বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ঈদে বাড়বে করোনা ঝুঁকি

বুধবার, জুন ২৯, ২০২২
স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ঈদে বাড়বে করোনা ঝুঁকি

সময় জার্নাল: দেশে বেশ কয়েক মাস পর সংক্রামক রোগ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু-হু করে বাড়ছে। এর সঙ্গে আসন্ন কুরবানির ঈদে রাজধানীসহ সারা দেশের পশুর হাটগুলোতে করোনার স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা আরও ভয় বাড়াচ্ছে।




জনস্বাস্থ্যবিদরা যুগান্তরকে বলছেন, ভাইরাসটি প্রতিরোধে চলতি মাসে সরকারের তিনটি দপ্তর ২১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। যেখানে পশুর হাট থেকে শুরু করে সব জায়গায় সংক্রমণ মোকাবিলার কথা বলা হয়েছে।


কিন্তু ফাইলবন্দি কাগুজে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। উলটো আসন্ন ঈদে নির্ঘাত বাড়বে ঘরমুখো মানুষের ঢল। এজন্য পশুর হাট ছাড়াও প্রতিটি জনসমাগমস্থলে সামাজিক সংক্রমণের যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের ৭০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ফলে চলমান ঢেউয়ে কেউ করোনা আক্রান্ত হলেও গুরুতর অসুস্থ হচ্ছে না।


মৃত্যুঝুঁকিও কম থাকছে। কিন্তু যারা বয়স্ক, যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, লাং ডিজিজ আছে, তারা করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পরও মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকেন।


তিনি বলেন, বিএসএমএমইউর পোস্ট কোভিড ক্লিনিকে করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতা নিয়ে অসংখ্য রোগী ফলোআপ চিকিৎসা নিতে আসছেন।


এছাড়া তরুণদের মধ্যে যারা পূর্ণ ডোজ বা বুস্টার নিয়েছেন, তারাও যে আক্রান্ত হবেন না, এমন ধারণা করা ভুল। তাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফলে করোনা যাতে না হয় সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা জরুরি।


জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এটি রোধে সবাইকে মাস্ক পরা, গণজমায়েত পরিহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।


কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে। এছাড়া উপসর্গ দেখা দিলেই নিজে আইসোলেশনে থাকা, দ্রুত নুমনা পরীক্ষা করতে বলছি।


পশুর হাট বসানোর বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। করপোরেশন সীমিত পরিসরে হাট বসানোর কথা বলছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ব্যবস্থা নিলে সংক্রমণ মোকাবিলা চ্যালেঞ্জ হবে। মনে রাখতে হবে, সবাইকে সুস্থ রাখতে হলে নিজ দায়িত্বে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’


বিশেষজ্ঞরা যুগান্তরকে বলছেন, এবারের করোনার চতুর্থ ঢেউয়ে মৃত্যু কম হলেও আক্রান্ত বাড়ছে। রোগী শনাক্ত ও সংক্রমনণ হার প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বুধবার টানা তৃতীয় দিন দুই হাজারের (২২৪১) বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন দেশে।


আগের দিন মঙ্গলবার ২ হাজার ৮৭ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন। সোমবার এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১০১ জন। সবশেষ ১৮ ফেব্রুয়ারি বুধবারের চেয়ে বেশি, ২ হাজার ৫৮৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিলেন এক দিনে। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৬০২ জন।


এদিকে এবার ঈদে রাজধানীতে ২২টিসহ সারা দেশে ৪ হাজার ৭২০টা পশুর হাট বসবে। গত বছরে ঢাকার ৯টি কুরবানির পশুর হাটে করোনা সুরক্ষা কর্নারে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ও করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা ছিল।


এবার এখন পর্যন্ত তেমন উদ্যোগ দেখা যায়ানি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সাধারণ দোকান, শপিংমল, বাজার ও ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে বাধ্যতমামূলক মাস্ক পরার কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তা সে অর্থে বাস্তবায়ন হচ্ছে না।


স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে অতীতে সরকার কঠোর হলেও এবার কোনো তদারকি হচ্ছে না। সরেজমিন একাধিক স্পটে গিয়ে নিয়ম না মানার এমন দৃশ্য নজরে আসে। 


ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বাড়লেও সিভিয়ারিটি বা মারাত্মক হচ্ছে না। তবে নতুন ধরন ওমিক্রন খুব বেশি সংক্রমণশীল। তাই আসন্ন ঈদে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, পশুর হাট ও গণপরিবহণে চেপে গ্রামে যাওয়ার সময় করোনার ব্যাপক বিস্তার ঘটে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বিশেষ করে রাজধানীর পশুর হাটে সারা দেশের ব্যবসায়ীরা জড়ো হন। তারা শহর থেকে ভাইরাস নিয়ে গ্রামে যাবেন। আবার শহরের মানুষও হাট থেকে করোনা বাড়িতে নিয়ে যাবেন। সামগ্রিকভাবে বিষয়টি উদ্বেগজনক।’


তিনি মনে করেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। ফলে হাট, শপিংমল, গণপরিবহণ ও কুরবানির স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাস্ক পরা, হাত ধোঁয়ার স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। সবাইকে টিকার আওতায় আসতে হবে।’


শ্যামলীতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আকতার যুগান্তরকে বলেন, ‘গত বছর এই সময়ে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ছিল। যার জন্য লকডাউন দিতে হয়েছিল। এ বছর সেরকম পরিস্থিতি এখনো হয়নি। সংক্রমণ বাড়লে সরকার থেকে অবশ্যই নির্দেশনা আসবে। ইতোমধ্যে সরকারের তিন দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’


তার মানে, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো অবশ্যই নির্দেশনা মানছে। এখন বেসরকারিভাবে স্বাস্থ্যবিধিসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ মানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে সবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা নেওয়া, বয়স্ক ও কোমরবিডি সম্পন্নদের বুস্টার ডোজ নিতে হবে।’


ডা. আয়শা বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঈদে সংক্রমণ বাড়ার বেশি সম্ভাবনা আছে। এরফলে নির্দেশনা মানার বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর থেকে শুরু করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।’


জনস্বাস্থ্যবিদরা যুগান্তরকে আরও বলছেন, গত কুরবানি ঈদের সময় (জুলাই) দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়ায় ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন জারি করা হয়।


পরে এর মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়। তবে ২১ জুলাই ঈদ উদ্যাপন ও একে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহকারীদের সুবিধার্থে ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিল করা হয়। তাতে করোনায় দৈনিক মৃত্যুতে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ দশে জায়গা করে নেয়।


কিন্তু এবার করোনা সংক্রমণ রোধে তেমন জোরালো মনিটরিং ব্যবস্থাপনা নেই। এরই মধ্যে ঈদে বাড়ি ফেরা ও পশুর হাটে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। 


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক যুগান্তরকে বলেন, সংক্রমণ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী। এখন প্রথম ও একমাত্র কাজ হবে এটি রোধ করা বা বাড়তে না দেওয়া।


এজন্য এলাকাভিত্তিক সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রত্যেক এলাকায় স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করতে হবে। মাস্ক পরা ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।


এক্ষেত্রে সরকারের কাজ হবে প্রতিটি লোকের মাস্ক নিশ্চিত করা। কেউ বাইরে এলে মাস্ক ব্যবহার করছে কিনা স্বেচ্ছাসেবকরা মনিটরিং করবে। এ কাজে সংসদ-সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য ও এলাকার ব্যক্তিদের জড়িত থাকতে হবে। 


এছাড়া ঘরের বাইরে, দোকানে, মসজিদের দরজার পাশে সাবান ও পানি বা স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কারও লক্ষণ দেখা দিলে আইসোলেশনে থাকা। পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নেওয়া। যারা অসুস্থ বা বয়স ষাটোর্ধ তাদের দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজ নিশ্চিত করতে হবে।

এসএম 



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল