রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রবাসে কর্মী যাওয়া বাড়লেও, প্রবাসী আয় কমেছে

বুধবার, জুন ২৯, ২০২২
প্রবাসে কর্মী যাওয়া বাড়লেও, প্রবাসী আয় কমেছে

সময় জার্নাল ডেস্ক: প্রতি মাসে গড়ে লাখের বেশি কর্মী যাচ্ছেন প্রবাসে। এরপরও আয় বাড়ছে না। কারণ, ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডিতে লাভ বেশি।


কর্মী যাওয়া বেড়েছে, প্রবাসী আয় কমেছে 

চার বছর ধরেই টানা বাড়ছিল রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। গত বছর আসে রেকর্ড আয়। অন্য দিকে গত নভেম্বর থেকে প্রতি মাসে গড়ে লাখের বেশি কর্মী গেছেন বিভিন্ন দেশে। দেশের ইতিহাসে এটি সর্বোচ্চ। তাই এ বছরও প্রবাসী আয় বৃদ্ধির প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু রেকর্ড কর্মী প্রবাসে গেলেও দেশের প্রবাসী আয় কমেছে। 


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থান খাতে জোয়ার বইতে শুরু করেছে। পুরোনো কর্মীদের সঙ্গে নতুন আরও কয়েক লাখ কর্মী যুক্ত হয়েছেন বিদেশে। এতে প্রবাসী আয় স্বাভাবিকভাবেই বাড়ার কথা। বাস্তবে আগের বছরের চেয়ে আয় কমে গেছে। কারণ, বৈধ পথে আয় পাঠাতে খরচ আছে। আর অনানুষ্ঠানিক বা হুন্ডিতে (অবৈধ লেনদেন) আয় পাঠালে প্রতি ডলারে ৫-৬ টাকা বেশি দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে অনেকে হুন্ডির পথে ঝুঁকছেন। 




২০২০–২১ অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমতে পারে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার। সরকারি প্রণোদনা বাড়িয়েও প্রবাসী আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। এতে দেশে তৈরি হয়েছে ডলার–সংকট। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সায় উঠেছে। এর ফলে বেড়ে গেছে আমদানি পণ্যের দাম।


রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকেরা বলছেন, যাঁরা গত বছর টাকা পাঠিয়েছেন, তাঁরা বিদেশেই আছেন। এর সঙ্গে কয়েক লাখ কর্মী নতুন করে যোগ দিয়েছেন। করোনার পর চাকরির বাজারও স্বাভাবিক হয়েছে, বকেয়া বেতনের ঘটনা নেই। এতে তো দেশে টাকা পাঠানোর পরিমাণ বাড়ার কথা। কিন্তু বাড়ছে না। ডলারের টালমাটাল পরিস্থিতি সব বদলে দিচ্ছে। ব্যাংকের চেয়ে ডলারের খোলাবাজার অনেক বেশি আকর্ষণীয় এখন। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে একটি ভিসা নিতে অন্তত ৫০০ মার্কিন ডলার লেনদেন হয়। বৈধ পথে বিদেশে টাকা পাঠানোর সুযোগ না থাকায় এ টাকা যায় হুন্ডির মাধ্যমে। যত বেশি কর্মী যাবেন, তত বেশি টাকা পরিশোধ করতে হবে। কর্মী যাওয়া বেড়ে যাওয়ায় দেশে ডলার আসা কমে গেছে।



একই ধারণা পাওয়া গেছে ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে। তাঁরা বলছেন, মহামারি শুরুর পর উড়োজাহাজ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাণিজ্যের লেনদেন কমতে থাকে। অনানুষ্ঠানিক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা বাধ্য হয়ে ব্যাংকে টাকা পাঠানো শুরু করেন। যার ফলে রেকর্ড প্রবাসী আয় এসেছে। এখন যোগাযোগব্যবস্থা চালু হয়েছে, কর্মী যাওয়া বাড়ছে। ডলার আর আগের মতো সীমান্ত অতিক্রম করছে না। তাই দেশের রিজার্ভও বাড়ছে না। ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো প্রবাসী আয়ে সরকার আগে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিত। গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রণোদনার হার বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়। যদিও এটি ৪ শতাংশ করার প্রস্তাব ছিল প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের।


এ বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রবাসী আয় আসলে কমেনি, আনুষ্ঠানিক পথে আসা কমেছে। শুধু প্রণোদনা দিয়ে এটি হবে না। ব্যাংক এ খাতে কোনো সহায়তা করে না। প্রবাসীদের জন্য বিশেষ কোনো স্কিমও নেই ব্যাংকের। সরকারের তেমন কোনো বিনিয়োগ নেই দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে। প্রতি কর্মীর জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০০ ডলার বিদেশে পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল সরকারের কাছে, এটিরও অনুমতি দেওয়া হয়নি।


ব্যাংকের মাধ্যমে লাভ কম


বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে টাকা পাঠানোর খরচ নিয়ে গত ডিসেম্বরে বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ১০০ টাকা পাঠাতে গড়ে তিন টাকার বেশি খরচ হয় একজন প্রবাসী কর্মীর। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী থাকেন সৌদি আরবে। দেশটি থেকে বাংলাদেশে ১০০ টাকা পাঠাতে খরচ হয় ৩ টাকা ৪১ পয়সা। প্রবাসী আয় আসা শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে আরব আমিরাত থেকে সর্বোচ্চ ৫ টাকা ২২ পয়সা ও বাহরাইন থেকে ১ টাকা ৩০ পয়সা খরচ হয় প্রতি ১০০ টাকা পাঠাতে।


অবশ্য প্রবাসী আয়ের সঙ্গে সরকারের প্রণোদনা যোগ করে যা পাওয়া যায়, খোলাবাজারে ডলারের বিনিময়ে তার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়া যায়।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো কর্মীর বেশির ভাগের আয় মাসে ২০০ থেকে ৩০০ ডলার। একজন কর্মী ১ ডলারের বিনিময়ে বাজারে ৫ টাকা বেশি পেলে তিনি কোনোভাবেই তা ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাবেন না। তাই খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যবধান ২-৩ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।


প্রবাসী আয় বাড়ার সঙ্গে সরকারি প্রণোদনার কোনো সম্পর্ক দেখছেন না বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রণোদনার চেয়েও বেশি টাকা পাওয়া যায় খোলাবাজারে। করোনার প্রভাবে টাকা লেনদেনের অনানুষ্ঠানিক সব খাত প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রবাসী আয় অনেক বেড়েছিল। ভিসা–বাণিজ্য, আন্ডার–ইনভয়েসের (প্রকৃত মূল্য কম দেখানো) মতো অবৈধ পথ আবার চালু হয়ে গেছে। এতে এখন বেড়েছে হুন্ডি।


কর্মসংস্থান আরও বাড়তে পারে


দেশ এক বছরে সর্বোচ্চ বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই একবারই ১০ লাখের বেশি কর্মী গিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে কর্মী গেছেন প্রায় ৬ লাখ। এ ধারায় চলতে থাকলে এটি বছর শেষে ১২ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। এর অধিকাংশই যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর ঘোষণা এসেছে ইতিমধ্যে। এটি চালু হলে অন্তত পাঁচ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠানো যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন সময় জার্নাল কে বলেন, প্রবাসী আয় কমার কারণগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এর পাশাপাশি বৈধ পথে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়ানোর দিকেই জোর তৎপরতা চলছে। নতুন কর্মীরা যাওয়ার পর টাকা পাঠাতে একটু সময় লাগে। শিগগিরই প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়তে শুরু করবে বলে তিনি আশা করেন।



চার বছর পর বড় পতন


বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত ২৩ জুন পর্যন্ত এ অর্থবছরে এসেছে ২ হাজার ৪৭ কোটি ডলার। আজ ৩০ জুন শেষ হচ্ছে এই অর্থবছর। শেষ সপ্তাহের আয় যুক্ত হলেও ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার ছাড়ানোর সম্ভাবনা কম। গত অর্থবছরে প্রতি মাসেই ১৫০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে দেশে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছিল জুলাই মাসে—২২০ কোটি ডলার। আর এ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এসেছে ১৭৩ কোটি ডলার। বৃহত্তম শ্রমবাজার সৌদি আরব থেকে আয় কমেছে এবার। অথচ নতুন কর্মীদের ৬৫ শতাংশের বেশি গেছে এ দেশটিতে। মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত ও কাতার থেকেও কমেছে প্রবাসী আয়।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ২৭৬ কোটি ডলার। টানা বেড়ে ২০১৯-২০ বছরে প্রবাসী আয় আসে ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগের বছরের তুলনায় গত অর্থবছরে ৬০০ কোটি ডলার বেশি এসেছিল। বিদেশে অবৈধ উপায়ে সব ধরনের লেনদেন বন্ধ করা গেলে গত বছরের চেয়েও বেশি প্রবাসী আয় আনা সম্ভব ছিল।


মূলত তিনটি কারণে প্রবাসী আয় কমছে বলে মনে করছেন অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান বাড়া-কমার প্রভাব পড়তে দুই বছর সময় লাগে। আবার করোনার পর নতুন কর্মী গিয়ে নিয়মিত কাজ বা বেতন পাচ্ছেন না। আর বিদেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে ১০০ টাকা পাঠালে সরকার বাড়তি দিচ্ছে আড়াই টাকা; কিন্তু হুন্ডি করে পাঠালে পাওয়া যাচ্ছে ৫ টাকার বেশি। এ ক্ষেত্রে সরকার প্রণোদনা বাড়াতে পারে।

এসএম


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল