ইলিয়াস হোসেন :
২০১৫ এর শেষের দিকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা মূলধনে ১২ টা টার্কি কেনেন তাজুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা আক্তার। কলেজে শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে কুমিল্লার লালমাইয়ের নিজ বাড়িতে ফার্মিং শুরু করেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রমে সাফল্য ধরা দেয় প্রথম থেকেই।
লাভ দেখে উৎসাহিত হন তাজুল ইসলাম। ২০১৭ সালে তিনিও চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর কুমিল্লার চান্দিনায় দুই বন্ধুর আর্থিক সহযোগিতায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা মূলধনে এক একর জমিতে স্থাপন করেন সমন্বিত ফার্ম । নাম দেন- রূপসী বাংলা এগ্রো।
সততা ও কঠোর পরিশ্রমে পরিসর বেড়েছে তাদের। বর্তমানে রূপসী বাংলা এগ্রো’র মোট মূলধনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে অর্ধ কোটি টাকায়।
তাজুল ইসলাম জানান, এখন তাদের দুটি ফার্মই চলমান। ফার্ম দুটিতে নিরাপদ পদ্ধতিতে কোয়েল পাখি পালন, কলা বাগান, শাক সবজি ও ধান চাষ করছেন তিনি। নতুন করে গরু পালন শুরু করেছেন। জানালেন, তাদের ফার্ম থেকে কোয়েল পাখি এবং অন্যান্য পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য বেকার, প্রবাস ফেরত এবং দুস্থ মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়াও ফার্মের কাজে নিয়মিত সহায়তার জন্য ৫ জন লোককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রূপসী অ্যাগ্রো’র সত্ত্বাধিকারী জানান, তাদের মূল পণ্য হচ্ছে- কোয়েল পাখি হ্যাচিং করা, পাখির ডিম এবং মাংস বিক্রি। ফার্মে উৎপাদিত সকল পন্য তারা সরাসরি ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন। ড্রেসিং করা নিরাপদ কোয়েল পাখি বিয়ে সাদীসহ বড়-বড় অনুষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ হয়।
কোয়েল পাখীর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে মোট ৭০ হাজার ক্যাপাসিটির নিজস্ব ৮ টি ইনকিউবেটর স্থাপন করেছেন তাজুল। কোয়েল পাখির ডিম ফুটিয়ে সারা দেশেই বিভিন্ন বয়সের বাচ্চা সরবরাহ করেন।
তাজুল ইসলাম আরও জানান, তাদের ফার্মিংয়ের শুরু থেকেই স্বপ্ন ছিল "ফার্ম টু ভোক্তা" একটা রিলেশনশিপ তৈরি করা। এ জন্য শুরু থেকেই কোন মধ্যস্থতাকারী ছাড়া ভোক্তাদেরকে নিরাপদ কৃষি পণ্য সরবরাহ করে আসছেন। বিষমুক্ত ও নিরাপদ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ড্রেসিং করা নিরাপদ কোয়েল পাখির মাংস, পাখির ডিম, পাকা কলা ও সবজি সারাদেশে ডেলিভারি হয় রূপসী অ্যাগ্রো’র ফেইসবুক পেজ "নিরাপদ খাদ্য যুদ্ধ" থেকে।
এ পর্যন্ত ৬ টি টিভি চ্যানেল তাদের ফার্ম নিয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচার করেছে। ২০১৭ তার স্ত্রী নাজমা আক্তার কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ সফল আত্নকর্মীর পুরস্কারে ভূষিত হন। সরকারী সহায়তা পেলে একটা মাংস প্রসেসিং সেন্টার এবং নিরাপদ গরুর খামার করার স্বপ্ন এই দম্পতির।
জানালেন, দীর্ঘ ৬ বছরের প্রচেষ্টা, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, জেলা ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সাথে যুক্ত থাকা ইত্যাদি প্রচারণার ফলে রূপসী অ্যাগ্রা’র পণ্য বিপননে সমস্যায় পড়তে হয় না।
মাংস প্রসেস ও দুগ্ধ জাত পণ্য তৈরির আধুনিক যন্ত্র স্থাপন এবং ফার্মে উৎপাদিধিকারীত প্রতিটি নিরাপদ কৃষি পণ্য ভোক্ততার হাতে পৌছাতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি নিয়ে ভাবেন নাজমা-তাজুল দম্পতি।
চান্দিনা ফার্ম এলাকার অনুন্নত রাস্তাঘাট, প্রাণী খাদ্য ও মেডিসিনের দাম বৃদ্ধি, খামার পর্যায়ে বিদ্যুতের অধিক মূল্য ইত্যাদি বিষয়গুলোর সমাধানের জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ এই সফল কৃষক দম্পতির।
প্রসঙ্গত : ২০০৫-২০০৬ সেশনে ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে সমাজকল্যাণে অনার্স-মাস্টার্স করেন নাজমা আক্তার। আর তাজুল ইসলাম ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ২০০৪ এ এইচ এস সি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ২০১০ এ।
তাজুল ইসলাম চাকরি করেছেন কলেজ, পোশাক কারখানা এবং মাল্টিন্যাশলাল কোম্পানিতে। তার স্ত্রী ফার্মটাকে মোটামুটি একটা পর্যায়ে নিয়ে গেলে তিনিও চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন নিজস্ব ফার্মে।
এই দম্পতি কুমিল্লা জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে হাস মুরগী পালন, গবাদিপশু, মৎস্য, কৃষি ও প্রাথমিক চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণ নেন।
সময় জার্নাল/ইএইচ