বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

বাড়ছে পানি, বাড়ছে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ

রোববার, জুন ১৯, ২০২২
বাড়ছে পানি, বাড়ছে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতির দুর্ভোগ আরো দীর্ঘ হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। টানা ভারী বর্ষণের সাথে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি সিলেট, সুনামগঞ্জকে ডুবিয়ে এখন নেত্রকোনা জেলাজুড়ে জেঁকে বসেছে। এর মধ্যে দেশের প্রধান সব নদনদীর পানিও বাড়ছে। অনেক জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বড় নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনের তাণ্ডবও শুরু হয়েছে।

এ দিকে সারা দেশের বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রায় অর্ধকোটি বানভাসী মানুষ রয়েছে মহাদুর্ভোগে। ঘরবাড়ি থেকেও নিজের বসতভিটায় বসবাসের উপায় নেই। আশ্রয় নেই, খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই। লাখ লাখ নারী পুরুষ ও শিশুর দুর্দশা দেখারও বোধহয় কেউ নেই। আশ্রয়কেন্দ্রেও খাদ্যসহ নানা সঙ্কট। আক্রান্ত এলাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের বাইরে। এ এক দুর্বিষহ পরিস্থিতি। কত দিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা অনিশ্চিত। এরই মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ফসলসহ সব অবকাঠামো।

সিলেট অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সারা দেশে বন্যা উপদ্রুত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরো সময় লাগবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনিস্টিটিউটের পরিচালক এ কে এম সাইফুল ইসলাম গতকাল সংবাদমাধ্যমকে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, সোমবারের পর থেকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে পারে। তবে বর্তমানে তা বিপদসীমা অতিক্রম করে রেকর্ড লেভেলে রয়েছে। এ জন্য পানি সম্পূর্ণ নামতে এক সপ্তাহ লাগতে পারে। তিনি বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

সুনামগঞ্জে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টির পানি নামবে। আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট ডিভিশনে অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সূত্র মতে, পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের স্থানগুলোয় মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা,গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সব প্রধান নদনদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে।

নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় পানিবন্দীদের উদ্ধার ও সহায়তার জন্য রোববার সকাল থেকে খালিয়াজুরিতে সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা এখন সম্মিলিতভাবে পানিবন্দীদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে। এর পাশাপাশি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছেন।

এ দিকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন নেত্রকোনার ১০ উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা ও সুসং দুর্গাপুর উপজেলাসহ অন্যান্য উপজেলায় অন্তত পাঁচ লাখ লোক পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত ১৮৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কমপক্ষে ২১ হাজার বন্যার্ত আশ্রয় নিয়েছেন। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি নদী মোমেশ^রী, গনেশ্বরী, উব্দাখালী মঙ্গলশ্রী, মহাদেও, কংশ, ধনু ও মগড়া নদীর পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, বন্যায় ভাসছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। এ দুই জেলার অর্ধেক এলাকা এখনো অন্ধকারে। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। আটকেপড়া মানুষজন পড়েছেন মহাবিপদে। পানিবন্দী থেকে জীবনযাপন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। 

নগরীর ৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার কথা জানালেও সেখানে কী পরিমাণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন; তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সিসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পরিবহন) মো: রুহুল আলম। কেবল সিলেট নগরেই নয়, জেলার অধিকাংশ আশ্রয়কেন্দ্রেরও একই অবস্থা। বানভাসি মানুষের অভিযোগ, গত বুধবার থেকে সিলেটে এক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যেও পর্যাপ্ত ত্রাণ তৎপরতা চালাতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিকেও তারা পাশে পাচ্ছে না।

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল