ডাঃ রাইয়িক রিদওয়ান :
গত ১২ দিনে হঠাৎ করে কোভিডেএ বিস্তার ভয়াবহভাবে বেড়ে উঠে দেশে। অনেকেই দেখেছেন হয়ত যে ICDDR,B'র একটা সিকোয়েন্সিং এর কাজে দেখা গিয়েছে যে ঢাকায় বিশেষ করে দক্ষিন আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট এর বিস্তার দেখা দিয়েছে।
১. দক্ষিন আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টটা বেশ ভয়াবহ। যদিও এ পর্যন্ত প্রমান করা যায়নি যে মৃত্যুর হার এতে বাড়ে (ডাটা আরো আসলে বুঝা যাবে), কিন্তু দ্রুত সংক্রমন হওয়ার কারনে এটা হাসপাতাল ওভারলোড করে দেয় অনেক তাড়াতাড়ি, যা ইতিমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি ঢাকায়।
২. এটা নিয়ে একটা ভয় হলো যে আমাদের দেশে দেয়া আস্ট্রা-জেনেকার ভ্যাক্সিনের দাওয়া ইমিউনিটি থেকে এস্কেইপ করতে পারে। এর মধ্যে বেশ কিছু কেইস হয়েছে যেখানে ভ্যাক্সিন নেয়ার ৫-৬ সপ্তাহ পরেও আক্রান্ত হয়েছে এমন কি আইসিইউতেও ভর্তি হওয়া লেগেছে কিছু মানুষের, যদিও এখনো মৃত্যুর হার নন-ভ্যাক্সিনেটেড মানুষের মধ্যেই বেশি। অনেকের আগে কোভিড হলেও আবার হয়েছে, দ্বীতিয় বার আরো খারাপ হয়েছে।
৩. ICDDR,B'র জিনোম সিকোয়েন্সিং এ দেখা গিয়েছে যে ৩ সপ্তাহ আগেও তারা তেমন দক্ষিন আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট (B.135) দেখছিল না। গত তিন সপ্তাহে ক্রোমাগত বাড়তে থাকে এবং গত সপ্তাহের সিকোয়েন্স করা ৮১% স্যাম্পালে পেয়েছে ভাইরাসটা। এটা ভয়াবহ হলেও একটা ব্যাপার হলো যে মাত্র ০.০৩-০.০৬% টেস্ট কে সিকোয়েন্স করা হচ্ছে, যেটা থেকে একটা কনক্লুশান ড্র করা বেশ কঠিন। এমন হতে পারে এর চেয়ে কম বা এমন কি এর চেয়ে বেশিও আছে এই ভ্যারিয়েন্ট
৪. ভারতে কয়দিন আগে আলাদা একটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল যেটার মিউটেশান আছে স্পাইক প্রোটিনে দুটা। এ নিয়ে বেশ আশংকা আছে যে এটাও হয়ত ইমিউন এস্কেইপ করতে পারবে। একটা ফিলিপিনো স্ট্রেইন ও দেখা গিয়েছে। এমন হতে পারে যে বাংলাদেশে নতুন একটা স্ট্রেইন কাজ করছে যা হয়ত সনাক্ত করা যায়নি, যদিও এ পর্যন্ত করা সিকোয়েন্সিং এ এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
৫. এত কথার পর আশাটা কোথায়? দ্রুত বেগে সংক্রমিত হওয়া একটা ভাইরাস নিয়ে আশা এটাই যে এটা তারাতারি সবার মধ্যে হয়ে পার হয়ে যেতে পারে। এটা মোটামোটি কনফার্মড যে দেশে আসল সংক্রমন ও মৃত্যুর সংখ্যা অফিসিয়াল নাম্বারের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। প্রপার ডেথ রেজিস্ট্রি না থাকায় আমরা জানিও না যে এই সময় মৃত্যু কত বেশি হচ্ছে। যখন দ্রুত বেগে একটা ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে থাকে তখন এটা দ্রুত বেগে নেমে আসবে এটাও হতে পারে। দক্ষিন আফ্রিকায় ২-৩ মাসের মধ্যেই হাসপাতালের উপর চাপ কমে আসে এবং পরিস্থিতি অনেক কন্ট্রলে চলে আসে। যদিও, দেশের মত জায়গায়, যেখানে মন মত ভাইরাস ঘুড়ছে, এন্টি-ভাইরাল ও প্লাজমার ব্যবহার একদম যেমনে ইচ্ছা তা, সেখানে নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবার আসার ও চান্স আছে।
সার্মর্ম এটাই যে নতুন স্ট্রেইনের কারনে আগামি ২ মাস হয়ত খুব সিরিয়াস চাপ থাকতে পারে সাস্থ্য ব্যবস্থার উপর। কিন্তু আরো সিকোয়েন্সিং ডাটা দরকার জানার জন্যে যে আসলেই দক্ষিন আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্টের জন্যেই কি এটা হচ্ছে কিনা, যদিও ক্লিনিক্যালি এটা মনে হচ্ছে দক্ষিন আফ্রিকা ভ্যারিয়েন্ট। আরো অনেক কিছুই বলার আছে, অনেক কিছুই জানার আছে, কিন্তু এখন প্রচন্ড একটা চাপে আমাদের সাস্থ্য ব্যবস্থা। এই অবস্থার জন্যে প্রস্তুত হওয়ার কথা অনেক বলা হলেও, অপ্রস্তুত রয়ে গেলাম।
লেখক :
ডাঃ রাইয়িক রিদওয়ান
ইমার্জেন্সি মেডিসিন, ইউকে