর্থকরা টিভিতে তা দেখতে পারেননি।
ডারউইন আর কেয়ার্নসে হওয়া দুই টেস্টের সিরিজটিই ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ও এখন পর্যন্ত শেষ টেস্ট সিরিজ।
সেখানে স্টিভ ওয়াহ, ম্যাথু হেইডেন, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, রিকি পন্টিং, ড্যারেন লেহম্যান, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ব্রেট লি, জেসন গিলেস্পি, গ্লেন মাকগ্রা আর স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলের মতো মহাতারকাদের নিয়ে গড়া অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা দলের বিপক্ষে লড়াইটাও করতে পারেনি খালেদ মাহমুদ সুজনের দল।
জাভেদ ওমর, আল শাহরিয়ার রোকন, হান্নান সরকার, মোহাম্মদ আশরাফুল, হাবিবুল বাশার, অলক কাপালি, খালেদ মাসুদ, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মঞ্জুরুল ইসলাম ও তাপস বৈশ্যকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশের চরম ভরাডুবি হয়েছিল। দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল টাইগাররা।
ডারউইনের মারারা ক্রিকেট মাঠে প্রথম টেস্টে টাইগাররা হেরেছিল ইনিংস ও ১৩২ রানে। আর কেয়ার্নসের ক্যাজেলি স্টেডিয়ামে অসি বাহিনী জিতেছিল ইনিংস ও ৯৮ রানে। অসি ক্রিকেট বোর্ডের উন্নাসিকতায় এমন দুই ভেন্যুতে খেলা হয়েছিল, যেখানে আগে কখনও টেস্ট ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়নি।
ডারউইনের মারারা ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশের পক্ষে হাবিবুল বাশারের দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি (৯১ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৫৪) আর পেসার মাশরাফি বিন মর্তুজার ৭৪ রানে ৩ উইকেট শিকারই ছিল প্রথম টেস্টে উল্লেখযোগ্য পারফরম্যান্স। প্রথম টেস্টে টাইগারদের ইনিংস শেষ হয়েছিল যথাক্রমে ৯৭ ও ১৭৮ রানে।
আর কেয়ার্নসে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি ছিল তিন অসি ব্যাটার মার্টিন লাভ (১৫৪ বলে ১০০), অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ (২৯১ বলে ১৫৬) আর ড্যারেন লেহম্যানের ( ২০৭ বলে ১৭৭) শতকে সাজানো।
বাংলাদেশের বোলাররা ওই ম্যাচে কেউই হালে পানি পাননি। ফ্রন্টলাইন বোলারদের কেউ ৪-৫ উইকেট বহুদূরে, ২ উইকেটের পতনও ঘটাতে পারেননি। ২ উইকেট জমা পড়ে অনিয়মিত অফস্পিনার সানোয়ার হোসেনের পকেটে। ব্যাটারদের মধ্যে উভয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি (৭৬ ও ৫৫) করেছিলেন হান্নান সরকার ।
এছাড়া হাবিবুল বাশার (৪৬), সানোয়ার হোসেন (৪৬) ও খালেদ মাসুদ (৪৪) প্রথম ইনিংসে চল্লিশের ঘরে পা রাখলে বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে ঠেকেছিল ২৯৫‘এ।
এখনকার মত তখন বাংলাদেশের প্রচারমাধ্যম তত সচল ছিল না। টিভি চ্যানেল ছিল নামমাত্র। আর উৎসাহী স্পন্সরও ছিল না তেমন। তাই সে সিরিজটি দেখা যায়নি বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই সোনালি সময়েও টিভিতে খেলা দেখার ব্যবস্থা থাকবে না, মেনে নেওয়া কঠিনই ভক্ত-সমর্থকদের জন্য।
এমআই