নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা। তিনি বলেন, বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যেও রয়েছে অসামঞ্জস্যতা। জনশুমারি ও গৃহগণনা শেষ হলেও বাদ পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য যাতে সঠিকভাবে গণনায় আসে সেজন্য কিছুদিন ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু রাখা উচিত। এছাড়া এমন নির্দেশনা প্রদান করতে হবে যেন বাদ পড়া ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহের ওপর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের পর্যবেক্ষণ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তিনি একথা বলেন। অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, ডিজ-অ্যাবিলিটি রাইটস ফান্ড, এনসিডিডাব্লিউ, সীতাকুণ্ড ফেডারেশন, টার্নিংপয়েন্ট ও ডাব্লিউডিডিএফ যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
আলবার্ট মোল্লা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নির্ভরযোগ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই। বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যেও রয়েছে অসামঞ্জস্য । যেমন: জনশুমারি ২০১১ সালে ১.৪১ শতাংশ, খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১০ সালে ৯.০৭ শতাংশ, খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ সালে ৬.৯৪ শতাংশ, ন্যাশনাল সার্ভে অন পারসনস উইথ ডিজ-অ্যাবিলিটিজ (এনএসপিডি) ২.৮শতাংশ, প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ ২৫,৭৯,৩৯৯ জন (২১ জুন ২০২২ পর্যন্ত)।
তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত পর্যবেক্ষণের তথ্য অনুযায়ী সদ্য সমাপ্ত জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যাবে না এই শঙ্কা রয়ে গেলো। কারণ তথ্য সংগ্রহকারীরা সঠিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করেনি। আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ ছিল এই গণনায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিকভাবে গণনায় আনা। তাহলে নির্ভরযোগ্য তথ্যের যে অভাব ছিল তা দূরীভূত হতো এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রকল্প তৈরি ও বাজেট বরাদ্দ করা যেতো।
সারাদেশে ১৪৫ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণসমূহ তুলে ধরতেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে আলবার্ট বলেন, বাদ পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা যাতে এই শুমারিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তারজন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।
ডাব্লিউডিডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এ মাঠ পর্যায়ের তথ্যের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণসমূহ তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর অধিকাংশ তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রশ্ন করেনি, বাসায় কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন করেনি। এমনকি দৃশ্যমান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকেও তারা প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক কোন প্রশ্ন করেনি। কোন কোন তথ্য সংগ্রহকারী মৌলিক কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশ্নাবলী শেষ না করেই চলে গেছে। দেখা গেছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি উল্লেখ করার পরও তথ্য সংগ্রহকারীরা সঠিকভাবে তথ্য সংগ্রহ করেনি।
তথ্য সংগ্রহকারীরা সব বাড়িতে যায়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের কোনো কোনো এপার্টমেন্টের দারোয়ানকে গিয়ে কতটি ফ্ল্যাট ও একেকটি ফ্ল্যাটে কতজন করে মানুষ থাকে জিজ্ঞাসা করে চলে গেছে, কেউ কেউ প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি যোগ করতে চাইলেও বলেছে অপশন নেই। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তথ্য যুক্ত করতে চাইলে তথ্য সংগ্রহকারীরা বলেছেন সে নিজেই যুক্ত করে দিয়েছে। পরে জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, প্রতিবন্ধিতার ভুল ধরন যুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীর কাছে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রশ্নটি কেন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে বলছে, কেউ যদি কষ্ট পায় এজন্য প্রশ্নটি করা হয়নি। কোনো কোনো তথ্য সংগ্রহকারী বলেছে, এই প্রশ্ন করলে তো আপনি রেগে যাবেন। কেউ কেউ প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রশ্ন না করে জিজ্ঞেস করেছে ”আপনার কোন সমস্যা আছে কিনা”? কোনো কোনো তথ্য সংগ্রহকারী বলেছে এটা ঐচ্ছিক বিষয় না দিলেও চলবে, কোথাও কোথাও পরিবারের সদস্য সংখ্যা তা জিজ্ঞেস করেই চলে গেছে।
সভায় বক্তারা এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানান, জনশুমারি ও গৃহগণনা শেষ হলেও বাদ পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য যাতে সঠিকভাবে গণনায় আসে সেজন্য কিছুদিন ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু রাখা এবং নির্দেশনা প্রদান করা যাতে বাদ পড়া ব্যক্তিরা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।
সংবাদ সম্মেলনটি অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লার সভাপতিত্বে শুরু হয়। সংস্থার চেয়ারপারসন মহুয়া পাল স্বাগত বক্তব্য দেন। এছাড়া সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাসহ, সুশীল সমাজ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
এমআই